উদনাপাড়া গ্রাম নয়ানগর ইউনিয়ন

নয়ানগর

উদনাপাড়া গ্রাম নয়ানগর ইউনিয়ন

image

আমার গ্রাম যে জন দেখিতো গ্রাম বাংলার রূপ হইতো মোহিত,

বাংলা-ই মা সবার সেজন কহিত

গ্রাম মানেই শান্তির ঠিকানা।যা কবিদের কবিতায় বিশেষভাবে স্থান করে নিয়েছে।বিশ্বকবি থেকে শুরু করে জাতীয় কবি,পল্লীকবি,সাহিত্যসম্রাট সহ সকল কবিদের কবিতার একটি প্রধান অংশ এই গ্রামকে নিয়ে, গ্রাম বাংলাকে নিয়ে।বারবার কবিরা পড়েছেন এই গ্রাম বাংলার প্রেমে।শুধু কবিরা নয়,সাধারণ মানুষ,নিম্নবিত্ত,মধ্যবিত্ত,উচ্চবিত্ত সকল শ্রেণির পেশার মানুষের কাছে গ্রাম মানে স্বস্তি,একটু আরামের জায়গা,একটু প্রশান্তির জায়গা,একটু ভালোলাগা এবং ভালোবাসার জায়গা। আমার গ্রামও আমার কাছে তেমনই।

গ্রামের নাম ও অবস্থানঃ

গ্রামের নাম উদনাপাড়া(নয়াপাড়া)।৫ নং নয়ানগর ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ড।অতিব রহস্যময় এই গ্রামটি বাংলাদেশের ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানার (উপজেলার) ৫ নং নয়ানগর ইউনিয়ন পরিষদের বহুল পরিচিত মালঞ্চ এলাকার সন্নিকটে একটি শান্তিপূর্ণ গ্রাম।এই গ্রামের ইংরেজি নামটি লেখা হয় UDNAPARA(NOYAPARA)।গ্রামটি জামালপুর জেলা থেকে মেলান্দহগামী রোডে ১৩ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এবং মেলান্দহ থানা থেকে ৪ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।গ্রামটির পোস্ট অফিস ( ডাকঘর)- মালঞ্চ (২০১২)।

গ্রামের সৌন্দর্যঃ

‘আমাদের ছোট গ্রাম মায়ের সমান,

আলো দিয়ে, বায়ু দিয়ে বাঁচাইয়াছে প্রাণ।

মাঠ ভরা ধান তার জল ভরা দিঘি,

চাঁদের কিরণ লেগে করে ঝিকিমিকি।’

বন্দে আলী মিয়ার কবিতায় যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে এদেশের গ্রামের হৃদয় ভোলানো রুপ। গ্রাম মানেই সবুজ-শ্যামল, শান্ত, ছায়াঘেরা, মনোরম এক জনপদ। দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ, টইটুম্বুর খাল-বিল! গ্রাম মানেই পাখিদের কোলাহল, ঝিঁঝির ডাক আর জোনাকির স্বপ্নীল ওড়াউড়ি।

গ্রামের জীবনযাত্রা গ্রামের সৌন্দর্যেরই অংশ।গ্রাম ঋতুর পরিবর্তনে যেন নতুন সাজে আগমন করে নতুন ভাবে।

কখনো আনন্দের বার্তা নিয়ে  নামে শরতের বৃষ্টি। চারপাশের শুভ্রতার মাঝে বৃষ্টি হৃদয় মনকে করে তোলে প্রফুল্ল। বৃষ্টি শেষে দিগন্তজুড়ে রংধনু মনের মাঝেও যেন আঁকিয়ে দেয় রং। নরম রোদের সকাল, রঙমাখানো সূর্যাস্ত, রাতের স্বচ্ছ আকাশে চাঁদ কিংবা লাখো নক্ষত্র শরতের সৌন্দর্যকে করে তোলে অপার্থিব। শরতের রুপে মুগ্ধ হয়ে নজরুল লিখেছেন,

‘সই পাতালো কি শরতে আজিকে স্নিগ্ধ আকাশ ধরনী?

