মানিক পাড়া গ্রাম দরবস্ত ইউনিয়ন
সিলেট জেলাধীন জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের ০৫ নং ওয়ার্ড'র অন্তর্গত ঐতিহ্যবাহী মানিক পাড়া গ্রাম। দরবস্ত বাজার থেকে ০৪ কিঃমিঃ পূর্বে দরবস্ত- কানাঈঘাট রাস্তার দক্ষিণ পাশে অবস্থিত মানিক পাড়া গ্রাম। এই গ্রামের মোট আয়তন হচ্ছে ২.৫০ বর্গ কিলোমিটার। গ্রামের দক্ষিণে অবস্থিত মহাইল গ্রাম, উত্তরে অবস্থিত কুড়গ্রাম ও ছৈয়া গ্রাম।
মানিক পাড়া গ্রামে চারটি মসজিদ (মানিক পাড়া পূর্ব জামে মসজিদ, উত্তর জামে মসজিদ, দক্ষিণ জামে মসজিদ ও এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব মাওঃ শামসুল হক শিকদার প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাঞ্জেগানা মসজিদ), একটি শাহী ঈদগাহ, একটি প্রাইমারি ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক পর্যায়ের কওমি-হাফেজী মাদ্রাসা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিষ্ঠিত একটি দারুল আরকাম মাদ্রাসা রয়েছে। প্রায় দেড় সহস্রাধিক জনসংখ্যার মানিক পাড়া গ্রামে স্বাক্ষরতার হার ১০০%। অর্ধ শতাধিক আলেম-উলামা ও হাফেজ সহ নারী শিক্ষায় অগ্রগণ্য মানিক পাড়া গ্রামে শতভাগ মুসলিম ধর্মপ্রাণ মানুষদের বাস।
বাল্য বিয়ে মুক্ত এই গ্রামে শিক্ষার হার, উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিত্ব, সরকারি/বেসরকারি চাকরিজীবী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রথিতযশা আলেম-উলামা ও বিভিন্ন উচ্চ পেশাজীবি সুনামধন্য মানুষের দিক দিয়ে সিলেট জেলার অন্যতম এক উচ্চতায় এই গ্রাম। শিক্ষা-দীক্ষা, সামাজিক- নৈতিক কাঠামো ও এলাকায় প্রভাব প্রতিপত্তির দিক দিয়ে এবং সকল প্রকার অপসংস্কৃতির চর্চা ও অসামাজিক কার্যকলাপ মুক্ত মানিক পাড়া গ্রামকে উপজেলার সচেতন মহল একটি আদর্শ গ্রাম হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।
মানিক পাড়া গ্রামের ইতিহাস ও জনশ্রুতি থেকে জানা যায় যে, ১৫ শতকের গোড়ার দিকে জৈন্তিয়া রাজ্যে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে সুদূর আরব থেকে আগত অভিজাত শেখ পরিবারের সন্তান “মানিক” (পরবর্তীতে তৎকালীন জৈন্তিয়া রাজ্যের রাজা কর্তৃক শিকদার ও লস্কর উপাধিপ্রাপ্ত) জৈন্তিয়া রাজ্যের খরিল পরগনা’র এক মনোরম পরিবেশ সমৃদ্ধ স্থানে তাঁর পরিবার/সন্তানাদি নিয়ে বসতি স্থাপন করেন। এবং এখান থেকেই তিনি দ্বীন ইসলামের দাওয়াতি কাজ সহ বিভিন্ন সমাজ সংস্কারমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করেন। এছাড়া তিনি একজন উচ্চ পর্যায়ের দানবীর ছিলেন। তাঁর বিশাল সম্পত্তির অধিকাংশই ব্যয় করেন আর্তমানবতার সেবায়। [এখানে উল্লেখ্য যে, তৎকালীন জৈন্তিয়া রাজা তাঁর রাজ্যে যে ক’জন মহান মানুষকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা – সম্মান ও সমীহ করতেন শেখ মানিক শিকদার তাদের মধ্যে অন্যতম।] আর মানিক শিকদার স্থাপিত এই বসতি পরবর্তীতে তাঁর নামেই (মানিক পাড়া হিসেবে) খ্যাত হয়।
এককথায়, শেখ মানিক শিকদার / লস্কর’র নামানুসারেই এই মানিক পাড়া গ্রামের নামকরণ করা হয়।
বর্তমানে তাঁর উত্তরাধিকারী প্রজন্ম (প্রখ্যাত শিক্ষক, ইসলামী উত্তরাধিকার নীতি/ফারায়েজ শাস্ত্র বিশেষজ্ঞ ও এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধেয় সালিশ ব্যক্তিত্ব মাওঃ শামসুল হক শিকদার গং যারা গ্রামে/এলাকায় বড়গুরো বা বড়গুষ্ঠী হিসেবে পরিচিত) সহ পরবর্তীতে আগত মর্যাদাবান আরো কিছু গোত্রের লোক ভ্রাতৃপ্রতিম সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি নিয়ে মানিক পাড়া গ্রামে সুনামের সহিত বসবাস করছেন।
