বাংলাদেশের খেলা

৬৮ হাজার অনলাইন গ্রাম: বাংলাদেশের গ্রাম

বাংলাদেশের খেলা

বাংলাদেশের খেলা বলতে সেইসব ঐতিহ্যবাহী খেলাকে বুঝায় যা এক ‍সময় আমাদের প্রচলিত খেলা ছিল আর আজ তা সময়ের ব্যবধানে হারিয়ে যাচ্ছে। সেই গ্রামীণ জীবনগুলো ছিল সোনালী সময় । বর্তমান সময়ে এসে তা অনেকটাই বদলে গেছে অনলাইন খেলাধুলা হয়ে। 

আসুন জেনে নেয় আমার দেশের সেই জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী খেলা গুলোর নাম: 

কাবাডি, দাবা, গোল্লাছোট, লাটিম  ঘুরানো, দাড়িয়াবান্দ, ডাংগুলি, ক্রিকেট, হকি, এক্কা-দোক্কাইচিং বিচিং, কুড়ি খেলা , কানামাছি, লাঠি খেলা, ষাড়ের লড়াই, বউছি,টুপাপাতি আরও অনেক কিছু ইত্যাদি।  নিচে বিস্তারিত পড়ুন……

তাহলে আসুন জেনে নেয় সেইসব খেলা গুলো সম্পর্কে 

১. কাবাডি 

বাংলাদেশের খেলা;কাবাডি,বাংলাদেশের জনপ্রিয় খেলা;বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খেলা;বাংলার ঐতিহ্য খেলা

কাবাডি হলো বাংলাদেশের জাতীয় খেলা। খেলাটি সারা দেশে অনুষ্ঠিত হয়। কাবাডি এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ নিয়মিত অংশ নিচ্ছে বহু জনগোষ্ঠি। যাইহোক, অন্যান্য খেলার সাম্প্রতিক উত্থানের ফলে এর জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশ একসময় বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দল হিসেবে বিবেচিত হলেও অর্থের অভাবে এবং অন্যান্য কারণে এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে। এক কথায় বলতে গেলে আমাদের দেশে তেমন ভাবে আর পরিচর্যা নেই। 

২. ক্রিকেট

বাংলাদেশের খেলা;ক্রিকেট,বাংলাদেশের জনপ্রিয় খেলা;বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খেলা;বাংলার ঐতিহ্য খেলা;বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা

ক্রিকেট দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। ১৯৯৭ সালে জাতীয় দল আইসিসি ট্রফি জিতে এবং ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জনের পর এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। ২০০০ সালে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের পূর্ণ সদস্য হয়, যার ফলে টেস্ট ক্রিকেট খেলার অনুমতি পায়। বাংলাদেশ নিয়মিত অনেক আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচ, টেস্ট ম্যাচ এবং টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক আয়োজন করে থাকে। ২০১১ সালে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার সাথে ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজন করে। ২০১৪ সালের আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্যও বাংলাদেশ নির্বাচিত হয়েছিল। ২০১৫ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপে, বাংলাদেশ ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছিল। তবে তারা ভারতের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যায়। ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে অনুষ্ঠিত ২০১৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালেও বাংলাদেশ পৌঁছেছিল, কিন্তু সেমিফাইনালে আবার ভারতের কাছে হেরে যায়। বাংলাদেশ মহিলা দল ২০১৮ এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতকে পরাজিত করে ছয়বারের বিজয়ী ভারতের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে ট্রফি জিতেছে।

৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০ তারিখে, বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে জয়লাভ করে।

৩. হকি

হকি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। এটি জনপ্রিয়তা বিবেচনা করে ক্রিকেট এবং ফুটবলের ঠিক পরে আসে। তবে, এই খেলাটির কর্মকর্তাদের দায়িত্বের অভাব এবং অপশাসন এর ফলে হ্রাস পেতে থাকে। যদিও বাংলাদেশ নিয়মিতভাবে ১৯৮৫ সালে থেকে হকি এশিয়া কাপে অংশগ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন, খেলাটির জন্য জাতীয় পরিচালনা কমিটি, প্রতি বছর দেশে কিছু দেশীয় প্রতিযোগিতা আয়োজন করে, বিশেষত প্রিমিয়ার বিভাগ হকি লীগ। 

৪. দাবা

বাংলাদেশের খেলা;দাবা,বাংলাদেশের জনপ্রিয় খেলা;বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খেলা;বাংলার ঐতিহ্য খেলা