নীলিমা বাহিয়া সওগাত নিয়া নামিছে মেঘের তরনী!’

হেমন্তে আবার গ্রাম পাল্টে যায় অন্যরকম আবহে। নির্মল প্রকৃতি আর দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে পাকা ধানের উপর সূর্যের কিরণে চারপাশে বিচরণ করে সোনালী আভা। কালের বিবর্তনে দিগন্তজোড়া মাঠ হারিয়ে গেলেও গ্রামের পথে প্রান্তরে হেমন্তের সৌন্দর্যে ভাটা পড়েনি আজও। পাতাঝরার এ ঋতুতে ফোটে নানা রকম ফুল। নবান্ন উৎসবের সাথে পিঠা পায়েস আর খাল-বিলের হাঁটুপানিতে দেখা যায় মাছ ধরার উৎসব। মাঠজুড়ে পাকা ধানের সোনালী রূপ সৃষ্টি করে হৃদয় ভুলানো আবহের।

শীতে হেমন্তের সাজ খুলে ফেলে গ্রামগুলো ঢেকে যায় কুয়াশার চাঁদরে। সেই কুয়াশা ভেদ করে সকালের সোনালী রোদ যখন গ্রামে উঁকি দেয়, তখন দেখা মেলে ভিন্নরকম এক সৌন্দর্যের পশরা। মাঠ জুড়ে হলুদ সরিষাফুল, বিভিন্ন রকম শাক-সবজির বিপুল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ সমারোহ শীতের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে বহুগুণ। পল্লীকবির ভাষায়,

‘ঘুম হতে আজ জেগেই দেখি শিশির-ঝরা ঘাসে

সারা রাতের স্বপন আমার মিঠেল রোদে হাসে।’ 

তবে গ্রামের রুপ সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে বর্ষায়। চারদিকে থৈ থৈ পানিতে গ্রাম যেন ভেসে থাকে। সে এক অপরুপ দৃশ্য। রিমঝিম বৃষ্টি আর মেঘ বাদলের লুকোচুরিতে প্রাণ ফিরে পায় প্রকৃতি।ব্যঙের ডাকও কেমন যেন বর্ষা বর্ষা ভাবে এনে দেয় মনে। ডালে ডালে ফোটে দৃষ্টিনন্দন কদম। বৃষ্টি ও বন্যায় ঝকঝকে প্রকৃতির সৌন্দর্যকে এড়িয়ে যাওয়ার সাধ্য আছে কার? গ্রামের আনাচে কানাচে সৌন্দর্যের পশরা সাজিয়ে আছে প্রকৃতি।

তবে গ্রামগুলো সবচেয়ে সুন্দর রূপে সাজে বসন্তে। গাছে গাছে নতুন পাতার আগমনে প্রকৃতি সাজে নবরূপে। ফুলে ফুলে চারপাশ হয়ে ওঠে বর্ণীল। গ্রামের ঝোঁপে ঝাড়ে বসন্ত আনে প্রাণের দোলা।

গ্রামের সীমানাঃ

গ্রামটির সীমান্তবর্তী মোট এলাকার সংখ্যা ৭ টি। এর থেকেই বুঝা যায় গ্রামটির আয়তন মোটামুটি অনেকখানি বড়।গ্রামটির পশ্চিমের সীমান্তবর্তী গ্রাম বাঘাডোবা। গ্রামটির দক্ষিণ-পশ্চিমে মালঞ্চ গ্রাম।গ্রামটির সর্বদক্ষিণে বজরদ্দীপাড়া গ্রাম এবং দক্ষিণ ও  পূর্ব-দক্ষিণে মামাভাগীনা গ্রাম।গ্রামটির পূর্বদিকের গ্রাম হলো বানিপাকুরিয়া।উত্তর দিকের গ্রামটি হলো বুরুংগা।এবং সর্বশেষ উত্তর-পশ্চিমের গ্রামটি হলো গাংপাড়া।

