কীভাবে মাত্র 5 মিনিটে হারানো ভোটার আইডি কার্ড ফিরে পাবেন?

হারানো ভোটার আইডি কার্ড

আপনার ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে চিন্তার কোন কারণ নেই। বর্তমানে অনলাইনে খুব সহজেই আপনি আপনার হারানো ভোটার আইডি কার্ড পুনরায় পেতে পারেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে ঘরে বসেই কয়েকটি সহজ ধাপে আপনার হারানো ভোটার আইডি কার্ড ফিরে পাবেন

কেন হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলন করব?

আমাদের জীবনে ভোটার আইডি কার্ড অনেক প্রয়োজনীয় এবং প্রতিনিয়ত কাজে লাগে এমন একটি কার্ড। এটি অনেক সময় আমরা বিভিন্ন কারনে হারিয়ে ফেলি যখন আমাদের এটি আবার কালেক্ট করতে হয়। দেশের ভিতর বা দেশের বাহিরে যে কোন কাজ করতে আমাদের এনআইডি কার্ড এর দরকার হয়।

হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলন করার প্রয়োজন রয়েছে কারণ:

  1. ভোটার আইডি কার্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র যা নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। এটি হারিয়ে গেলে আপনার পরিচয় প্রমাণের সমস্যা হতে পারে।
  2. ভোটার আইডি কার্ড ছাড়া আপনি নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না। এটি ভোটার হিসাবে আপনার অধিকার প্রয়োগের জন্য অপরিহার্য।
  3. ভোটার আইডি কার্ড ব্যাংক হিসাব খোলা, সিম কার্ড ক্রয়, পাসপোর্ট করা ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে প্রয়োজন হয়। এটি হারিয়ে গেলে এসব কাজে বাধা আসতে পারে।
  4. হারানো ভোটার আইডি কার্ড অন্য কারো হাতে পড়লে তা অপব্যবহার করা হতে পারে, যা আপনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
  5. নতুন ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করতে সময় ও অর্থ ব্যয় হয়। হারানো আইডি কার্ড উত্তোলন করলে এই খরচ এড়ানো যায়।

সুতরাং, ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে গেলে তা উত্তোলন করা জরুরি যাতে নাগরিক হিসাবে আপনার অধিকার ও পরিচয় নিশ্চিত থাকে এবং অপব্যবহারের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

হারানো ভোটার আইডি কার্ড বের করার জন্য নিম্নোক্ত কাগজপত্র ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে:

১. থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা

  • হারানো আইডি কার্ডের বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে।
  • জিডির কপি পরবর্তীতে আইডি কার্ড রিইস্যুর আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।

২. ভোটার আইডি নম্বর বা ফরম নম্বর

  • আপনার ভোটার আইডি নম্বর বা ভোটার নিবন্ধন ফরম নম্বর জানা থাকতে হবে।
  • ফরম নম্বর ভোটার স্লিপে উল্লেখ থাকে।

৩. জন্ম তারিখ

  • আপনার সঠিক জন্ম তারিখ প্রয়োজন হবে।

৪. একটি সচল মোবাইল নম্বর

  • আবেদনের সময় একটি সচল মোবাইল নম্বর প্রদান করতে হবে।
  • এই নম্বরে ওটিপি কোড পাঠানো হবে যা দিয়ে আবেদন সম্পন্ন করা যাবে।

৫. অনলাইনে আবেদন করা

  • জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন ওয়েবসাইটে (https://services.nidw.gov.bd/) গিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
  • ভোটার আইডি/ফরম নম্বর, জন্ম তারিখ ইত্যাদি তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
  • জিডির কপি আপলোড করে আবেদন জমা দিতে হবে।
  • আবেদন অনুমোদিত হলে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে।

৬. ফি পরিশোধ করা

  • হারানো আইডি কার্ড রিইস্যুর জন্য ২৩০ টাকা ফি পরিশোধ করতে হবে।

৭. আইডি কার্ড ডাউনলোড ও প্রিন্ট করা

  • আবেদন অনুমোদিত হলে অনলাইন থেকে নতুন আইডি কার্ড ডাউনলোড করে প্রিন্ট নিতে হবে।

জাতীয় পরিচয়পত্র হারানোর জিডি লেখার নিয়ম

জাতীয় পরিচয়পত্র হারানোর ক্ষেত্রে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) লেখার নিয়মাবলী নিম্নরূপ:

১. জিডিতে সঠিক তারিখ উল্লেখ করতে হবে।

২. নিজের নাম, পিতা-মাতার নাম, গ্রাম, ডাকঘর, উপজেলা ও জেলা স্পষ্টভাবে লিখতে হবে।

৩. কখন ও কোথায় জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়েছে তার বিবরণ দিতে হবে।

৪. জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর বা ভোটার আইডি নম্বর/ফরম নম্বর উল্লেখ করতে হবে।

৫. জন্ম তারিখ লিখতে হবে।

৬. জিডিতে নিজের সম্পূর্ণ ঠিকানা দিতে হবে।

৭. জিডিতে বয়স উল্লেখ করা প্রয়োজন।

৮. জিডিতে অফিসার ইনচার্জের নাম ও থানার নাম লিখতে হবে।

৯. জিডিতে বিষয় শিরোনাম দিতে হবে যেমন “সাধারণ ডায়েরির জন্য আবেদন” ইত্যাদি।

 ১০। জিডিতে বিনীত ভাষায় লিখতে হবে।

নিম্নে একটি উদারণ দেওয়া হল

জাতীয় পরিচয়পত্র হারানোর জিডি লেখার নমুনা:

তারিখঃ ১৪/০৩/২০২৪

বরাবর,

অফিসার ইনচার্জ

থানার নাম: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ

উপজেলা: ধানমন্ডি

জেলা: ঢাকা

বিষয়ঃ জাতীয় পরিচয়পত্র হারানোর সাধারণ ডায়েরির (জিডি) জন্য আবেদন।

জনাব,

যথা বিহীত সম্মান পূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, আমি আলাউদ্দিন মিয়া (বয়স ৩৫), পিতাঃ সিরাজ মিয়া, ঠিকানা- কাজী পাড়া, ঢাকা, আমি থানায় হাজির হয়ে এই মর্মে লিখিতভাবে জানাচ্ছি যে, গত ১২/০৩/২০২৪ তারিখে আমার জাতীয় পরিচয়পত্র নং ১২৩৪৫৬৭৮৯০ ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় হারিয়ে গেছে।

আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করেও আমার হারানো জাতীয় পরিচয়পত্রটি খুঁজে পাইনি। এখন আমি আমার হারানো জাতীয় পরিচয়পত্রটি পুনরায় পেতে চাই।

অতএব, আমার হারানো জাতীয় পরিচয়পত্রটি পুনরায় পাওয়ার জন্য আপনার নিকট বিনীত প্রার্থনা রইল। আমার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য নিম্নরূপ:

নামঃ আলাউদ্দিন মিয়া

পিতার নামঃ সিরাজ মিয়া

ঠিকানা: কাজী পাড়া, ঢাকা

জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর: ১২৩৪৫৬৭৮৯০

জন্ম তারিখ: ০১/০১/১৯৮৯

বিনীত নিবেদক

স্বাক্ষর

নাম: আলাউদ্দিন মিয়া

মোবাইল নম্বর: ০১৭১২৩৪৫৬৭৮

সারাংশ:

১. জিডিতে সঠিক তারিখ, নিজের নাম, ঠিকানা, বয়স, পিতা-মাতার নাম উল্লেখ করতে হবে।

২. কখন ও কোথায় জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়েছে তার বিবরণ দিতে হবে।

৩. জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্ম তারিখ লিখতে হবে।

৪. জিডিতে অফিসার ইনচার্জের নাম ও থানার নাম উল্লেখ করতে হবে।

৫. জিডিতে বিষয় শিরোনাম দিয়ে বিনীত ভাষায় লিখতে হবে।

হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলনের অনলাইন আবেদনের পদক্ষেপ নিম্নরূপ:

১. থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা

  • হারানো আইডি কার্ডের বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে।
  • জিডির কপি পরবর্তীতে আইডি কার্ড রিইস্যুর আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।

২. অনলাইনে আবেদন করা

  • জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন ওয়েবসাইটে (https://services.nidw.gov.bd/) গিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
  • প্রথমে ওয়েবসাইটে একাউন্ট/প্রোফাইল রেজিস্টার করতে হবে।
  • ভোটার আইডি/ফরম নম্বর, জন্ম তারিখ ইত্যাদি তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
  • জিডির কপি আপলোড করে আবেদন জমা দিতে হবে।

৩. আবেদন ফি পরিশোধ করা

  • হারানো আইডি কার্ড রিইস্যুর জন্য ২৩০ টাকা ফি পরিশোধ করতে হবে।
  • অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমে বিকাশ, রকেট, নগদ ইত্যাদির মাধ্যমে ফি পরিশোধ করা যাবে।

৪. আবেদন ট্র্যাক ও অনুমোদন

  • আবেদন জমা দেওয়ার পর অনলাইনে আবেদনের স্ট্যাটাস ট্র্যাক করা যাবে।
  • আবেদন অনুমোদিত হলে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে।

৫. আইডি কার্ড ডাউনলোড ও প্রিন্ট করা

  • আবেদন অনুমোদিত হলে অনলাইন থেকে নতুন আইডি কার্ড ডাউনলোড করে প্রিন্ট নিতে হবে।
  • সাধারণত আবেদনের ৭-১৫ দিনের মধ্যে নতুন আইডি কার্ড পাওয়া যায়।

FAQ( হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলন সম্পর্কে কিছু সাধারণ প্রশ্নোত্তর

.১। হারানো ভোটার আইডি কার্ড উদ্ধার করতে প্রথমে কি করতে হবে?
উত্তর: প্রথমে নিকটস্থ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে।

২. জিডি করার পর কি করতে হবে?
উত্তর: জিডি করার পর জিডি কপি আপলোড করে অনলাইনেহারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলনের আবেদন করতে হবে।

৩. হারানো আইডি কার্ড উত্তোলনের জন্য কত টাকা ফি লাগে?
উত্তর: হারানো আইডি কার্ড উত্তোলনের জন্য সাধারণত ২৩০-৩৪৫ টাকা ফি লাগে।

৪. ফি কিভাবে প্রদান করতে হয়?
উত্তর: ফি অনলাইনে বিকাশ, রকেট, নগদ ইত্যাদি মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে প্রদান করা যায়।

৫. আবেদন করার কতদিন পর নতুন আইডি কার্ড পাওয়া যাবে?
উত্তর: আবেদনের ৭ থেকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে নতুন আইডি কার্ড উত্তোলন করা যাবে।

৬. হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলন ও সংশোধন একসাথে করা যায়?
উত্তর: না, আগে হারানো ভোটার আইডি কার্ড করতে হবে। পরে সংশোধনের জন্য আলাদা আবেদন করতে হবে।

৭. হারানো আইডি কার্ড অন্যের হাতে পড়লে কি সমস্যা হতে পারে?
উত্তর: হ্যাঁ, আপনার আইডি অপব্যবহার হতে পারে বা আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন।

৮. জিডিতে কি কি তথ্য উল্লেখ করতে হবে?
উত্তর: জিডিতে নাম, আইডি নম্বর, বয়স, পিতা-মাতার নাম, ঠিকানা, হারানোর তারিখ ইত্যাদি উল্লেখ করতে হবে।

৯. অনলাইনে আবেদন করতে কি কি প্রয়োজন?
উত্তর: অনলাইনে আবেদনের জন্য জিডি কপি, ছবি, মোবাইল নম্বর, ইমেইল আইডি ইত্যাদি লাগবে।

১০. হারানো আইডি কার্ড উত্তোলন না করলে কি সমস্যা হতে পারে?
উত্তর: ভোট দিতে না পারা, ব্যাংক হিসাব খোলা, সিম কিনতে সমস্যা হওয়া সহ নানা ঝামেলায় পড়তে পারেন।