দাবা বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ইনডোর খেলা এবং এই দেশটি অনেক প্রতিভাবান দাবা খেলোয়াড়ের জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশী দাবা খেলোয়াড় নিয়াজ মোরশেদ প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার যিনি ১৯৮৭ সালে দক্ষিণ এশিয়া থেকে আবির্ভূত হন। বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন ১৯৭৯ সালে ফিদে এর সদস্য হয়েছে। প্রতি বছর এটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রায়  ১৫ থেকে ২০টি টুর্নামেন্টের আয়োজন করে। বাংলাদেশী দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ হলো দেশের বার্ষিক ব্যক্তিগত জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ।

এইবার চলুন জেনে নেই ঐতিহ্যবাহী সেইসব খেলা সম্পর্কে

বাংলাদেশের খেলার ঐতিহ্যবাহী নামের বিস্তারিত

১. এক্কা- দোক্কা 

এক্কাদোক্কা খেলাটি সাধারণত মেয়েদের মধ্যে খেলা হয়ে থাকে। এটি মাটির পাত্রের ছোট ভাঙা টুকরো দিয়ে খেলা হয় এবং এটি স্থানীয় ভাবে গুটি নামে পরিচিত। এটি আয়তক্ষেত্রাকার বা গোলাকার সমতল ভূমিতে খেলা হয়। প্রায় তিন গজ দীর্ঘ লম্বা একটি আয়তক্ষেত্র মাটিতে আঁকা হয় এবং আয়তক্ষেত্রটি আবার ছয়টি আয়তক্ষেত্রাকার কক্ষে বিভক্ত থাকে। প্রতিটি কক্ষের একটি সাধারণ নাম থাকে, যেমন প্রথম কক্ষকে এক-এর-ঘর বলা হয়, দ্বিতীয় কক্ষকে দুই-এর-ঘর বলা হয়, এই ভাবে পাঁচটি সংখ্যার নামে কক্ষ থাকে যথা এক্কা, দোক্কা, তদক্কা, চৌক্কা, পক্কা।

২. ডাংগুলি

ডাংগুলি বাংলার অন্যতম গ্রামীণ খেলা।  সাধারণত কিশোর বয়সী ছেলেরা এই খেলা খেলে। এই খেলার দুটি উপকরণ রয়েছে। উপকরণ দুটি হল- একটি দেড় থেকে দুই ফুট লম্বা লাঠি (ডাং), অপরটি গুলি, যা প্রায় দুই ইঞ্চি লম্বা ছোট লাঠি, যার দুই প্রান্ত কিছুটা সূঁচালো করা থাকে। দুই থেকে পাঁচ-ছয়জন করে দুই দলে বিভক্ত হয়ে এটি খেলতে পারে। প্রথমে তারা মাঠে একটি ছোট গর্ত করে। যারা দান পায় তাদের একজন গর্তের ওপর গুলি রেখে ডান্ডা মেরে সেটিকে দূরে ফেলার চেষ্টা করে। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়েরা চারিদিকে দাঁড়িয়ে থেকে সেটিকে লুফে নিতে চায়। তারা সফল হলে ঐ খেলোয়াড় আউট হয়, আর ধরতে না পারলে গর্তের ওপর রাখা ডান্ডা লক্ষ করে ছুড়ে মারতে হয়। প্রথম খেলোয়াড় গুলিকে ধরতে বা ডান্ডায় আঘাত করে যদি প্রথম খেলোয়াড় আউট হয় তবে গুলিকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য দ্বিতীয় খেলোয়াড় পরিবর্তন করে। প্রথম খেলোয়াড় যদি আউট না হয়, তবে সে পুনরায় খেলা শুরু করে। এটি দুটি ধাপে সম্পন্ন হয়, প্রথমে সে গুলির একপাশে আঘাত করার চেষ্টা করে বাতাসে রাখার জন্য সামান্য ঝাঁকুনি দেয়, তারপরে সে দন্ডের দ্বারা গর্তের থেকে দূরে দূরে পাঠাতে গুলিতে আঘাত করার চেষ্টা করেন। মূলত খেলোয়াড়কে ৩ বার আঘাত করার সুযোগ দেওয়া হয়। যদি সে ৩ বার ব্যর্থ হয়, তবে খেলোয়াড়কে আউট বলে ঘোষণা করা হবে এবং দ্বিতীয় খেলোয়াড় খেলা শুরু করে। শৈশবের সেই খেলাগুলো খুব আনন্দদায়কও ছিল বটে। 

