একনজরে মেহারী গ্রাম
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মেহারী গ্রামের নামকরণের সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও এ কথা সত্য যে এটি একটি প্রাচীন গ্রাম। মেহারী একটি ঐতিহ্যবাহি কালি মন্দির অবস্থিত।এখানে প্রতি বছর মহা সমারোহে সনাতন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের পূজা ও বটতলায় মেলা অনুষ্ঠিত হয়।বিশেষ সূত্র থেকে জানা যায়, মেহারী কালি মন্দিরের নাম অনুসারে তৎকালীন লালু গোসাই নামে একজন চেয়ারম্যান এতদ্ অঞ্চলের “ইউনিয়ন পরিষদের”নাম দেন মেহারী ইউনিয়ন পরিষদ।[১]
➤সীমানাঃ
পূর্বে:-বাদৈর ইউনিয়নের কালসার ও বর্ণী গ্রাম।পশ্চিমে:- রাজার খাল ও শিমরাইল গ্রাম।
দক্ষিণে:- যমুনা ও ঈশান নগর গ্রাম।
উত্তরে;- বল্লভপুর ও মূলগ্রাম ইউনিয়নের শেরপুর গ্রাম।
➤একনজরে মেহারী গ্রামঃ
২ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
২ টি কিন্ডার গার্টেন
১ টি কমিউনিটি ক্লিনিক
১ টি ঈদগাহ মাঠ
১ টি মাজার
১ টি খেলার মাঠ
১ টি ফাজেল মাদ্রাসা
১ টি মহিলা মাদ্রাসা
১ টি ঐতিহ্যবাহী অতিথি ভবন
৬ টি মসজিদ(১টি কেন্দ্রীয় কেবিএম জামে মসজিদ)
৬ টি কবরস্থান(১টি বড় কবরস্থান)
২ টি শ্মশান
২ টি মন্দির
৩ টি মঠ
৪ টি ঐতিহ্যবাহী বটগাছ
অসংখ্য পুকুর ও ডুবা।
মোট জনসংখ্যা =৭০০০জন (প্রায়)
মোট ভোটার=৩১০০জন
গ্রামের আয়তন =৩.১০ বর্গ কিলোমিটার(প্রায়)
পুরুষ ও মহিলার অনুপাত =৫৩ঃ৪৭
শিক্ষার হার=৭৮%
দারিদ্র্যতার হার=৯%
➤পেশাঃ
কৃষিজীবি=৩৫%
প্রবাসী =২০%
চাকুরীজীবি =১৫%
ব্যবসায়ী =৩৫%
অন্যান্য =৫%
➤গোষ্ঠী/গোত্র গুলোর নামঃ
ম্যাকাইভার ও পেজ এর মতে, “গোষ্ঠী বলতে আমরা বুঝি কোন সামাজিক ব্যক্তির সমষ্টি, যারা পরস্পরের সঙ্গে নির্দিষ্ট সম্পর্কে সম্পর্কযুক্ত।” গোয়ালী গ্রামে রয়েছে বেশ কিছু গোষ্ঠী।যারা নিজ নিজ গোত্রের গন্ডির মধ্যে থেকেও অপরাপর গোষ্ঠীর মানুষজনদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে দীর্ঘকাল পাশাপাশি বসবাস করে চলেছে।
✪ জমিরের গোষ্ঠী
[এটি গ্রামের সর্বপ্রাচীন গোষ্ঠী বলে মনে করা হয়।মাডৎ খন্দকার নামে এক ব্যক্তি যিনি এ বংশের প্রথম পুরুষ ছিলেন বলে লোকমুখে প্রচলিত আছে।]
✪ ভূঁইয়া গোষ্ঠী
✪ বশরুউদ্দির বাড়ি
✪ উত্তর মৌলভী বাড়ি
✪ দক্ষিণ মৌলভী বাড়ি
✪ গাজীর বাড়ি
✪ কলিম উদ্দিনের বাড়ি
➤বিশেষ ব্যক্তিত্বঃ
যুগে যুগে এখানে অনেক জ্ঞানী গুণী মানুষের জন্ম হয়েছে।তাঁদের তালিকা আমি লেখকের একার পক্ষে সংগ্রহ করা অসম্ভব। তবে নিজ গ্রাম,দেশ ও জাতির নিকট পরিচিত আমার সংগৃহীত কিছু সংখ্যক বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের তালিকা নিচে প্রদত্ত হল।
* জনাব মোঃ আব্দুস সুবহান
যাঁর নামে ঢাকার সুবহানবাগের নামকরণ করা হয়েছে।
* জনাব মোঃ ওয়ালিউল্লাহ
একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা।
* জনাব জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ আদেল
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এবং জাতীয় পার্টির রাজনীতিবিদ।তিনি ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত ঢাকা -২২ এর সংসদ সদস্য (এমপি) এবং ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা -৭ এর সংসদ সদস্য ছিলেন।তিনি ঢাকা মহানগরের ডেপুটি মেয়রের দায়িত্বেও ছিলেন।জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ আদেল ৮৪ বছর বয়সে ১৩ নভেম্বর ২০১৪ইং সালে মারা যান।
* জনাব মোঃ আব্দুর রহিম
* জনাব,প্রফেসর আব্দুস সালাম
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান।
* জনাব মোহাম্মদ ফজলুল হক
* জনাব ডক্টর জাফর সিদ্দিকী(খসরু)
যুগ্ন সচিব(অব:)
* জনাব মোঃ ফায়জুল কবির
এসপি,
পুলিশ স্টাফ কলেজ,ঢাকা।
* জনাব মজিব আলম লিটন
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার,
নারায়ণগঞ্জ।
* জনাব শিমুল চন্দ্র সরকার
সহকারী অধ্যাপক,
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা।
* জনাব মোঃ মনির হোসেন
সহকারী অধ্যাপক,
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ।
➤মেহারী গ্রামের প্রাচীন নাম কি ছিল?
