অধিদপ্তর কী?
এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে, অধিদপ্তর হচ্ছো কোনো কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্থা যারা কোনো নির্দিষ্ট কার্যাবলীর সম্পাদনের দায়িত্ব পালন করে থাকে। বাংলাদেশ সরকারের কার্যবিধিতে — “কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে সরকার কর্তৃক অধিদপ্তর ঘোষণা করা হয়েছে।” মোটামুটি বলতে গেলে, এটি একটি সংগঠিত দপ্তর যা একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে তা তার জন্য কাজ করে থাকে।
অধিদপ্তরের কাজ কী?
অধিদপ্তরের কাজ অনেক রকমের হতে পারে। কিছু অধিদপ্তর সরাসরি জনগণের সাথে কাজ করে, যেমন স্বাস্থ্য বা শিক্ষা অধিদপ্তর। অন্য কিছু অধিদপ্তর হয়তো প্রশাসনিক কাজ করে, যেমন রাজস্ব বা অর্থ অধিদপ্তর। কিন্তু সবার লক্ষ্য একই, নির্দিষ্ট কাজগুলো সঠিকভাবে এবং দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করা। অর্থাত মন্ত্রণালয় বা বিভাগ কর্তৃক গৃহীত নীতিমালা, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন প্রকল্প অধিদপ্তর মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়িত করে।
কোনো অধিদপ্তরের যিনি প্রধান থাকেন তাকে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলা হয়। যিনি পরিকল্পনা সমুহ বাস্তাবায়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকেন। একটা অধিদপ্তরের সামনে বহু চ্যালেঞ্জ থাকে। প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো, সীমিত সম্পদের মধ্যে সর্বোত্তম ফলাফল অর্জন করা। এছাড়া, প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন, জনসংখ্যার বৃদ্ধি, এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলোও অধিদপ্তরগুলোর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়ায়। একজন দক্ষ মহাপরিচালক তার বুদ্ধিমত্মা ও অভিজ্ঞতার আলোকে এসব বিষয় সুন্দর সমাধান আনার চেষ্টা করে থাকেন।
বাংলাদেশের কয়েকটি অধিদপ্তর:
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর:
বাংলাদেশের সরকারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি অধিদপ্তর যা প্রাথমিক ও ইসলামিক শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা, নীতি, পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত কাজ করে। এই অধিদপ্তরটি প্রাথমিক শিক্ষা সাধারণ সেক্টরের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা সাধনে সাহায্য করে এবং প্রাথমিক শিক্ষা সিস্টেম উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করে এবং সরকারি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের জন্য সমৃদ্ধ শিক্ষা সরবরাহ করার প্রয়াস চালিয়ে যায়।
এই অধিদপ্তরটি সরকারি প্রাথমিক স্কুল, মাধ্যমিক স্কুল, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, প্রাথমিক টিচার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান), এবং অন্যান্য প্রাথমিক শিক্ষা সংস্থা সমূহের সাথে যোগাযোগ করে। এর সদর দপ্তার রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর :
“স্বাস্থ্য অধিদপ্তর” হলো একটি সরকারি বা সরকারী প্রতিষ্ঠান যা স্বাস্থ্য সেবা ও স্বাস্থ্য সংরক্ষণের জন্য কাজ করে থাকে। এর মধ্যে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা, সার্বিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রোগ এবং সংক্রমণের নির্ধারণ এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে কাজ করা, জনগণের শিক্ষিত ও সচেতন করে তুলা প্রভৃতি কাজ করে থাকে।
এছাড়াও বিভিন্ন মহামারি রোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম পরিচালনা করে এবং প্রয়োজনমুলক টিকাদানের মাধ্যমে জনগণকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করার প্রয়াস চালিয়ে যায়। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত
খাদ্য অধিদপ্তর:
এই অধিদপ্তরের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের সার্বিক খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা সুচারুভাবে সম্পাদন করা। এই অধিদপ্তর জাতীয় খাদ্য নীতির কলাকৌশল বাস্তবায়ন করে থাকে। তাদের একটি লক্ষ্যের হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন খাদ্য শস্যের সরবরাহ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা। খাদ্য খাতে বিভিন্ন প্রকার উন্নয়নমূলক প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা। এছাড়াও দেশে যখন খাদ্য শস্য সরবরাহে যোগানেে সমস্যা ঘটাবে এমন পরিস্থিতির উপর নজর রাখা এবং সংকটকালীন সময়ের জন্য খাদ্যশস্য সংগ্রহ এবং বিতরণ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী যেমন- চিনি, ভৌজ্য তৈল, লবণ ইত্যাদি সংগ্রহ ও বিতরণ ব্যবস্থা করা। এর সদর দপ্তার রাজধানীর ঢাকাতে অবস্থিত।
সমাজসেবা অধিদপ্তর:
সমাজসেবা অধিদপ্তর বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করা একটি অধিদপ্তর। যা দেশে কল্যাণমূলক ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালায়।
