ডিপি পাড়া গ্রাম লক্ষীছড়ি ইউনিয়ন
ভূমিকাঃ ঐতিহ্যবাহী ‘ডিপি পাড়া’ গ্রামখানি খাগড়াছড়ি জেলার অধীনস্হ লক্ষীছড়ি উপজেলার ১নং লক্ষীছড়ি সদর ইউনিয়নের অন্তর্গত ৬নং ওয়ার্ডে, ময়ূর’খীল মোজায়, ধরুং খাল নদীর তীরে স্থাপিত হয় ১৯৬১ ইং।
এই এলাকার নামকরণঃ এই এলাকার বিশাল জন গোষ্ঠীগুলো হচ্ছে ১৯৫৯ ইং সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যখন রাঙামাটি কাপ্তাই বাঁধ দেওয়া হয় তখন পানির নিচে সর্বশ্ব ভিটাবাড়ি হারিয়ে ২০-২৫ পরিবার ১৯৬১ সালে পূর্নবাসিত হন এই এলাকায়। তখন সরকারি ভাবে নামকরণ করে (DP-Para) DP পূর্ণরূপ ধারণা করা যায় (Distribution People) যার অর্থ “বণ্টনকারী মানুষ” এই থেকে ডিপি পাড়া এই গ্রামের নাম, অনেকই আবার নতুন বসতি হিসেবে নোয়া পাড়া নামেও ডাকে ।
সীমানাঃ পূর্বে ফটিকছড়ি উপজেলার কাঞ্চন নগর ইউনিয়নের মানিকপুর গ্রাম,ও ১নং লক্ষীছড়ি ইউনিয়নের বাইন্যাছোলা ও চমুর পাড়া গ্রাম, পশ্চিমে উত্তর মানিকপুর ও সরকারি ফরেস্ট। দক্ষিনে মানিকপুর, উত্তরে ভোলাছোলা, বাইন্যাছোলা ও মহিষ কাটা গ্রাম। এই গ্রামটি দুই উপজেলা সীমান্তবর্তী তথা ফটিকছড়ি ও লক্ষীছড়ি,সীমন্ত এলাকায় অবস্থিত।
ডিপি পাড়া গ্রাম লক্ষীছড়ি ইউনিয়ন
আয়তন ও লোকসংখ্যাঃ গ্রামটি উত্তর-দক্ষিণে প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এবং পূর্ব-পশ্চিমে দুই কিলোমিটার প্রস্থ বিস্তৃত। গ্রামের বর্তমান লোকসংখ্যা ৩০০ পরিবার প্রায় ১৫০০–১৭০০‘শ জনসংখ্যা এ গ্রামে। গ্রামটির পাশের গ্রামে মিলনের অনন্য জাতিগোষ্ঠী এখানে ভিন্ন ধর্মের লোক মিলেমিশে শান্তিতে বসবাস করে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ আমাদের গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ২টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল এন্ড ১টি ইসলামিক কমপ্লেক্স রয়েছে, বিদ্যালয় গুলো হচ্ছে
- ডিপি নোয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- বাইন্যাছোলা–মানিকপুর উচ্চ বিদ্যালয় (সেনাবাহিনী পরিচালিত)
- ডিপি আলী মিয়া মাতাব্বর পাড়া (কিন্ডারগার্টেন স্কুল)
- মোহাম্মাদ আলী ইসলামিক কমপ্লেক্স
- ডিপি পাড়া কেন্দ্র (কিন্ডারগার্টেন স্কুল)
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠনিঃ ১টি জামে মসজিদ ১টি ফেরাকানিয়া মাদ্রাসা ১টি নূরানী মাদ্রাসা
ভূ–প্রকৃতিঃ গ্রামটি গ্রাম বাংলার এক সুন্দর্যের প্রতীক, গ্রামটির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ধরুং খাল নদী, প্রকৃতির নিদর্শন স্বরুপ গ্রামটিকে তার অপরুপ সৌন্দর্যে বিমোহিত করেছে, গ্রামটি বৃত্ত আকারে রয়েছে তাহারেই মাঝে একটি বড় বিল তাহার চতুর ঘেরা সমতল ও উঁচু নিচু ভূমিতে বসতবাড়ি ও তার চারপাশে বিভিন্ন ফলজ বাগান ও গাছপালা, ছোট-বড় বাঁশঝাড় ঘিরে রেখেছে, গ্রামটিকে করে তোলেছে প্রশান্তির এক গ্রাম ডিপি পাড়া।