মাঠপর্যায়ে ব্যক্তিগত ভাবে তথ্য সংগ্রহ কালে গ্রামে বসবাসকারী কিছু সংখ্যক সবজান্তা প্রবীণদের কাছ থেকে জানা যায়,এক সময় মেহারী বাজার থেকে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর পূর্ব দিকের লোকালয়কে মোহাম্মদ পুর বলা হত।পরে কোন এক সময় বাজারের পূর্ব এবং পশ্চিম পাশে বসবাসরত পুরো জনবসতিই মেহারী নামে আত্ম প্রকাশ করে।এ তথ্যের সত্যতার পিছনে লোকমুখে প্রচলিত কিছু কথামালা এখনো মুখ থেকে মুখে মুখরিত।ইতিহাসিক তথ্যমতে কালিদাস সাগরের বুকে খানে খানে চর জেগে জনবসতি গড়ে উঠে আর জলমগ্ন এ এলাকায় একসময় নৌকা বাইচ হত।মাঝি মাল্লারা ডোল বাজনার তালে তালে গায়েনের সাথে জারি গানে সুর মিলাত।চর দখলের মত নিজ আধিপত্য বিস্তারের জন্য হত মারামারি,লাঠালাঠি।এক গ্রামের লোকজন অন্য গাঁয়ের লোকজনকে কবিয়াল ভাষায় হাইর (জারি গান)গেয়ে ভর্ৎসনা করত।আমার সংগৃহিত নিন্মে লেখা এমনি এক হাইর থেকে মেহারী গ্রামের পূর্ব নাম মোহাম্মদ পুর বলে জানা যায়।
“ওরে শিকারপুর কোন সাহসে আইলি মোহাম্মদপুর,
হগল গোষ্ঠি বাইন্ধা রাখুম নিয়া মান্দারপুর,
পলাইবারও পথ নাইরে সামনে জমশেপুর।।”➤মেহারী নামকরণঃ
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার মেহারী নামক গ্রামটি মেহারী ইউনিয়ন তথা কসবা উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন গ্রাম। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের আগেও এখানে কয়েকশো বছরের পুরনো ইমারত ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায়। যা অনাদর আর অবহেলায় হারিয়ে গেছে।
ধারনা করা হয় সেন বংশের রাজত্বকালে এখানে মিহির চন্দ্র নামক একজন ধনী ব্যবসায়ী বাস করতেন।আশে পাশের দশ গ্রামের লোকজন তার বসবাস করা বাড়িকে মিহির বাড়ি বলে ডাকতেন।সেই “মিহির বাড়ি” নামটিই পরবর্তিতে লোকজনের মুখে মুখে ঈষৎ পরিবর্তিত হয়ে (মিহির বাড়ি>মেহার বাড়ি>মেহারী)মেহারী নাম ধারন করে।[২]
*অন্য এক তথ্যমতে,মেহারী, বর্ণী, কালসার এই তিন গ্রামের লোকজন কোন এক সময় একই পরিবার ভূক্ত ছিল।কিংবদন্তী আছে এ গ্রাম ও তার পার্শ্বর্তী গ্রামে প্রাচীণকালে কালে খা, বরুণ খা, মেহের খা এই তিন ভাই ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ উদ দৌলার পতন হলে যুদ্ধে হেরে গিয়ে জীবন বাঁচানোর তাগিদে এ অঞ্চলে আশ্রয় নেন।
জানা যায়,মেহের খা,বরুণ খা ও কালন খা নামক একই পরিবারের তিন ব্যক্তির নামানুসারে যথাক্রমে মেহারীর নামকরণ… মেহের খা থেকে, বর্ণীর নামকরণ বরুণ খা থেকে, কালসারের নামকরণ, কালন খা থেকে হয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
কালসার গ্রামের নামকরণের আরেক তথ্যঃ
লেখক শফিকুল ইসলাম ‘কালসার’ গ্রন্থে লিখেছেন শিরদাঁড়ায় কালো দাগ বিশিষ্ট এক প্রকার হরিণকে ডাকা হয় কালসার। এখান থেকে আমরা পাই কালসার নামকরণ। প্রায় ২/৩ শত বছর পূর্বে এ গ্রামটিতে গভীর জঙ্গল ছিল। তখন এখানে ডোরাকাটা হরিণ বিচরণ করত।সেই থেকে গ্রামের নাম হয় কালসার।![৫]
➤তথ্যসূত্রঃ
[১] মেহারী ইউনিয়ন তথ্য বাতায়ন
[২] স্বর্গীয় বাবু সূর্যকান্ত সরকার
সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক
কাইতলা যঁজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়।
[৩] মরহুম প্রফেসর আব্দুস সালাম
সাবেক চেয়ারম্যান,মেহারী ইউপি।
[৪] ডাঃ মোঃ আলী আজ্জম
সভাপতি,মেহারী ইউপি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ পরিষদ।
[৫] কালসার -শফিকুল ইসলাম
বাংলা একাডেমী কর্তৃক প্রকাশিত ‘।
[৬] মাঠ পর্যায়ে ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা।
[৭] নামকরণের ইতিকথা।। এস এম শাহনূর
💻Copyright @এস এম শাহনূর
smshahnoor82@gmail.com
(তথ্য সংগ্রাহক,লেখক ও গবেষক)