বর্তমানে উল্লেখযোগ্য এলাকায় সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই গ্রামের কিছু কৃতী সন্তান রয়েছেন।
যথা…. (জ্যেষ্ঠ্যতা ও মর্যাদা অনুযায়ী ক্রম নয়),
*মাওঃ হাবিবুর রহমান শিকদার, বৃহত্তর জৈন্তাপুর এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব, সম্মানিত ইমাম -শিক্ষক ও সমাজকর্মী ।
*মাওঃ শামসুল হক শিকদার। প্রখ্যাত ইসলামি উত্তরাধিকার নীতি/ফারায়েজ শাস্ত্র বিশেষজ্ঞ, সর্বজন শ্রদ্ধেয় সালিশ ব্যক্তিত্ব, বিশিষ্ট শিক্ষক ও সমাজকর্মী।
*মাওঃ মোদাসসির আহমদ শিকদার , সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব, সম্মানিত ঈমাম, শিক্ষক ও সমাজকর্মী ।
*মাওঃ শাব্বির আহমদ শিকদার, আরটি – বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
*মাওঃ রফিক আহমদ, বিশিষ্ট শিক্ষক ও সমাজকর্মী।
*মাস্টার আব্দুস শুকুর, বিশিষ্ট শিক্ষক ও সমাজকর্মী।
*বশির আহমদ, বিশিষ্ট সমাজকর্মী।
*মাওঃ রফিক আহমদ, বিশিষ্ট শিক্ষক ও দাওয়াতে তাবলীগী ব্যক্তিত্ব।
*ডাঃ জমির উদ্দিন, পল্লী চিকিৎসক ও সমাজকর্মী।
*মাওঃ আব্দুল মাজিদ, বিশিষ্ট শিক্ষক ও সমাজকর্মী।
এছাড়াও উল্লেখযোগ্য আরো অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব রয়েছেন।
আর প্রয়াত কৃতি সন্তানদের মধ্যে অন্যতম হলেন,
যথা…. (জ্যেষ্ঠ্যতা ও মর্যাদা অনুযায়ী ক্রম নয়),
*মৌলভী আব্বাস আলী শিকদার, প্রখ্যাত সমাজকর্মী ও বৃহত্তর জৈন্তিয়াপুরের একসময়কার সর্বজন শ্রদ্ধেয় শীর্ষ পর্যায়ের সালিশ ব্যক্তিত্ব।
*মুন্সি মসদ্দর আলী শিকদার, ঈমাম ও শিক্ষক এবং শারীরিক বল বিদ্যায়/ক্রীড়ায় পারদর্শী জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব।
*মাওঃ হুসাইন আহমদ (বড় হুজুর), প্রখ্যাত শিক্ষক ও সমাজকর্মী ।
*মাওঃ আকবর আলী শিকদার (ছোট হুজুর), প্রখ্যাত শিক্ষক ও সমাজকর্মী।
*মাওঃ ঈসমাইল আলী শিকদার, (মোহতামিম সাহেব হুজুর, প্রখ্যাত শিক্ষক ও সমাজকর্মী।
*মাওঃ ফয়জুর রহমান শিকদার, (মুহতামিম সাহেব হুজুর)। প্রখ্যাত শিক্ষক ও সমাজকর্মী।
*মাওঃ আব্দুস সাত্তার শিকদার, প্রখ্যাত শিক্ষক, শায়খুল হাদীস ও সমাজকর্মী। (খরিলের মুহাদ্দিস সাহেব হুজুর হিসেবে খ্যাত)।
*মুন্সি হাজী হরজান আলী শিকদার , বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও সমাজকর্মী।
*মাওঃ সনোহর আলী, বিশিষ্ট আলেম ও সমাজকর্মী।
*মৌলভী শামছুল হক, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব ও সমাজকর্মী।
*মৌলভী ইরফান আলী, শিক্ষক ও সমাজকর্মী।
*মাওঃ রশিদ আহমদ শিকদার , ইমাম। জৈন্তাপুরের ইমাম সাহেব হুজুর খ্যাত।
*মাস্টার খলিলুর রহমান শিকদার , বিশিষ্ট শিক্ষক ও সমাজকর্মী।
এছাড়াও আরো অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের জন্ম হয়েছে মানিক পাড়া গ্রামে। যাদের অবদান যুগ যুগ ধরে মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছে।
অতীত ঐতিহ্যকে ধারণ করে চলা এই গ্রাম বর্তমানেও এলাকার অন্যতম প্রভাবশালী ও মর্যাদাবান গ্রাম হিসেবে সামাজিক শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন সহ বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী কাজে অগ্রণী ভুমিকা পালন করছে |