৩. গোল্লাছোট

গ্রামবাংলার কিশোর-কিশোরীদের কাছে জনপ্রিয় এবং মজার একটি খেলা গোল্লাছুট। শহরের কিশোর-কিশোরীদের অনেকেই এ খেলাটির সঙ্গে পরিচিত নয়। এ খেলায় দৌড়াদৌড়ি ও ছোটাছুটির জন্য বেশ জায়গা লাগে। সমানসংখ্যক সদস্যের দুটি দল থাকে এবং এ দুই দলের মধ্যে এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলোয়াড়ের সংখ্যা ৪-৬ থেকে ৮-১০ জন পর্যন্ত হতে পারে। এ খেলায় দল গঠনের নিয়মটি বেশ মজার। প্রথমে দুটি দলের জন্য দুজন দলনেতা নির্ধারণ করা হয়। এরপর অন্য খেলোয়াড়দের দুজন করে জুটি বেঁধে একটু দূরে যেতে বলা হয়। প্রত্যেক জুটির প্রতিজন পৃথকভাবে তাদের নাম রাখে, তারপর দলনেতাদের সামনে এসে নাম বলে এবং যে নাম যে দলনেতার পছন্দ হয় সে সেই নাম ধরে ডাক দেয়া হয়। তখন ওই নামের যে থাকে তার দলে যোগ দেয়া হয়। কাবাডির মতো গোল্লাছুটে দম হয় না। ছোটাছুটি ও দৌড়াদৌড়ির ফলে এতে উত্তম শারীরিক ব্যায়াম হয়। সাধারণত কিশোর-বালকরা এতে অংশগ্রহণ করে। পাশাপাশি কিশোর-বালিকাদেরও এ খেলায় অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। 

৪. ইচিং বিচিং

ইচিং বিচিং বাংলাদেশ সহ ভারত উপমহাদেশের একটি জনপ্রিয় গ্রামীণ খেলা। সাধারণত এই খেলার জন্য শিশু ও কিশোরীরা গ্রাম সংলগ্ন সবুজ মাঠকে নির্বাচন করে। উচ্চতা অতিক্রম এই খেলার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

ইচিং বিচিং চিচিং ছা
প্রজাপতি উড়ে যা

দু’জন খেলোয়াড় পাশাপাশি বসে খেলোয়াড়দের অতিক্রম করার জন্য উচ্চতা নির্মাণ করে দেয়। প্রথমে তারা দু’পায়ের গোড়ালি দিয়ে উচ্চতা নির্মাণ করে। খেলোয়াড়রা উচ্চতা অতিক্রম করার পর তারা পায়ের উপর আরেক পা তু্লে দিয়ে উচ্চতা বাড়িয়ে দেয়। এইভাবে পায়ের উপর প্রসারিত করতল স্থাপন করে উচ্চতা বাড়িয়ে তোলা হয়। উচ্চতা অতিক্রম করার পর বসে থাকা খেলোয়াড়রা দুই পা মুক্ত করে ত্রিকোণাকার একটি সীমানা তৈরি করে। এই পায়ে ঘেরা স্থানটি পা তুলে দম দিতে দিতে বা ছড়া আওড়াতে আওড়াতে তিনবার অতিক্রম করে লাফ দিয়ে পার হতে হয়। এই সীমানা অতিক্রম করার পর বসে থাকা খেলোয়াড়দের যুক্ত পাকে প্রতিটি খেলোয়াড় শূন্যে লাফিয়ে ইচিং বিচিং ছড়া বলতে বলতে দুইবার করে অতিক্রম করে নেয়। আর এভাবেই খেলাটি শেষ হয়ে থাকে। 

৫. ‍কানামাছি

বাংলাদেশের গ্রামীণ খেলাধুলার মধ্যে কানামাছি একটি চমৎকার খেলা। এ দেশের সর্বত্র শিশু কিশোররা এ খেলা খেলে থাকে। কানামাছি খেলার সময় নিচের ছড়াটি বলতে হয়।

কানামাছি ভোঁ ভোঁ
যারে পাবি তারে ছো

এ খেলায় কাপড় দিয়ে একজনের চোখ বেঁধে দেয়া হয়, সে অন্য বন্ধুদের ধরতে চেষ্টা করে। যার চোখ বাঁধা হয় সে হয় ‘কানা’। অন্যরা ‘মাছি’র মতো তার চারদিক ঘিরে কানামাছি ছড়া বলতে বলতে তার গায়ে টোকা দেয়। চোখ বাঁধা অবস্থায় সে অন্যদের ধরার চেষ্টা করে। সে যদি কাউকে ধরতে পারে এবং বলতে পারে তার নাম তাহলে যাকে ধরেছে তাকে আবার কানা সাজতে হয় বলতে তার চোখ আবার বাধা হয়, আর এভাবেই চলতে থাকে। 

৬. লাঠি খেলা 

বাংলাদেশের খেলার মধ্যে অন্যতম খেলা হল লাঠি খেলা, ঐতিহ্যগত মার্শাল আর্ট যেটি বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কিছু জায়গায় চর্চা করা হয়। ‘লাঠি খেলা’ অনুশীলনকারীকে ‘লাঠিয়াল’ বলা হয়।এছাড়াও, লাঠি চালনায় দক্ষ কিংবা লাঠি দ্বারা মারামারি করতে পটু কিংবা লাঠি চালনা দ্বারা যারা জীবিকা অর্জন করে, তিনি/তাঁরা লেঠেল বা লাঠিয়াল নামে পরিচিতি পান।

লাঠি একটি প্রাকৃত শব্দ যেটি সংস্কৃত ফর্ম ইয়াস্টি থেকে এসেছে। সুতরাং, লাঠি খেলাকে লাঠির কৌশল বলা যেতে পারে।দক্ষিণ এশীয় ভাষায় বাংলাসহ হিতোপদেশ আছে যে যার আছে লাঠি তার আছে ক্ষমতা। লাঠি খেলায় যে দক্ষ বা লাঠি খেলা নিয়ে যাদের ​​বসবাস তারাও লাঠিয়াল হিসাবে পরিচিত।

লাঠিয়াল বাহিনী সড়কি খেলা, ফড়ে খেলা, ডাকাত খেলা, বানুটি খেলা, বাওই জাক (গ্রুপ যুদ্ধ), নরি বারী (লাঠি দিয়ে উপহাস যুদ্ধ) খেলা এবং দাও খেলা (ধারালো অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ) খেলা দেখায়। এর মধ্যে ডাকাত খেলার উপস্থাপনা ঈদে জনপ্রিয় খেলা হিসেবে প্রসিদ্ধ। লাঠিখেলার আসরে লাঠির পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ঢোলক, কর্নেট, ঝুমঝুমি, কাড়া ইত্যাদি ব্যবহূত হয় এবং সঙ্গীতের সাথে চুড়ি নৃত্য দেখানো হয়।

৭. বউচি 

বাংলাদেশের খেলার মধ্যে খুবই জনপ্রিয় একটি গ্রামীণ ও ঐতিহ্যবাহী খেলা হল বউচি। বউচি খেলায় দুইটি দলের প্রয়োজন হয়। প্রত্যেক দলে ৮ থেকে ১০ জন করে খেলোয়াড় হলে খেলা জমে। মাঠ অথবা বাড়ির উঠোন যেখানে খুশি সেখানে এই খেলা খেলা যায়। খেলার প্রারম্ভে ২০-২৫ ফুট দূরত্বে মাটিতে দাগ কেটে দুটি ঘর তৈরি করতে হয়। দুই দলের মধ্যে যারা প্রথমে খেলার সুযোগ পায় তাদের মধ্যে থেকে একজনকে বউ বা বুড়ি নির্বাচন করা হয়। দুটি ঘরের মধ্যে একটি ঘর হবে বড়, যেখানে এক পক্ষের বউ বাদে সব খেলোয়াড় থাকবে। আর ছোট ঘরে দাঁড়াবে বউ। ছোট ঘরটিকে বউঘর বা বুড়িঘর বলে। বউয়ের বিচক্ষণতার ওপর খেলার জয় পরাজয় নির্ভর করে। খেলায় বউঘর থেকে বউকে ছুটে আসতে হবে বড় ঘরটিতে। বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়েরা সব সময় পাহারায় থাকে যেন বউ ঘর থেকে বের হতে না পারে। বউ বাইরে এলে যদি বিপক্ষ দলের কেউ তাকে ছুঁয়ে দেয় তাহলে ওই পক্ষের খেলা শেষ হয়ে যায়।

পরবর্তীতে বিপক্ষ দল খেলার সুযোগ পায়। বড় ঘরটিতে যারা থাকে তারা দম নিয়ে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের তাড়া করে। দম নিয়ে তাড়া করলে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা দিগ্বিদিক ছুটে পালায়। তা সত্তে ও সবসময় খেয়াল রাখে বউ যেন যেতে না পারে। দম নিয়ে যাওয়া খেলোয়াড় যদি বিপক্ষ দলের কাউকে ছুঁয়ে দেয় তবে সে খেলোয়াড় মারা পড়ে। মারা পড়া খেলোয়াড় চলতে থাকা খেলায় অংশ নিতে পারে না। এভাবে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় মেরে বউকে বড় ঘরে ফিরে আসতে সুযোগ করে দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে বউয়ের সঙ্গী খেলোয়াড়েরা। বউ যদি বিনা ছোঁয়ায় বড় ঘরে চলে আসতে পারে তাহলে বিজয় অর্জন হয়। বিজয়ী দল পুনরায় খেলা শুরু করবে। যদি বউকে বিপক্ষ দল ছুঁয়ে দেয় তাহলে বিপক্ষ দল খেলার সুযোগ পাবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে খেলা চলতে থাকে।