গ্রামে প্রবেশের মুখঃ

উদনাপাড়া গ্রামে প্রবেশ করতে চাইলে পাকা রাস্তা হয়ে আপনি তিন দিক দিয়ে গ্রামে পৌঁছাতে পারবেন।

প্রথমতঃ– জামালপুর – মেলান্দহ বা মেলান্দহ – জামালপুর রোড সংলগ্ন গোবিন্দগঞ্জ বাজার থেকে শুরু করে পূর্বদিকের সোজা রাস্তা বরাবর ১ কিলোমিটার এর বেশি পর্যন্ত পুরোটাই উদনাপাড়া গ্রাম।অবশ্য গোবিন্দগঞ্জ বাজারটি ই হলো উদনাপাড়া সমাজের সর্ব পশ্চিমের জায়গা।

দ্বিতীয়তঃউদনাপাড়া বা নয়াপাড়া সমাজের সর্ব পূর্বের এলাকা বানিপাকুরিয়া থেকে শুরু করে পশ্চিম দিকের সোজা রাস্তা বরাবর (১ কিলোমিটারের বেশি) গোবিন্দগঞ্জ বাজার অভিমুখী পথ।

তৃতীয়তঃ- সর্বোত্তরের গ্রাম বুরুঙ্গা থেকে দক্ষিণ দিকের একমাত্র রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করলেই উদনাপাড়া গ্রামটির মেইন পয়েন্টে আসা সম্ভব।

গ্রামের লোকসংখ্যাঃ

উদনাপাড়া বা নয়াপাড়া গ্রামটিতে সর্বমোট প্রায় ১৩০০ জন লোক বা জনগণ বসবাস করে।সবচেয়ে আনন্দের কথা হলো এই গ্রামে ১০০% (শতভাগ) মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী।এই গ্রামে পুরুষের সংখ্যা নারীর থেকে বেশি।গ্রামে শিশু-কিশোরদের(অর্থাৎ অনুর্ধ্ব ১৭) এবং বয়স্কদের-ই বেশি লক্ষ করা যায়।কেননা যুবকেরা অনেকেই চাকরীর জন্য বা পড়াশোনার জন্য শহরে অবস্থান করে।গ্রামের সবচেয়ে বড় পরিবারে লোকসংখ্যা আছে ১৬ জন।এবং সর্বনিম্ন আছে ২ জন।বয়স্কদের মধ্যে চিরকুমারদের সংখ্যা-ও লক্ষণীয়।গ্রামের কিছু পরিবারে তাদের ঘরে কোনো সন্তান-সন্ততি নেই। এখানে মানুষের গড় আয়ু ৬০-৬৫ বছর।সাধারণত স্ত্রীরা পুরুষের থেকে বেশিদিন বাঁচে।

সমাজের মানুষঃ

এক কথায় বলতে গেলে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি গ্রামের মানুষ সাধারণত সহজ-সরল হয়ে থাকে। এই গ্রামের মানুষরা-ও খুবি সহজ-সরল এবং আটাশে।তারা জানে না মানুষকে কিভাবে ঠকাতে হয়।যেন সবাই সবার আত্নীয়।তবে কিছু তো ব্যতিক্রম সব জায়গায় থাকবেই। এখানকার মানুষের মধ্যে ভ্রাত্যিত্ববোধ যেন আজীবনের সঙ্গী।এই গ্রামের মানুষেরা সাধারণত রসিকতা প্রিয়।মুরুব্বীরা তাদের নাতি-নাতনিদের সাথে প্রচন্ড রকমের মজা করে বা ফাজলামি করে- যা সমাজকে যেনো উৎফুল্ল করে রেখেছে।পড়াশোনা না জানা ছেলেটিও নানারকম ছন্দের মত করে কথা বলা,সবার সাথে মিশে চলার মনোভাব এবং নতুন নতুন মজার তথ্য বা কথা আবিষ্কার যেনো তাদের নেশা।এ গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক লোকের বয়স ১১০+ । গ্রামের মানুষেরা অনেকাংশে কর্মঠ।শুধু ছাত্র বা যুবকেরা একটু অলস।তা ছাড়াও অনেক সন্তান তার পিতা-মাতার সাংসারিক কাজে সহযোগিতা করে থাকে।