কর্মসংস্থানঃ এই গ্রামের মানুষের আয়ের মূল উৎস কৃষি, ব্যবসা, চাকুরীজীবী ও প্রবাসী রেমিট্যান্স এর উপর এদের জীবনযাপন নির্ভরশীল।
যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক দিয়ে আমাদের গ্রাম অনেক উন্নত।পাকা রাস্তার মাধ্যমে গ্রামটি পাশের জাতীয় সড়কের সাথে যুক্ত। গ্রামের প্রধান সড়কগুলি পাকা এবং প্রশস্ত । তাই জেলার শহর খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্তা খুব ই সুন্দর । মানুষ প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। তা ছাড়া সরকারের প্রচেষ্টায় চট্টগ্রামের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্তা সহজ করার জন্য গ্রামের পাশে ধরুং খালের উপর নির্মিত একটি ব্রিজ ৩০০মিটার দৈর্ঘ্য ও ৮.১মিটারের প্রস্থ একটা ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। তার ওই পাশে একটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ক্যাম্প রয়েছে।
উৎপন্ন দ্রব্য : মূলত আমাদের গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ কৃষি ফসল বিক্রি করে জীবিকা উপার্জন করে। তাছাড়া উৎপন্ন দ্রব্যের মধ্যে ধান, ডাল, আলু, মরিচ, সরিষা, ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সবজি প্রধান। জমি উর্বর হওয়ার দরুন ফলন ফলে আধুনিক টেকনোলজি থাকায় কৃষকেরা ভালো ফসল পেয়ে থাকে।গ্রামের কৃষকরা খুবই পরিশ্রমী বলে জমি কখনোই পতিত ফেলে রাখে না। বছর জুড়ে নানা সময়ে নানা ফসল ফলানো হয় ।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব:
- জনাব, মোহাম্মদঃ হাজী নবাব মিয়া (প্রতিষ্ঠাতা ডিপি পাড়া, মসজিদ ও ভূমি দাতা)
- জনাব, আলী মিয়া–মাতাব্বর (প্রতিষ্ঠাতা স্কুল, মাদ্রাসা ও ভূমি দাতা )
- জনাব, মোহাম্মদ আলী (সাংবাদিক, শিক্ষক, প্রতিষ্ঠাতা ও ভূমি দাতা)
- জনাব, হারুনর রশীদ (সাবেক জেলা ম্যাজিস্ট্রেট)
- জনাব, কবির আহমেদ (সাবেক ইউপি সদস্য)
- জনাব, খালেক আহমেদ (সাবেক ইউপি সদস্য)
- জনাব, নূরুল আমিন (মাতাব্বর)
- জনাব, আকতার হোসেন (শিক্ষক)
- জনাব, সাইফুল ইসলাম (সেনা কর্মকর্তা)
গ্রামের আবহাওয়াঃ আমাদের গ্রামের আবহাওয়া খুব মলিন ও সুন্দর। বিন্দুমাত্র কোনো শব্দদূষণ নেই। তাছাড়া গ্রামের মানুষ নিরীহ ও প্রকৃতি প্রিয়।গরম ঠান্ডা উভয় ঋতুতে গ্রাম ভিন্ন ভিন্ন রূপে পরিণত হয়।
উপসংহারঃ আমাদের গ্রাম আমাদের জেলার মধ্যে একটি আদর্শ গ্রাম।আমাদের গ্রাম দিন দিন উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ার ফলে সবাই পড়াশুনার দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং অনেক ছেলে মেয়েরা বাহিরে গিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের গ্রামের প্রতি গর্ব অনুভব করি এবং ভালোবাসি।
আরো পড়ুন>>গ্রাম ভিত্তিক ভোটার তালিকা খুঁজে নিন
আমাদের গ্রাম রচনা ৫ম থেকে ১০ম শ্রেণী
১০০টি বাংলাদেশ গ্রামের দৃশ্য ছবি