৮. কুতকুত

কুতকুত আরও একটি গ্রামীণ কিশোরী-তরুণীদের অন্যতম প্রধান বাংলাদেশের খেলা। বিকালের নরম আলোয় গৃহের আঙ্গিনায় কৈশর পেরোনো তরুণীরা কুতকুত খেলায় মেতে ওঠে। বর্ষার পরের নরম মাটিতে মাটির ভাঙ্গা তৈজসপত্রের অংশ দিয়ে দাগ কেটে কুতকুতের জন্য ঘর বানানো হয়। বাংলার গ্রামীণ মেয়েরা যে কোনো ঋতুতেই এই খেলা খেলে থাকে। 

আয়তক্ষেত্রাকার মোট ৭/৮টি ঘর আঁকা হয় এবং এই ঘরগুলোর শেষ মাথায় অর্ধচন্দ্রাকৃতির আর একটি ঘর বানানো হয়। প্রথম ঘরে গুটি ফেলে এক পা শূন্যে রেখে এবং দম দিতে দিতে গুটিকে সবগুলো ঘর অতিক্রম করে অর্ধচন্দ্রাকৃতির ঘরে এনে পা নামিয়ে দম ফেলা যায়। তার পর এই ঘর থেকে গুটিকে পা দিয়ে আঘাত করে সব ঘর অতিক্রম করানোর চেষ্টা করা হয়। গুটিটি সব ঘর অতিক্রম না করলে অর্ধচন্দ্রাকৃতির ঘর থেকে বের হয়ে শূন্যে পা তুলে দম নিতে নিতে তাকে আবার আগের নিয়মে ঘর থেকে বের করে আনতে হয়। খেলোয়াড়রা কপালে গুটি রেখে উপর দিকে তাকিয়ে ৮টা ঘরের দাগে পা না ফেলে অর্ধচন্দ্রাকৃতির ঘরে যেয়ে আবার প্রথম ঘরে ফেরত আসতে পারলে সে ঘর কেনার যোগ্যতা অর্জন করে। কুতকুত খেলায় যে ঘর কেনা হবে সেই ঘরে পা বা গুটি ফেলা যাবেনা। ঘর কেনার প্রক্রিয়াকালীন সময় খেলোয়াড়ের দাঁত দেখা গেলে ঐ খেলোয়াড়ের খেলা ঐ অবস্থায় শেষ হয়ে যায়। ক্রমান্বয়ে ঘর কিনে শেষ ঘরটি দখল করার মাধ্যমে খেলার নিষ্পত্তি হয়।

৯. দাড়িয়াবান্দা

দাড়িয়াবান্ধা বাংলাদেশের খেলার মধ্যে একটি পরিচিত খেলা। বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হাডুডুর মতোই সকল অঞ্চলের আরেকটি জনপ্রিয় খেলা। প্রায় সব এলাকার শিশুরাই এ খেলাটি খেলতে পছন্দ করে। ছেলে, মেয়ে, এমনকি বড়দেরও এ খেলায় অংশ নিতে দেখা যায়।

এ খেলার মাঠটি ৫০ ফুট লম্বা ও ২০ ফুট প্রস্থে, মাঝখানে সমান্তরাল ৫০ ফুট লম্বা ও ১ ফুট চওড়া একটি লাইন থাকবে। ১ ফুট অন্তর আড়াআড়ি ৪টি লাইনে সমগ্র কোর্টটি ১০ইঞ্চি/১০টি খোপে ভাগ করা থাকবে। আড়াআড়ি ৬টি লাইন ১ ফুট চওড়া হবে।

প্রত্যেক দলে ৬ জন করে খেলোয়াড় থাকে। টস করে আক্রমণকারী ও প্রতিরক্ষাকারী স্থির করা হয়। ২৫ মিনিট খেলা, ৫ মিনিট বিশ্রাম, পুনরায় ২৫ মিনিট খেলা-এই নিয়মে খেলা চলে। খেলার সময় একজন মারা পড়লে অন্যদলের অর্ধাংশ আক্রমণ করার সুযোগ পাবে। খেলায় একজন রেফারী ৬ বা ১২ জন দাড়িয়া জজ ও ২ জন স্কোরার থাকে। খেলার ফলাফল অমীমাংসিত থাকলে ১০-১-১০ মিনিট পুনরায় খেলে খেলার ফলাফল নির্ধারিত করা হয়। 

১০. টোপাপাতি

বাংলাদেশের খেলার আরও একটি ঐতিহ্য খেলার নাম টোপাপাতি। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের মেয়েদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খেলা। সাধারনত শিশুরা এই খেলা খেলে থাকে। টোপা মানে হাঁড়ি বা রান্না করার বাসন এবং ভাতি হলো ভাত রান্না করা। এজন্য রান্না করার এ খেলাকে টোপাভাতি বলা হয়।