গ্রামের পরিবেশ ও প্রকৃতিঃ

আমাদের গ্রামের চারপাশ যেনো সবুজে সবুজাভ হয়ে আছে।এই গ্রাম বাংলার সবুজ রুপ দেখে সত্যিই মনে হয় কবিরা কেনো গ্রাম বাংলাকে সোনার বাংলা বলতে চেয়েছেন।গ্রাম দেখলে রবীন্দ্রনাথের সেই গানটি মনে বাজতে থাকে–

‘এমন দেশটি কোথাও খুজে পাবে না কো তুমি,

সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি। ‘

প্রকৃতির ডাকে গ্রাম কখনো বৃষ্টির সময় নীরব মনে হয়।আবার কখনও গ্রীষ্মের সময় দয়াহীন মনে হয়।আশেপাশে কোন নদী-নালা না থাকায় শরতের কাশফুল দেখা না গেলেও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। 

 তবে শীতকালে নানান পিঠার বাহারের জন্য আমাদের গ্রাম তথা পুরো জামালপুর বিখ্যাত এবং প্রশংসার দাবী রাখে।শীতকালেই ফসলের মাঠে যেনো হলুদ নেমে আসে।ধান পাকার হলুদের রঙের পর-ই সরষে ফুলের হলুদের মেলা বসে।যা চলতে থাকে সরিষা ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত।গ্রামের পরিবেশ অত্যন্ত নিরব এবং দূষণমুক্ত।তবে রাস্তাতে মাহিন্ড্রা চললে রাস্তা ধূলিময় হয়ে যায়।এখানে বছরে দুইবার ধান লাগানো ও কাটা হয়।তাছাড়াও মরিচের গাছ,আলুর গাছ,পেয়াজ,রসুন,বেগুন,শশা,শীতকালীন ফলসহ প্রায় অনেক ধরণের সবজি এবং কাঁচা তরকারির চাষ হয়।এগুলো নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বাজারজাতকরণের জন্যও নির্ধারণ করা হয়।

গ্রামের ইতিহাস,ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিঃ

শুনা যায়,এই গ্রামের আদি বাসিন্দা হিসেবে ২ টি বংশ স্থানীয়। তারা হলো ফকির বাড়ি এবং বিপদ বাড়ি।কালের পরিবর্তনে আরো ৮-১০ টি বংশ এশে মিশে গেছে এলাকার রক্তে।এই কথা শুধুমাত্র ৭০ দশকের লোকেরাই জানে।এখনো অনেকে এই সম্পর্কে বর্তমান সময়ের বাসিন্দারা জানেন না।

গ্রামটির নাম উদনাপাড়া এবং নয়াপাড়া নিয়ে একটা ঘটনা হলো- মানুষের মুখে নয়াপাড়া এলাকার নামটিই বেশি শুনা যায়।তবে এখন এটিকে নিক নাম ধরা হয়।শিক্ষাগত সকল বিষয়ে এলাকার নাম উদনাপাড়া। এই গ্রামটি কত সালে উদ্ভব হয়ছে তা সবারই অজানা।এই গ্রামের বংশগুলো আলাদাভাবে কয়েকটি ঘর বা পরিবার নিয়ে গঠিত।এটার মানে একটা বংশের আবাসের পর কিছু অংশ (জমি বা ভুমি) পর পর দূরত্ব রেখে একেকটি গোষ্ঠী বা বংশ স্থান দখল করে নিয়েছে। কিছু পরিচিত বংশের নাম হলো ফকির বাড়ি,মোল্লা বাড়ি,হাতু বাড়ি,বিপদ বাড়ি,বড় বাড়ি,ফইটক্যার বাড়ি,সাহেব বাড়িসহ আরো কিছু ক্ষুদ্র বংশ আছে।সততার পথে হেঁটে চলার গৌরব আছে এই গ্রামের।