সমাজসেবা অধিদপ্তর উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমগুলো হচ্ছে: দারিদ্র নিরসন কার্যক্রম, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ কর্মসূচি, শিশু সুরক্ষামূলক কার্যক্রম, সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধ কার্যক্রম, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণ ও উন্নয়ন কর্মসূচি, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, প্রতিবন্ধিতা সহায়ক সামগ্রী, উৎপাদন কেন্দ্র, সেবামূলক ও কমিউনিটি ক্ষমতায়ন কার্যক্রম, পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর:
বিভিন্ন দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরণের সরকারী অধিদপ্তর থাকে, যা মাদকদ্রব্যের ব্যবস্থাপনা, নিয়ন্ত্রণ, এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়িত্ব নেয়। এই ধরণের অধিদপ্তর মূলত মাদকদ্রব্য ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য প্রতিষ্ঠ়া করা হয়।
১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনডিসি) হলো এমন একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান যা মাদকদ্রব্যের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার কঠোর ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এটি বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে থাকে। এর মুল প্রতিপাদ্য “মাদকাসক্তি মুক্ত বাংলাদেশ গড়া।”
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর:
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর হলো এমন একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান যা দেশের আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য, পূর্বাভাস, ও নিরীক্ষা প্রদান করে। এই অধিদপ্তর বিভিন্ন প্রকারের আবহাওয়া পূর্বাভাস, বৃষ্টির সম্ভাবনা, তাপমাত্রা, উচ্চতা, বায়ুগুণ, মহাসাগরের মৌসুম, তাপ সৃষ্টি, ভূমি চলচ্চিত্র ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য । বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে থাকে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর:
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর হলো বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে কার্যরত একটি সংস্থা, যা দেশের প্রাণিসম্পদ শিল্পের তদারকি করে থাকে। পুর্বে এটি বিভিন্ন নামে থাকলেও বেশ কয়েকবার নাম পরিবর্তনের পরে এটি বর্তমান নাম লাভ করে । ১৯৬০ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর নামকরণ করা হয়েছে।
বন অধিদপ্তর
বন অধিদপ্তর হলো এমন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান যা দেশের বন এবং বন্যার সংরক্ষণ, উন্নত ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কাজ সম্পাদন করে থাকে। বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে অধীনে এই অধিদপ্তর কাজ করে। এটি প্রাকৃতিক বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং কৃত্রিম বনায়নের দিক থেকে আদর্শ অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করে থাকে।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর:
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর হলো এমন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান যা মহিলাদের জীবনমান উন্নতি এবং নিরাপত্তা বিধান, স্বাধীনতা নিশ্চতের জন্য কাজ করে থাকে। এই ধরণের অধিদপ্তর আমরা সাধারণত “মহিলা ও শিশু কল্যাণ অধিদপ্তর” এর মতো নামকরণ দেখতে পাই। বাংলাদেশেও ঠিক তাই। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর বাংলাদেশ সরকারের একটি নারী বিষয়ক বিভাগ যা নারীদের কল্যাণমূলক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং এটি নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে থাকে।
এই ধরণের অধিদপ্তরের মৌলিক কাজের মধ্যে মহিলাদের সম্পর্কে সংগ্রহ করা, মহিলা ও শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষা সংরক্ষণ, মহিলাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং অবসান্ন মহিলা ও শিশুদের কল্যাণে মৌলিক কাজের মধ্যে থাকে। এই অধিদপ্তরগুলি প্রায় সকল সরকারি দপ্তরের মধ্যে একটি অংশ হিসেবে কাজ করে এবং মহিলা সম্পর্কে নীতি ও পরিকল্পনা গড়ে তোলার জন্য সহায়ক কাজ করে।
মৎস্য অধিদপ্তর:
মৎস্য অধিদপ্তর হলো এমন একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান যা দেশের মৎস্য সংরক্ষণ, উন্নত ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কাজে জোর দেয়। বাংলাদেশেরমৎস্য খাত ও শিল্পের দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। যা্ দেশের সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি অধিদপ্তর।
এই অধিদপ্তর মৎস্য উৎপাদন ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নীতি, পরিকল্পনা, প্রক্রিয়া, এবং নিরীক্ষা করে এবং মৎস্য উদ্যোগের সুস্থ ও উন্নত বৃদ্ধি হতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এটি মৎস্য সংবাদ ও তথ্য সরবরাহ করে এবং মৎস্য উদ্যোগের সাথে জনগণের সচেতনা বৃদ্ধি করতে চেষ্টা করে থা থাকে।
উপসংহার :
অধিদপ্তরের ভূমিকা এবং কার্যক্রম সমাজের জন্য অপরিহার্য। তারা যে কাজগুলো করে থাকে, তা সরকারি নীতি ও সেবার মান উন্নত করে। একটি সুষ্ঠু ও সক্রিয় অধিদপ্তর হলো একটি সুস্থ ও উন্নত সমাজের প্রতীক।
সবশেষে, এটা বলা যেতে পারে, একটি অধিদপ্তরের কার্যক্রম কোনো একক ব্যক্তি বা দলের নয়, বরং এটি একটি সমগ্র সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ।