যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ

৬৮ হাজার অনলাইন গ্রাম: বাংলাদেশের গ্রাম

বর্তমান সময়ে, যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত বিষয়। সারা বিশ্বের মতো, বাংলাদেশেও এই ধরনের প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা এবং এর ফলাফল নিয়ে আগ্রহ অনেক বেশি। তরুণ প্রজন্মের সম্ভাবনাময় ও সক্রিয় অংশগ্রহণ হচ্ছে একটি দেশের উন্নয়নের মাপকাঠি। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা নিজেদের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন আনার সক্ষমতা অর্জন করবে।  তাই আমরা বলতে পারি,  যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ হচ্ছে আমাদের সমাজের একটি মৌলিক চালিকা শক্তি।  

চলুন জেনে নে্ই, বর্তমান সময়ে যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন এত জরুরি এবং এর বিভিন্ন দিক।

প্রথমত, যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বোঝা যায় তখনই, যখন আমরা বুঝতে পারি যে এই প্রজন্ম আমাদের ভবিষ্যৎ। তাদের হাতেই রয়েছে আগামী দিনের দিশা। অতএব, তাদের দক্ষ এবং সচেতন করে গড়ে তোলা একান্ত জরুরি। এই প্রশিক্ষণ তাদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দরজা খোলে, সেই সাথে নিজেদের ভালোভাবে প্রকাশ করার সুযোগ করে দেয়। 

দ্বিতীয়ত, এই ধরনের প্রশিক্ষণ তাদের নিজেদের স্বপ্ন ও লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করে। তারা শিখতে পারে কিভাবে সমাজের একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হয়, কিভাবে নিজেদের মতামত জানাতে হয় এবং কিভাবে নিজেদের সম্প্রদায় ও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে হয়। 

তৃতীয়ত, যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ তাদের কর্মসংস্থানের দিক দিয়েও সাহায্য করে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা নতুন দক্ষতা অর্জন করে, যা তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য অপরিহার্য। এটি তাদের মনে আত্মবিশ্বাস  এবং সেই সাথে প্রতিযোগিতামূলক কর্মক্ষেত্রে নিজেক টিকিয়ে রাখার  ক্ষমতা বাড়ায়।  

যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণের বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।

 কারিগরি ও পেশাগত প্রশিক্ষণ :

বাংলাদেশে যুবকদের জন্য কারিগরি এবং পেশাগত প্রশিক্ষণ হলো একটি মৌলিক ধারা। এই ধরনের প্রশিক্ষণে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি দক্ষতা, যেমন- ইলেকট্রিক্যাল ইস্টলেশন এন্ড মেইনটেন্যান্স, ওয়েলডিং, মেশিন শপ প্র্যাকটিস, ‍সুইং মেশিন অপারেশন, মোটর ড্রাইভিং, প্লাম্বিং, কাঠের কাজ, সেলাই, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ইত্যাদি শেখানো হয়। এই ধরনের দক্ষতা যুবকদের কর্মজীবনে সরাসরি প্রয়োগযোগ্য এবং তারা সহজেই নিজেদের পেশা হিসেবে এগুলো বেছে নিতে পারে। 

উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ :

উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ বাংলাদেশের যুবকদের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর। এর মাধ্যমে যুবকরা শিখতে পারে কিভাবে নিজের ব্যবসা শুরু করতে হয়, বাজার বিশ্লেষণ করতে হয়, পণ্য বা সেবা বিপণন করতে হয় এবং ব্যবসায়িক ঝুঁকি পরিচালনা করতে হয়। এই ধরনের প্রশিক্ষণ যুবকদের নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে এবং আর্থিক স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করে। 

সফট স্কিলস ও নেতৃত্ব উন্নয়ন :

যেকোনো ছাত্র- ছাত্রী বা যে কোনো পেশাজীবীদের জন্য সফট স্কিলস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের প্রশিক্ষণে যুবকদের শিখানো হয় দলগত ভাবে কাজ করা, সময় ব্যবস্থাপনা, সংকট মোকাবিলা, যোগাযোগ দক্ষতা অর্জন করা ইত্যাদি। এই ধরনের দক্ষতা তাদের কর্মজীবনে আরও সফল করে তোলে। এছাড়াও, নেতৃত্ব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ তাদের সমাজে এবং কর্মস্থলে নেতৃত্ব দেয়ার সাহস যোগায়। 

যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এর সুবিধাসমুহ :

যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণে আপনি দক্ষ ট্রেইনার কর্তৃক প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তাছাড়া এই প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট বা সনদের রয়েছে আলাদা মূল্য। যা আপনার প্রত্যাশিত ক্যারিয়ারের যাত্রাকে আরো বেশি সুগম করে তুলবে। 

সাধারণত আবাসিক ও অনাবাসিক ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের জন্য প্রশিক্ষণার্থীকে নামমাত্র টাকা ভর্তি ফি এবং জামানত হিসেবে  অতি স্বল্প পরিমাণে জমা দিতে হয়। জামানতের টাকা আপনি পরবর্তীতে ফেরৎ পেয়ে যাবেন। 

আবাসিক এ প্রশিক্ষণ কোর্সের মেয়াদ ০৩ থেকে ০৬  মাস হতে পারে।  যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেককে মাসিক প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকার মতো  প্রশিক্ষণ ভাতা প্রদান করে থাকে। তাছাড়া এ সুযোগ পেতে তেমন শিক্ষাগত যোগ্যতারও বাধ্যবাধকতা নেই। মাত্র অষ্টম শ্রেণি পাশ হলেই যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণের নিজের পছন্দের কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন। 

কোথায় থেকে এই প্রশিক্ষণ নেব?

সাধারণত বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা শহরে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। দেশের বেকার যুবসমাজকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করার লক্ষে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক ট্রেডে এই সব প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। আপনি যদি সরকারি ভাবে এই প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার নিজ জেলা পর্যায়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। 

 আসুন জেনে নেয় যুবউন্নয়ন প্রশিক্ষন করে সফল হয়েছে এমন একজনের গল্পঃ 

তানিয়া,  গ্রামের এমন একটি মেয়ে, যে যুবউন্নয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তার জীবনে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে। 

 তানিয়ার পরিবারের আয়ের উৎস ছিল খুবই সীমিত। তার পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর, সে নিজের জীবিকার জন্য কিছু করার চিন্তা করতে থাকে। এই সময়ে, সে স্থানীয় সরকারের একটি যুবউন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সম্পর্কে জানতে পারে। ঠিক তখনই অনেক স্বপ্ন নিয়ে সে এই কেন্দ্রে যোগ দেয় এবং বিভিন্ন দক্ষতা ও ব্যবসায়িক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে থাকে। 

প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তানিয়া শিখেন কীভাবে ছোট মূলধন থেকে ব্যবসা শুরু করা যায়, বাজার বিশ্লেষণ করা, এবং লাভজনকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করা। প্রশিক্ষণ শেষে, তানিয়া অল্প মূলধন নিয়ে একটি হস্তশিল্প ব্যবসা শুরু করে। তার প্রতিষ্ঠান শুরুতে ছোট হলেও, ধীরে ধীরে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। সে এই  উদ্যোগ নিয়ে শুধুমাত্র নিজের এবং তার পরিবারের জীবনমানই উন্নত করেন নাই, বরং তার গ্রামের অন্যান্য মহিলাদেরকেও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়।