প্রথমে শিশুরা পাটকাঠি বা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ছোট ঘর তৈরি করে। এরপর এর উপরে গাছের পাতা, কলা পাতা অথবা পলিথিন দিয়ে ছাউনি দেয়। প্রথমে একজনকে কাছেই কোথাও কাল্পনিক বাজারে পাঠানো হয়। সে বাজার থেকে বিভিন্ন কাল্পনিক জিনিসপত্র বাজার করে আনে। সাধারনত গাছের পাতা তরকারি হিসেবে, বালু ভাত হিসেবে বাজার থেকে নিয়ে আসে। বাজার করার সময় কাঁঠাল গাছের পাতা টাকা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এরপর একজন সেসব জিনিসপত্র রান্না করে সবাইকে খেতে দেয়। শিশুরা রান্নার জন্য সাধারনত খেলনা হাড়ি-পাতিল ব্যবহার করে। খাওয়ার সময় বাসন হিসেবেও গাছের পাতা ব্যবহার করে থাকে। 

১১. মার্বেল খেলা

বাংলাদেশের গ্রামীণ কিশোর ছেলেদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় খেলা মার্বেল এটি বাংলাদেশের খেলা। কোন কোন অঞ্চলে মার্বেল খেলাকে বিঘত খেলাও বলে থাকে। সম্ভবত অভিভাবকদের নিষেধাজ্ঞাই এই খেলার প্রতি কিশোরদের অদম্য আকর্ষণ সৃষ্টি করে। এই খেলার নিষ্পত্তি হয় অন্যের মার্বেল খেলে জিতে নিজের করে নেবার মাধ্যমে।

মার্বেল খেলার জন্য কমপক্ষে দুইজন খেলোয়াড় দরকার হয়। তিন, চার, পাঁচ, বা সাতজন মিলেও খেলা যায়। পরিষ্কার সমতল ভুমি এই খেলার জন্য উপযোগী হয় । প্রথমে দুইটি একটি রেখা টানতে হয়। রেখা থেকে চার-পাঁচ হাত দূরে একটি গর্ত করতে হয় যেন একটি মার্বেল সেই গর্তে বসতে পারে। আঞ্চলিক ভাষায় রেখাটিকে ‘জল্লা এবং গর্তটিকে ‘কেপ’ বলে। জল্লার বাইরে পা রেখে প্রত্যেকে একটি করে মার্বেল কেপ এ ফেলার চেষ্টা করে। যার মার্বেল কেপ এ পড়ে বা সবচেয়ে কাছে যায় সে প্রথম দান পায়। সবাই প্রথম যে দান পায় তার হাতে ২/৩/৪টি করে মার্বেল জমা দেয়। সে মার্বেলগুলো ছকের বাইরে বসে সামনের দিকে ওই গর্তের আশপাশে আলতো করে ছড়িয়ে দেয়। এরপর অন্য খেলোয়াড়রা একটা নির্দিষ্ট মার্বেলকে বলে ‘বাদ’। অর্থাৎ ওই মার্বেল ছাড়া বাকি যে কোন একটি মার্বেলকে অন্য একটি মার্বেল ছেড়ে দিয়ে স্পর্শ করতে হবে। যদি এমনটা পারে তাহলে ওই দান সে জিতে যায়। আর না পারলে পরবর্তী জন একইভাবে খেলার সুযোগ পায়। তবে ‘বাদ’ দেয়া মার্বেল কিংবা অন্য একাধিক মার্বেলকে ছুড়ে দেয়া মার্বেল স্পর্শ করলে ওই খেলোয়াড়কে ফাইন দিতে হয়। এবং দান জেতার জন্য পরবর্তী খেলোয়াড় ফাইন হওয়া মার্বেলসহ সেগুলো ছড়িয়ে দিয়ে খেলতে থাকে। যে কেউ দান জিতলে আবার পুনরায় খেলা শুরু হয়। এভাবেই চলতে থাকে যতক্ষণ না প্রতিপক্ষ আত্মসমর্পণ করে কিংবা তার কাছের মার্বেল শেষ না হয়ে যায়।

১২. মোরগ লড়াই

মোরগ লড়াই বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় এই খেলা আয়োজন করা হয়ে থাকে। এটি সাধারনত ছেলেদের খেলা গ্রামাঞ্চলের ছেলেদের কাছে এটি অতন্ত্য জনপ্রিয় একটি খেলা।

