শিমরাইল গ্রাম মেহারী ইউনিয়ন

শিমরাইল গ্রাম মেহারী ইউনিয়ন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহের তালিকায়”আনন্দ ভুবন” নামে পরিচিত রাজার খালের উপর নির্মিত ব্রীজের নান্দনিক হাতছানি

“ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মিনি পর্যটন
বল্লভপুর-শিমরাইলের মহা মিলন
নাম তার আনন্দ ভুবন।”

নৈসর্গিক সৌন্দর্য মন্ডিত আজকের “আনন্দ ভুবন”যেই প্রাচীন জনপদকে নতুন করে জনসম্মুখে নিয়ে এসেছে সেটি হচ্ছে কসবা উপজেলার ২নং মেহারী ইউনিয়নের অন্তর্গত বিশাল গ্রাম শিমরাইল।এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার দীর্ঘতম ও বড় গ্রামগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি জনপদ।নূরনগর পরগনার এটেল মাটি সমৃদ্ধ যে নদীর দু’কূল আর তলদেশ;যে নদীতে সারা বছর জোয়ার ভাটা হয়। দাড় বাওয়া,গুণটানা,পাল তোলা নৌকা চলে।ঘোলাজল পলি বয়ে এনে উর্বর করে ফসলি জমি,কৃষকের মুখে ফোটায় সোনালী হাসি, সেই বুড়ি নদীর অববাহিকায় শিমরাইল গ্রামের অবস্থান।[১]

★সীমানাঃ
উত্তরেঃ রাজার খালের উপর নির্মিত ব্রীজের নান্দনিক হাতছানি “আনন্দ ভুবন”।
ও নবীনগর উপজেলা।
পূর্বেঃ বল্লভপুর,ঈশান নগর,চৌবেপুর,জাজিয়ারা গ্রাম।
দক্ষিণেঃ কুটি ইউনিয়ন।এবং
পশ্চিমেঃ বুড়ি নদী ও মুরাদ নগর উপজেলা।

➤এক নজরে শিমরাইল গ্রাম:
এখানে রয়েছে-
৪ টি প্রাইমারী স্কুল
১ টি হাই স্কুল
২ টি কিন্ডার গার্ডেন
৪ টি হাফেজিয়া মাদ্রাসা
১ টি দাখিল মাদ্রাসা
৪ টি কবরস্থান
২২ টি মসজিদ ও
২ টি বাজার।

মোট জনসংখ্যা =২০,০০০জন (প্রায়)
গ্রামের আয়তন =৬.৪০ বর্গ কিলোমিটার(প্রায়)
পুরুষ ও মহিলার অনুপাত =৫২ঃ৪৮
হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনসংখ্যা =২℅
শিক্ষার হার=৭৪%
দারিদ্র্যতার হার=১০%

 

➤পেশাঃ
কৃষিজীবি=৪৫%
প্রবাসী =১৫%
চাকুরীজীবি =২০%
ব্যবসায়ী =১৫%
অন্যান্য =৫%

গবেষণা ও বিভিন্ন নির্ভরশীল তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, মেহারী ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪,৫ ও ৬ এই তিনটি ওয়ার্ডের অধিপতি শিমরাইল গ্রামে বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার লোকের বসতি। তবে এ গ্রামের গোড়া পত্তন হয় আজ থেকে(প্রায়) ৪৫০ বছর পূর্বে। এখানে এক সময় ছিল(প্রায়)১০ কি.মি.প্রশস্থ অথৈ জলরাশির কালিদাস সায়র।বিল বা হাওর শব্দটি সায়র (সাগর) থেকে এসেছে। বর্ষাকালে কুটি,হাতনি ও শিমরাইলের বিল বা হাওরগুলো এখনো সে রূপই ধারণ করে। সুদূর অতীতে এই কালিদহ সাগর উত্তরে সিলেট থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, যার উপর দিয়ে ১০১১ খ্রিষ্টাব্দে চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং জাহাজে করে সরাসরি তাম্রলিপ্ত থেকে সিলেট পৌঁছেছিলেন বলে তাঁর লেখা থেকে জানা যায়।আবার কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে,আনুমানিক ৭০০ বছর পূর্বে ত্রিপুরা(বর্তমান কুমিল্লা) রাজ্যের কিছু কিছু জায়গায় প্রাকৃতিক দূর্যোগের ফলে পাহাড় ধ্বংস হয়ে কালিদাস সায়র(বা কালিদহ সাগরের)সৃষ্টি হয়েছিল বলে জানা যায়।

➤শিমরাইল নামকরণ:
কালের পরিক্রমায় কালিদহ সায়রের মাঝখানে সৃষ্টি হয় একটি লম্বা চর বা আইল। এ আইলকে অবলম্বন করে গড়ে উঠতে থাকে বসতি। সায়রের এক বিশেষ সীমা রেখা ধরে জনপদটি গড়ে উঠার কারণে নাম হয়েছিল “সিম আইল” যা কালক্রমে বিবর্তিত হয়ে সিমরাইল/শিমরাইল নাম ধারণ করে।

অন্য আরেকটি তথ্যের সাথে উপরোক্ত তথ্যের প্রমাণ মিলে,”বরদাখাত এবং নূরনগর পরগণার মধ্যবর্তী সীমানা ঠিক করার জন্য উভয় পরগণার অধিকর্তাগণ বুড়ি নদীর তীরে উত্তর দক্ষিণে লম্বালম্বি ভাবে জেগে উঠা চর বা আইল কে বরদাখাত পরগণার পূর্ব সীমানা এবং নূরনগর পরগণার পশ্চিম সীমানা হিসাবে চিহ্নিত করে। সীমানা নির্ধারণী এ আইল ই পরবর্তীকালে (সীম+আইল) সীমাইল বা শিমরাইল নাম ধারণ করে।”

সীম অর্থ সীমানা। আলি>আইল>আল অর্থ উঁচু বাধ। নুরনগর ও বরদাহাত পরগনার সীমানা নির্দেশক আল হচ্ছে সীমরাইল বা শিমরাইল। গ্রামটি উত্তর-দক্ষিণে উঁচু আলের মতাে প্রায় সাড়ে তিন মাইল দীর্ঘ। এ আল বা চরের উপর। গত তিন শত বছরে জনবসতি গড়ে ওঠে।

➤নোটঃ
✪আইল সংস্কৃত আলি শব্দ হতে ব্যুৎপন্ন। যার অর্থ পানি ধরে রাখার নিমিত্তে মাটির বাঁধ।[২]
আইল একটি আঞ্চলিক বাংলা শব্দ, যার অর্থ হয় কৃষি জমির সীমানা প্রাচীর।সাধারণত যেসব জমিতে চাষ হয় সেসব খন্ড খন্ড জমির সীমানা নির্ধারিত হয় এই আইল দ্বারা। আইল মুলত জমির পাশে মাটির ঢিবী দিয়ে সরু লাইন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।

✪সীমানাঃ(বিশেষ্য পদ) সীমা, জমির প্রান্ত, চৌহদ্দি।

➤তথ্যসূত্রঃ
[১] ↑বুড়িনদীর আদি ও ইতি।।এস এম শাহনূর

বুড়িনদীর আদি ও ইতি: এস এম শাহনূর

[২ ] ↑বঙ্গীয় শব্দকোষ।। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

[৩] নামকরণের ইতিকথা।। এস এম শাহনূর

💻Copyright @এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ন,  তথ্য সংগ্রাহক, কবি ও গবেষক)