এই গ্রামে ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্ম না থাকায় ইসলামিক নীতি মেনে-ই পালন করা হয় এখানকার সুস্থ সংস্কৃতি।এখানে দুই ঈদ ব্যতীত অন্য কোনো নির্দিষ্ট দিনকে কেন্দ্র করে কোনো উৎসব পালন হয় না।গ্রামের মান-সম্মান ক্ষুন্ন হয় এমন কোনো কাজ এই গ্রামের সচেতন নাগরিকরা করে না।আশেপাশের গ্রামে আমাদের গ্রামের সুনামের বহার শুনা যায়।ঠিক তখন সত্যি বুকটা ভরে যায়।

এই গ্রামে যা লক্ষণীয়ঃ

প্রথমেই বলতে গেলে একটা গ্রামের জন্য যা যা থাকা আবশ্যক তার প্রায় অনেকটুকুই আছে।এই গ্রামের কেন্দ্রীয় অংশ হিসেবে ১৮ নং উদনাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কে ধরা হয়।

উদনাপাড়া গ্রামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে।এখানে প্রায় ১৫০+ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে।বিদ্যালয় মাঠে বর্তমানে শহীদ মিনারও স্থাপিত হয়েছে।একটি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ,একটি পাঞ্জেগানা মসজিদ,বাজার সংলগ্ন জামে মসজিদ এবং একটি নূরানী মাদরাসা রয়েছে।কয়েকটি সামাজিক সংগঠন যেমন উদনাপাড়া নেপচুন যুব উন্নয়ন সংগঠন,উদনাপাড়া গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিঃ।

এছাড়াও উদনাপাড়া  আদর্শ সংগঠন, প্রত্যাশা ফাউন্ডেশনসহ আরও কিছু ক্ষুদ্র সংগঠন রয়েছে। এই গ্রামের একজন উচ্চমানের ডাক্তার রয়েছে।যিনি গ্রামের সার্বিক সহায়তার কথা চিন্তা করেন।একজন সান লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানীর জেলা পর্যায়ের উর্ধতন কর্মকর্তা আছেন।গ্রামের প্রধান সড়ক বরাবর চারটি দোকান রয়েছে যেগুলো খুবই কাছাকাছি এবং সবগুলোই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পশ্চিম দিকে।তার সাথে আউটসাইডে আরো ৪টি দোকান রয়েছে। 

গ্রামের একটি বাজার আছে-যার নাম গোবিন্দগঞ্জ বাজার। এ বাজারে প্রায় প্রয়োজনীয় সকল দোকান রয়েছে। যার সংখ্যা প্রায় ৪০ টি।এই বাজার থেকেই যেকোনো স্থানে যাওয়ার জন্য বাস সার্ভিস পাওয়া যায়। গ্রামটিতে ছোট ছোট অনেকটি পুকুর রয়েছে।সেখানেই সাধারণত গ্রামের মানুষেরা গোসল করে এবং বাচ্চা ও যুবকেরা খেলাধুলা করে।একটি তোলার মেশিন রয়েছে যা দিয়ে ল্যাপ,বালিশ ইত্যাদি বানানো হয়।৪ নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার এই গ্রামেরই মো.আঃ জব্বার মন্ডল।

গ্রামের অংশবিশেষঃ

গ্রামের কয়েকটি ঘরবাড়ি নিয়েই একটি নির্দিষ্ট নাম রয়েছে।যেমন পূর্বের দিকে আছে হাতু বাড়ি,মোল্লা বাড়ি,ফকির বাড়ি,আরও এক মোল্লা বাড়ি এবং মন্ডল বাড়ি। মাঝ অংশে রয়েছে ফইটকার বাড়ি,বড় বাড়ি,বিপদ বাড়ি।উত্তরে রয়েছে আরও এক ফকির বাড়ি এবং বুরুঙ্গা গ্রাম সংলগ্ন বাড়ি।এবং পশ্চিম দিকে আছে পশ্চিম পাড়া।বাজার সংলগ্ন আছে সাহেব বাড়ি।

এই গ্রামে যা অনন্যঃ

এই গ্রামে এমন একটি রীতি আছে যা পৃথিবীর আর কোথাও আছে বলে জানা নেই।চলুন দেখি তাহলে কি সেই রীতি? এই গ্রামে বছরের দুই বার ঈদ-ই অনেক আনন্দঘন অনুষ্ঠানে হয়ে থাকে।তার মধ্যে যেই বিষয়টি নজর কাটে সেটি হলো ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ।ধর্মপ্রাণ মুসলমান সম্প্রদায় ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করে সকলে তাদের কুরবানির পশুগুলোকে উদনাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ প্রাঙ্গণে আনে।তারপর ইমাম সাহেব প্রত্যেকটি পশুকে একে একে জবাই দেন আল্লাহর নামে।

এ যেন দেখতে এক আশ্চর্য মুহূর্ত। প্রত্যেক বছর এই কুরবানি দেখলেও এইটা দেখার মজা শেষ হয় না।একটা হইচইপূর্ণ পরিবেশ,সকলের মুখে হাসি যেন হৃদয় কেড়ে নেয়।তারপর এগুলো এখানেই কাটাকাটি ভাগাভাগি হয়।এক অংশ(যেটা সমাজের লোকের জন্য) সেটা একটি শ্রেণিকক্ষে সমাজের মাথাপিছু হিসেবে ভাগ করেন মোট গোস্তের পরিমাণ থেকে।তারপর দুপুরে খাসি এবং ভেড়ার গোস্ত বিতরণ করা হয় এবং রাতে গরুর গোস্ত বিতরণ হয়।সবাই একসাথে গোস্ত নিতে এসে আড্ডা দেওয়া এবং একটু হাসাহাসি,একটু মিলন যেন প্রত্যেকবার কোরবানির ঈদের জন্য অপেক্ষা করে। এখানে অনেক মানুষ আছেন যারা খুব ভালো মাছ শিকার করতে পারেন।যেটা অনেকটাই অবাক করার মতো।

আর একটা অনন্য বিষয় হচ্ছে এখানকার যুব সমাজ।তারা আড্ডা তে বসলে বা আপনি যোগদান করলে আপনি উঠে যেতে চাইবেন না।কারণ এরা আসর জমাতে অনন্য। কথার মোড় কখন পাল্টে কোন দিকে চলে গেছে আপনি বুঝতেই পারবেন না।কথা বলার বাচন ভঙ্গি, ছন্দময়,কৌতুকসম কথা বার্তা শুনলে অবাক হবেন।আপনার মন খারাপ কে ভালো করতে ১০ টা মিনিট-ই যথেষ্ট। আপনি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাবেন।এখানে অনেকের ট্যালেন্ট অনেকটাই অবাক করার মত।কেউ আপনাকে বোকার মত কথা বলে হাসাবে আবার কেউ বেশি চালাকি করে। এই সমাজের বুড়োরাও অনেক রসিক মানুষ।এ যেন এক প্রাণোচ্ছল গ্রাম।

সমাজের নেতিবাচক কিছুঃ

সমাজের কিছু অবাস্তব বিষয় আছে যা কখনোই কাম্য নয়।তার কিছু উল্লেখ করা হলো-

প্রথমত– ১৫ বছরের উর্ধ্বে যাদের বয়স তাদের প্রায় ৭৫% পুরুষেরা ধূমপানে আসক্ত।কয়েকজন আবার অন্যান্য নেশার স্বাদ-ও নিয়ে থাকে।

দ্বিতীয়ত– আপনাকে হাসানোর জন্য বা অন্যের ভালো দেখতে না পেরে বা নিজেকে বড় করতে বা স্বার্থ হাসিল করার জন্য প্রচন্ড পরিমাণে গীবত বা চোগলখোরি করে থাকে।

তৃতীয়ত- সামান্য পরিমাণ লাভের জন্য আপনাকে অপমানিত বা বেইমানি করতে কিছু লোক দ্বিধা করবে না।

