ঈশানপুর গ্রাম বিপ্লোবেলঘরিয়া ইউনিয়ন
বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের নাটোর জেলার অন্তর্গত নলডাঙ্গা উপজেলার ৫নং ব্রিপ্লোবেলঘড়িয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে অবস্থিত আমাদের ছোট্ট গ্রাম ‘ঈশানপুর’। যার উত্তর দিকে রয়েছে রামসার কাজীপুর গ্রাম, দক্ষিণে রয়েছে সিংগা গ্রাম, পূর্ব ও পশ্চিম দিকে রয়েছে ছোট ছোট বিল। পূর্ব দিকের বিল পেরিয়ে রয়েছে কাঁশোবাড়িয়া গ্রাম এবং পশ্চিম দিকের বিল পেরিয়ে রয়েছে কানমারিয়া গ্রাম।
প্রায় ৬৫ টি পরিবারের ৩০০জন মানুষের বসবাস এই ছোট্ট গ্রামে। পূর্বে কিছু সনাতন ধর্মাবলম্বি মানুষ বাস করলেও বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে সবাই অন্যত্র চলে যায়। ফলে এই গ্রামের সবাই ইসলাম ধর্মাবলম্বি। ছোট্ট গ্রামের মাঝখানে একটি মসজিদ স্থাপিত হওয়ায় মনে হয় যেন মসজিদ কে কেন্দ্র করেই গ্রামটি গড়ে উঠেছে।
শীতের কুয়াশা ঢাকা ভরে গেছো মিয়ারা খেজুর আর তাল গাছ থেকে রসের হাঁড়ি পারে। গেছো মিয়াদের পদধ্বনিতে পাখিদের ঘুম ভাঙ্গে। ছোট ছোট বচ্চাগুলো শাল অথবা পুরোনো লুঙ্গি গায়ে মুরে, বেঁতের কাঠায় অথবা স্টিলের গামলায় মুড়ি নিয়ে, রোদের প্রথম কিরণ গায়ে মেখে, খেজুর রসে মাখানো মুড়ি খেতে খেতে দিনটা শুরু করে। আর বর্ষা কালে তো গ্রামের পুরো দৃশ্য পটই অন্যরূপ ধারণ করে। গ্রামের পিচ্ছিল রাস্তায় কলাপাতার ছাতা মাথায় বর্ষি হাতে মাছ ধরতে যাওয়ায় স্মৃতিটা এখনো হৃদয়ে শিহরণ জাগায়।
গ্রামের শান্তিপ্রিয় মানুষ গুলোর একে অপরের সাথে কথা-বার্তা দেখে মনে হয় যেন সবাই একটি পরিবারের সদস্য। যে কোনো অনুষ্ঠানে যেমন সবাই অংশ নেয়, ঠিক তেমনি কারো কোনো বিপদ ঘটলে মুহূর্তেই সবাই একত্রিত হয়। আর তাই তো আমার মতো আমাদের গ্রামের যে কারোরই ছোট বেলার স্মৃতি জুরে শুধু ঈশানপুর নামের একটি পরিবারের খেয়াল আসে।
আমাদের গ্রামের সবার এই একাত্ম তার কারণ সম্ভবত একটাই, তা হলো এখানে কোনো রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব নেই। রাজনীতির চর্চা খুব একটা না থাকায় এখানকার মানুষদের মাঝে বড় ধরনের কোনো কলহ দেখা যায়না।
শিল্পকারখানা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না থাকায় এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ ই কৃষিজীবী। ফলে শিক্ষার হার তুলনামূলক বেশ কম। তবে এ গ্রামের বৃদ্ধ মানুষদের দখলে আছে পুঁথি সাহিত্যের ছন্দ। যদিও তথ্য-প্রযুক্তির সেগুলোর আজ প্রায় বিলুপ্ত ঘটেছে।