যমুনা গ্রাম মেহারী ইউনিয়ন

যমুনা গ্রাম মেহারী ইউনিয়ন

এই পদ্মা, এই মেঘনা,
এই যমুনা সুরমা নদী তটে।
আমার রাখাল মন, গান গেয়ে যায়
এই আমার দেশ, এই আমার প্রেম
আনন্দ বেদনায়, মিলন বিরহ সংকটে।।
এই মধুমতি ধানসিঁড়ি নদীর তীরে
নিজেকে হারিয়ে যেন পাই ফিরে ফিরে
এক নীল ঢেউ কবিতার প্রচ্ছদ পটে।।
(গীতিকারঃ আবু জাফর)

কে দিল নদী গুলোর এত সুন্দর নাম? ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার বাদৈর ইউনিয়নের দক্ষিণ- পশ্চিম কোণে পদুয়া নামে ছোট্ট একটি গ্রামের অবস্থান। এক সময় এখানে পুকুরে রাশি রাশি পদ্ম ফুল ফুটে থাকতো বলে পদ্ম পুকুরের নামানুসারে গ্রামের নাম হয় পদ্মা।এইতো মাত্র গত শতাব্দীর নব্বই এর দশকে কি যেন কি মনে করে গ্রামের শিক্ষিত লোকজন খাতা পত্র আর চিঠির ঠিকানায় পদ্মার পরিবর্তে গ্রামের নাম লিখতে শুরু করলেন পদুয়া। এই পদুয়া গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এক গ্রাম।নাম তার যমুনা।এটি কসবা উপজেলার ২নং মেহারী ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। নদীর নামে গ্রামের নাম ভাবতেই ভালো লাগে।

 

আসলে কি তাই?না।এটি মোটেও তা নয়। তাহলে কেমন করে হলো যমুনা গ্রামের নামকরণ?
গবেষণা এবং বিভিন্ন নির্ভরশীল তথ্য হতে জানা যায়,যমুনা নদী কিংবা ঋগ্বেদে বর্ণিত যমুনা দেবীর নামেও এই গ্রামের নামকরণ হয়নি।যমুনা গ্রামের নামকরণের ইতিহাস খুঁজতে গেলে আমাদের ফিরতে হবে ১৯৪৭ পূর্ব অবিভক্ত ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সমাজ ব্যবস্থার মূলে।সে সমাজে (এবং ভারতের বেশ কিছু উগ্রহিন্দুত্ববাদী প্রদেশে এখনও) বেদ বিশ্বাসী ভারতীয়দের কাছে বেদ-অবিশ্বাসী বিদেশি মাত্রই ছিল যবন।

বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত বাংলা থেকে বাংলা ব্যবহারিক অভিধানের ১০০৬ পৃষ্ঠায়, ‘যবন’ শব্দের অর্থ করা হয়েছে
১. গ্রিক দেশের লোক
২. মুসলমান
৩. ম্লেচ্ছ।
আর মালাউন শব্দের অর্থ করা হয়েছে,
১. অভিশপ্ত,
২. বিধর্মীদের উদ্দেশ্যে মুসলমানদের গালি।”

বাংলা অভিধানে “মালাউন” শব্দের অর্থ অভিশপ্ত। এই শব্দটি আসলে ইবলিসের জন্য। কিন্তু কিভাবে জানি এই শব্দটি অমুসলিমদের জন্য বরাদ্দকৃত গালিতে পরিণত হয়েছে। অতীতে মুসলমানদের যখন যবন, ম্লেচ্ছ বলে গালি দেওয়া হত তখন পাল্টা গালি হিসেবে হয়ত এর আবির্ভাব হয়।মুলতঃ যবন এবং মালাউন দুটোই গালি বিশেষ ব্যবহার হয়।

★যবন এবং মালাউন শব্দের অপপ্রয়োগ মানবতার বিসর্জনঃ

★যবন শব্দটির ব্যুৎপত্তি (যু + অন (যুচ)-ক);
★যবনঃ [জবোন্‌] একটি বিশেষ্য পদ। অর্থ-
১ প্রাচীন গ্রিক জাতি; আইওনিয়া (Ionia)- বাসী গ্রিক।
২ ম্লেচ্ছ।
৩ বিধর্মী।
৪ অহিন্দু; বিদেশি; মুসলিম,বর্বর, প্রভৃতি।

★পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত
‘নতুন বাঙালা অভিধানে’ ‘
যবন’ শব্দের অর্থ লেখা হয়েছে এ রকম-
‘যবন’ মানে
‘অহিন্দু জাতি বিশেষ,
ম্লেচ্ছ জাতি।
বিধর্মী,
অসদাচারী,
গ্রিস,
আফগানিস্তান,
আরব,
পারস্য প্রভৃতি দেশের
অধিবাসী।’
এরপর ‘কথিত আছে’ বলে অভিধানে
যা ঢুকানো হয়েছে তা হলো-
‘বলিষ্ঠের আশ্রমদ্রাহী বিশ্বমিত্রের সমস্ত সৈন্য পরাভূত
করার নিমিত্ত তার কামধেনু শবলার যোনিদ্বার হতে এ জাতি উৎপন্ন হয়।’ তাতেও যখন অভিধান প্রণেতা সন্তুষ্ট হতে পারেননি, তখন অভিধান লেখক
ধর্মের বুলি শুনিয়েছেন।
‘বিষ্ণু পুরাণে’ যবন জাতির অন্যাবিধ উক্তি আছে-
‘সগর রাজা কতগুলো লোককে গুরু
অপরাধের জন্য মস্তক মুণ্ডন করিয়া
ভারতবর্ষ হতে দূরীকৃত করে দেন;
তারাই পরে যবন নাম প্রাপ্ত
হয়েছে।’
অভিধানে ‘যবন’-এর পরের শব্দটি
যবনারি। এর অর্থ শ্রীকৃষ্ণ।
যবন+অরি= যবনারি। ‘অরি’ মানে শত্রু;
অতএব, কৃষ্ণও মুসলমানদের শত্রু।
সুতরাং হিন্দু জাতিকে মুসলমানদের শত্রু না সাজালে
কৃষ্ণভক্ত হওয়া যায় কী করে?

 

যবন বলতে মুলত মুসলমানদের বোঝায়। তবে যবন নিয়ে একটা হাস্যকর গল্প আছে মহাভারতে। “হিন্দু রাজা যবাতি একবার গোমেধ যজ্ঞ করেছিলো। কিন্তু তার অসংযমী পুত্র লোভ করে এক টুকরো গরুর গোশত খেয়ে ফেলে। তখন থেকেই পিতার অভিশাপক্রমে এই আগের ভ্রষ্টপুত্র হতেই গো-খাদক ম্লেচ্ছ বংশ আরম্ভ হয়। সাধারণের ধারণা, ওই গো খাদক মুসলমানরাই ওই স্লেচ্ছ বংশীয় যবন।’ (ইতিহাসের ইতিহাস, গোলাম আহমদ মোর্তজা)”

মালাউন শব্দের অর্থঃ
‘মালাউন’ শব্দটি আরবী শব্দ “ملعون” থেকে উদ্ভূত যার অর্থ ‘অভিশপ্ত’ বা ‘ঈশ্বরের অভিশাপ প্রাপ্ত’।হিন্দুদের মালাউন বলা হলেও শব্দটি আসলে মাল’উন। এটি আরবী শব্দ। কুরআন শরীফে শয়তানকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে। এটি এসেছে লানত বা অভিশাপ শব্দটি থেকে। মুসলমান রাজারা যখন ভারতবর্ষে আসেন তখন হিন্দু রাজাদের বিরুদ্ধে তাদের সৈন্যসমূহ তো বটেই,তাদের তান্ত্রিকদের যাদু শক্তির বিরুদ্ধেও মোকাবিলা করতে হয়েছিল যা ইতিহাসে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। ইসলামে শয়তানকে মালউন বা অভিশপ্ত বলা হয়েছে। হিন্দুদের সাথে তান্ত্রিকতা, কালো জাদুর সম্পর্ক খুবই গভীর যা মূলত শয়তানি আচারের সাথে সম্পৃক্ত। সেই সূত্র ধরে অনেক আগে থেকেই ভারতবর্ষে মালাউন শব্দটা ব্যবহার হয় বলে অনেকে ধারণা করেন।
(The Arabic word “ملعون” (mal’un), literally meaning ‘cursed’ is derived from the root “لعنة” (la’nat) meaning ‘curse’. In Islamic parlance, it means ‘deprived of Allah’s mercy’. The word has been loaned into languages of non-Arabic Islamic countrieslike Malay and Indonesian.)