চতুর্থ- এখানে শিক্ষিতের হার ৬০%+.যার জন্য অনেক নিরক্ষর লোকেরা শিক্ষার অভাবে ভালো টা জানে না।বুঝতেও চায় না কিছু সংখ্যক মানুষ। কিছু লোকের মুখের ভাষা প্রচন্ড খারাপ।যে কারো সামনে বলতেও লজ্জাবোধ করে না কিছু নামধারী শিক্ষিত এবং অশিক্ষিতরা।

৫ম-অনেকে শুধু খেলাধূলাতে নিমগ্ন থাকে বেশি অর্থাৎ যারা শখটাকে প্রধান কাজ হিসেবে ধরে নিয়েছে।

৬ষ্ঠ-এখানের মানুষেরা সমাজ বা রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধ হতে চায় না।নিজের স্বার্থে ব্যস্ত।

৭ম-সমাজের নারীরা অনেকটাই পর্দাহীন চলাচল করে।

৮ম- নারীদের বাল্য বিবাহের হার প্রায় ৮৫% এর অধিক।

৯ম- কুসংস্কার এ অনেকটাই ভরপুর। যেগুলো অনেক শিক্ষিতদের মধ্যেও দেখা যায়।

১০ম- মুরুব্বিদের শ্রদ্ধা এবং ছোটদের স্নেহ অনেকেই করে না।

১১শ- যেসব গরীবেরা হঠাৎ করেই একটু টাকাওয়ালা হয়ে যায় তাদের অহংকারের যেন সীমা থাকে না।

১২শ-  বাবা-মার সাথে অনেকেই খারাপ ব্যবহার করে থাকে।

১৩শ- নতুন বয়সে বা বয়ঃসন্ধিতে নিজেদের ধরে রাখতে না পেরে বিপথগামী হয়ে যায় অনেক কিশোর।

১৪শ- মোবাইল ফোনে ফেসবুকিং বা অযথা টাইম ব্যয় করা এবং বিভিন্ন গেমসে নিজেকে আসক্ত করছে যুব সমাজ।যদিও এটা দরকারী। কিন্তু এটার তারা ইতিবাচকটা নিচ্ছে না।

১৫শ- আপনি সঠিক বিচার কোনো কোনো ক্ষেত্রে না পাওয়ার সম্ভাবনা-ই বেশি।

এমন আরও অনেক কিছু আছে।যেখানে সমাজের লোকেরা ভালোটা প্রতিষ্ঠিত করতে এখনো ব্যর্থ।

নারী-পুরুষের প্রধান কাজঃ

পুরুষেরাই এ সমাজের সর্বত্র প্রধান।পুরুষেরা অধিকাংশ বর্তমানে এক্সকেভেটর সহ এ সেক্টরের  গাড়ীর ড্রাইভার হওয়াতে মগ্ন।কারন এতে প্রায় ৩০-৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসে ইনকাম সম্ভব হচ্ছে।তাছাও সরকারি, বেসরকারি,নিজের প্রজেক্ট এবং আরো অন্যান্য কাজে নিয়োজিত।নারীরা গৃহিণীর পাশাপাশি হাল্কা হাল্কা সেলাই সহ আরো কিছু কাজ করে থাকে। 

গ্রাম সম্পর্কিত শেষ কথাঃ

মুক্ত আকাশে ডানা মেলে ঘুরে বেড়ায় শালিক, ময়না, টিয়া, মাছরাঙ্গা, বক, কাঠঠোকড়া,  প্রজাতির পাখি। আম, জাম, কাঠাল, লিচু, জাম, করমচা, নারিকেল, সুপারি তাল সহ অসংখ্য প্রজাতির গাছ আর লতাপাতার নিবিড় ঘনিষ্ঠতা গ্রামগুলোর মোহনীয়তাকে পরিপূর্ণতা দিয়ে রেখেছে। গ্রামের বাঁশঝাড় কিংবা বটের ছায়ায় বসে পাখির কিচির-মিচিরের সাথে একটি লগ্ন আপনার হৃদয়কে হাজার বছর বাঁচার জন্য আগ্রহী করে তোলার জন্য যথেষ্ট।