মোরগ লড়াই খেলায় একদল ছেলে গোল হয়ে একপায়ে দাড়িয়ে থাকে। দুই হাত দিয়ে অপর পা পিছনে ভাজ করে রাখতে হয়। রেফারি যখন বাশিঁতে ফুঁ দেন তখনই খেলোয়াড়রা একে অপরকে ভাজ করা পা দিয়ে মারতে থাকে। কেউ পরে গেলে সে বাতিল বলে গণ্য হয়। এভাবে শেষ পর্যন্ত তিনজন থাকে। তাদের মধ্য থেকে ১ম, ২য় ও ৩য় নির্ধারন করা হয়।

১৩. ষোল গুঠি

ষোল গুটি বাংলাদেশের গ্রামীণ পুরুষদের অন্যতম প্রধান খেলা। অবসরের সময় গ্রামের যুবক ও মধ্যবয়সী পুরুষেরা ষোলগুটি খেলে। মাটিতে দাগ কেটে শুকনো ডাল ভেঙ্গে গুটি বানিয়ে চলে এই দীর্ঘমেয়াদি খেলা। সাধারণত মাটিতে দাগ কেটে ষোল গুটির ঘর বানানো হয়। প্রতি পক্ষেই ১৬টি করে গুটি থাকে। শুধু ঘরের মাঝখানের দাগটি দান চালার জন্য খালি থাকে। কোনাকোনি দাগের গুটিগুলো সারা ঘর জুড়ে এক ঘর করে কোনাকোনি খেতে পারে। অপর পক্ষের গুটিকে ডিঙ্গাতে পারলেই সে গুটি কাটা পড়ে। এই ভাবে প্রতিপক্ষের গুটির সংখ্যা কমিয়ে শূন্য করে ফেলতে পারলেই খেলা শেষ হয়ে যায়। তবে অঞ্চলভেদে ১৩টি কিংবা নির্দিষ্ট সংখ্যক গুটি খেয়ে ফেলতে পারলেই খেলা শেষ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে খেলা শুরুর আগেই সংখ্যাটি ঠিক করে নেয়া হয়।  ১৬ গুটি খেলাটির সবচেয়ে আধুনিক সংস্করন বর্তমানে আন্ড্রয়েড প্লাটফর্মের জন্য ডেভেলাপ করা হয়েছে। এই অ্যাপ্লিকেশনটি গুগল প্লে স্টোর থেকে সংগ্রহ করা যাবে।

১৪. নৌকা বাইচ

নৌকা বাইচ হল বাংলাদেশের খেলার মধ্যে এক মনোমুগ্ধকর আয়োজন যা মাঝিদের নিয়ে একেকটি দল গঠিত হয়। এমন অনেকগুলো দলের মধ্যে নৌকা দৌড় বা নৌকা চালনা প্রতিযোগিতাই হল নৌকা বাইচ। নৌকার দাঁড় টানা ও নৌকা চালনার কৌশল দিয়ে প্রতিযোগীরা জয়ের জন্য খেলেন বা বাজি ধরেন।

নদীমাতৃক বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আনন্দ আয়োজন, উৎসব ও খেলাধুলা সবকিছুতেই নদী ও নৌকার সরব আনাগোনা। হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংস্করণ বাংলাদেশের নৌকা বাইচ। এক সময় এ দেশে যোগাযোগ ছিল নদী কেন্দ্রিক আর বাহন ছিল নৌকা। এখানে নৌ শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে বিভিন্ন শিল্পকেন্দ্র। এসব শিল্পে যুগ যুগ ধরে তৈরি হয় দক্ষ ও অভিজ্ঞ কারিগর। এভাবে একসময় বিভিন্ন নৌযানের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়।

বাইচের নৌকার গঠন

বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের নৌকা দেখা যায়। বাইচের নৌকার গঠন কিছুটা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এই নৌকা হয় সরু ও লম্বাটে। লম্বায় যেমন অনেক দৈর্ঘ্য; ঠিক তেমনই চওড়া হয়ে থাকে বলা যায় খুবই সরু। কারণ সরু ও লম্বাটে হওয়ার দরুন নদীর পানি কেটে খুব দ্রুত চলতে সক্ষম এবং প্রতিযোগিতার উপযোগী হয়ে উঠে। নৌকার সামনের অংশটুকু খুব সুন্দর করে সাজানো হয়। তাতে কখনো কখনো দেখতে ময়ূরের মুখ, কখনো রাজহাঁস বা অন্য কোনো পাখীর মুখের মত দেখায়। নৌকাটিতে উজ্জ্বল রঙের কারুকাজ করে বিভিন্ন নকশা তৈরি করা হয়। সর্বোপরি নৌকাটিকে দর্শকের সামনে খুব সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা করে থাকে যাতে দর্শকরা দেখে মুগ্ধ হয়।

“বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাইচের নৌকার গঠন” কারুকার্য ও গঠনের দিকে তাকালে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বাইচের নৌকাগুলোর মধ্যে বৈচিত্র্যতা দেখা যায়। একেক অঞ্চলের নৌকা বাইচের জন্য একেক রকমের নৌকার প্রচলন রয়েছে। ঢাকা, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ এ অঞ্চলগুলোতে বাইচের জন্য সাধারণত কোশা নৌকা ব্যবহৃত হয় এবং ব্রাহ্মনবাড়িয়াও এর প্রচলন অনেক বেশি দেখা যায়। এর গঠন সরু এবং লম্বায় প্রায় ১৬০ ফুট থেকে ২২০ ফুট পর্যন্ত হয়। কোশা নৌকার সামনের ও পেছনের অংশ একেবারে সোজা। কোশা নৌকা তৈরিতে শাল, শীল কড়ই, চাম্বুল ইত্যাদি গাছের কাঠ ব্যবহৃত হয়। টাঙ্গাইল ও পাবনায় নৌকা বাইচে সরু ও লম্বা ধরনের ছিপ জাতীয় দ্রুতগতি সম্পন্ন নৌকা ব্যবহৃত হয়।

বাইচে ব্যবহৃত বিভিন্ন নৌকার নাম

বাইচের নৌকাগুলোর বিভিন্ন নাম রয়েছে। যেমন, অগ্রদূত, ঝরের পাখি, পঙ্খিরাজ, ময়ূরপঙ্খী, সাইমুন, তুফান মেল, সোনার তরী, দীপরাজ, বাজ পাখি, ‍সুলতান ইত্যাদি।

বাইচের নিয়ম বা আনুষ্ঠানিকতা

নৌকায় ওঠার সময়  আবার অনেক আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। সবাইকে পাক-পবিত্র হয়ে গেঞ্জি গায়ে দিয়ে মাথায় একই রঙের রুমাল বেধে নেয়। সবার মাঝখানে থাকেন নৌকার দিক নির্দেশক। দাঁড়িয়ে থেকে নৌকা চালান পেছনের মাঝিরা। প্রতিটি নৌকায় ৭, ২৫, ৫০ বা ১০০ জন মাঝিও থাকে।

বাইচের গান

নৌকাবাইচের সময় মাল্লারা সমবেত কণ্ঠে যে গান গায় তা সারি গান নামে পরিচিত। নৌকার মধ্যে ঢোল তবলা নিয়ে গায়েনরা থাকেন। তাদের গানগুলো মাঝিদের উৎসাহ আর শক্তি যোগায়। ঢোল ও করতালের সাথে সাথে নৌকা বাইচে সকল মাঝি মাল্লারা তালে তালে এক সুরে গান গেয়ে ছুটে চলেন। নৌকাবাইচের সময় মাঝি-মাল্লারা সমবেত কণ্ঠে যে গান গায় আর নৌকার বৈঠা বাই। 

.

বাংলাদেশে নৌকা বাইচ এর  প্রতিযোগিতা

নৌকা বাইচকে উৎসাহ প্রদান ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখার লক্ষে প্রতি বছর বাংলাদেশে জাতীয় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশে প্রধানত ভাদ্র-আশ্বিন মাসে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা হয়। বাংলাদেশের জাতীয় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার দূরত্ব ৬৫০ মিটার। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের নৌকা বাইচের উন্নয়নের জন্য ‘বাংলাদেশ বোয়িং ফেডারেশন’ গঠিত হয়। সনাতন নৌকা বাইচ ও বোয়িং এর মধ্যে সমন্বয় সাধন করাই বাংলাদেশ বোয়িং ফেডারেশনের কাজ। এ ফেডারেশনটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বোয়িং ফেডারেশনের সদস্য। বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে একটি আন্তর্জাতিক নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। যেমন, ড্রাগন বোট রেস, বোয়িং বোট রেস, সোয়ান বোট রেস ইত্যাদি।

শরীরের জন্য খেলাধুলা কতটুকু গুরুত্বপূ্র্ণ :

খেলা মানব সভ্যতার বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানুষের শারীরিক ও মানসিক উন্নতির জন্য খেলার ভূমিকা অপরিসীম। খেলাধূলা একটি ছোট্ট বাচ্চার জন্য অনিবার্য এবং এটি কোনও বয়স্কের জন্য শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকর হতে পারে।ক্রিকেট, ফুটবল, টেনিস, বাস্কেটবল ইত্যাদি । খেলা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই খেলাধুলা মানুষের মনকে সতেজ রাখে তাদের কাজের দক্ষতা বাড়ায় , তাদের পজিটিভ চিন্তা করাতে সহায়তা করে।