গ্রাম মানেই উচ্ছল, দুরন্তপনা আর মাটির সুবাস।

বাংলাদেশে গ্রাম পর্যটনের কোনো কার্যকর ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়নি এখনো। যার ফলে দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যাচ্ছে গ্রামের অপূর্ব সৌন্দর্য আর জীবন বৈচিত্র। নগরায়নের প্রভাবে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। হারিয়ে যাচ্ছে সৌন্দর্য। তারপরেও সকল প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে টিকে থাকা গ্রামীণ সৌন্দর্যকে আমরা চাইলেই উপভোগ করতে পারি। নিশ্চিন্তে হারিয়ে যেতে পারি প্রকৃতির কোলে। গ্রামগুলো বেঁচে থাকুক তার আপন মহিমায়। অতুলনীয় সৌন্দর্য, বৈচিত্র আর ঐতিহ্যগুলোও টিকে থাকুক প্রজন্মের অহংকার হয়ে।

সরকারি হিসাবে বাংলাদেশের গ্রামের সংখ্যা প্রায় সত্তর হাজারের মতো। সবচেয়ে বড় গ্রাম সিলেটের হবিগঞ্জের বানিয়াচং ও সবচেয়ে ছোট গ্রাম তিলইন। তিলইন গ্রামের অবস্থান কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বেলঘর ইউনিয়নে। সবচেয়ে ছোট এই গ্রামে লোকসংখ্যা মাত্র ৩৮ জন। অপরদিকে ১২০টি পাড়া ও ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সবচেয়ে বড় গ্রাম বানিয়াচংয়ে বাস করেন ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ। বলা হয়ে থাকে, শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গ্রাম ও ছোটগ্রামও বানিয়াচং ও তিলইন।এই বড় এবং ছোট গ্রামের মধ্যে পার্থক্য নেই।

সব গ্রাম যেন সুন্দর।আমার গ্রাম ততটা বড় বা ছোট না হলেও এতসব সমস্যা থাকার পরও যেন এক অন্য রকম শান্তি।তা শুধু বুঝা যায় যখন গ্রাম ছেড়ে দূরে কোথাও বা শহরের ভীড়ে থাকি।গ্রামের মায়া কেনো যানি শুধু পিছু টানে।তখন মুখ ফুটে না বললেও মন ঠিকি বলে উঠে ভালোবাসি আমার প্রিয় সুন্দর উদনাপাড়া গ্রামকে।শুধুমাত্র প্রয়োজনের তাগিদে থাকতে হয়।আর এটাই যেন বুঝিয়ে দেয় যে-হুম আমি না বললেও গ্রামকে খুব ভালোবাসি।

হে নূতন, এসো তুমি সম্পূর্ণ গগন পূর্ণ করি পুঞ্জ পুঞ্জ রূপে– ব্যাপ্ত করি, লুপ্ত করি, স্তরে স্তরে স্তবকে স্তবকে ঘনঘোরস্তূপে। কোথা হতে আচম্বিতে মুহূর্তেকে দিক্‌ দিগন্তর করি অন্তরাল স্নিগ্ধ কৃষ্ণ ভয়ংকর তোমার সঘন অন্ধকারে রহো ক্ষণকাল।

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আবারও মনে পড়ে সেই জীবনানন্দের কবিতার চরণ–

‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে সবচেয়ে 

সুন্দর ও করূণ।’

শেষে আবারও বলছি ভালোবাসি প্রিয় গ্রাম উদনাপাড়া। 

কুয়াশার চাদর বিছায়েছে দেখ কচি ঘাসের আগায়,

আহ! ফুলের আঘাতে গলে গেল শিশির ব্যথায় ।(মোঃরাব্বি ফকির)

প্রয়োজনীয় মোবাইল নাম্বারঃ

০১৮১৮-৮০৯৭৭৩ (আজিজুল ডাক্তার)

এলাকার সরকারি ডাক্তার।

গ্রাম সম্পর্কিত যেকোনো কিছু জানার জন্য নিচের ফেসবুক লিংকে যোগাযোগ করতে পারেন—

https://www.facebook.com/amar.shopno.127201