কাজী রফিকুল হক সম্পাদিত বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত অভিধানের বইয়ে আরবি মালাউন শব্দের অর্থ দেওয়া আছে
‘অভিশপ্ত’,
‘বিতাড়িত’ এবং ‘
শয়তান’।
আর ডক্টর মুহম্মদ এনামূল হক এবং শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী সম্পাদিত ‘বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান’ গ্রন্থে ‘মালাউন শব্দটির প্রথম অর্থ দেওয়া হয়েছে-
লানতপ্রাপ্ত,
অভিশপ্ত,
বিতাড়িত,
কাফের।
দ্বিতীয় অর্থ দেওয়া হয়েছে
‘শয়তান’ এবং
তৃতীয় অর্থ মুসলমান কর্তৃক ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোককে দেওয়া গালিবিশেষ।
অন্যদিক বহুভাষাবিদ, পন্ডিত ড. মু. শহীদুল্লাহ সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান’ এ ‘মালাউন শব্দের অর্থ দেওয়া হয়েছে
‘বিধর্মী’ এবং
‘অভিশপ্ত”।
এখন আমরা উপরের তিনটি অভিধান থেকে ‘মালাউন’ শব্দের অর্থ পাই মোট ৫ টি।
বিধর্মী,
অভিশপ্ত,
বিতাড়িত,
শয়তান,
কাফের,
মুসলমান কর্তৃক ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোককে দেওয়া গালিবিশেষ।
বাঙালি হিন্দুরা এই বঙ্গভূমিরই সন্তান। হিন্দুরা কোনমতেই অভিশপ্ত বা বিতাড়িত জনগোষ্ঠী বা শয়তান নয়। তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি হিন্দুবিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক মনস্ক মুসলমানরা ‘মালাউন’ শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে বিধর্মী, কাফের হিন্দুদের প্রতি গালি ছুড়ে দেয় (ড. এনামুল হক প্রণীত অভিধান অনুযায়ী — ‘মালাউন’শব্দের অর্থ হলো মুসলমান কর্তৃক ভিন্ন সম্প্রদায় কর্তৃক গালিবিশেষ)। এই ‘মালাউন’ শব্দ ব্যবহারের মাধ্যম তারা মগজে লালন করে সুপ্ত হিন্দুবিদ্বেষ।

★কবি নজরুল একসময় এদেশ তথা গোটা ভারতের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি দেখে অনেক তৃপ্তি নিয়ে লিখেছিলেন, ‘মোরা একই বৃন্তের দুইটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান।এখন যদি তিনি বেঁচে থাকতেন তবে তাকে অনেক কষ্ট পেতে হত।লিখতে হত, ‘মোরা একই হালের দুইটি বলদ গো, হিন্দু-মুসলমান!!’
হ্যাঁ, এদেশ তথা গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি এখন অনেকটাই ষাঁড় কিংবা বলদের গুঁতোগুঁতিতে পর্যবসিত হয়েছে।

উগ্র ধর্মীয় মতবাদের কারণে ভাঙ্গা হয়েছে বাবরি মসজিদ,রামুতে বৌদ্ধ মূর্তি।মিয়ানমারে চলছে মুসলমানদের ওপর বৌদ্ধদের পরিকল্পিত গণহত্যা।ভারতের গুজরাটে দাঙ্গায় প্রাণ হারিয়েছে হাজারো মুসলিম,গরুর মাংস খাওয়ার ‘অপরাধে’ পিটিয়ে পুড়িয়ে হত্যা এবং ধর্ষণ?শুধু মাত্র মুসলিম হওয়ার কারণে মোটর বাইক চোর সন্দেহে ঝাড়খণ্ডে ২৪ বছর বয়সী তাবরেজ আনসারি নামক যুবককে ১৬ ঘন্টা ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে জোর করে ‘জয় শ্রীরাম’ ‘জয় হনুমান’ বলিয়েও মুক্তি দেয়নি,নৃশংস ভাবে বেধড়ক মারধর করে হত্যা করেছে কয়েকজন যুবক।বাংলাদেশে ১৯৯০, ১৯৯২ এর সাম্প্রদায়িক সহিংসতা? নাসিরনগরের ঘটনা? ধর্ম অবমাননার ধুয়ো তুলে কখনো চলছে লুটতরাজ?
আধুনিকতার স্বর্নশিখরে পৌঁছেও মানুষ বুঝে উঠতে পারেনি
“সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই(মধ্য যুগের বাংলা কবি-বড়ু চন্দীদাস)বাংলা ভাষার অনেক অমুসলিম কবি সাহিত্যিক তাদের লেখায় মুসলমানদের ক্ষেত্রে নানা কুৎসিত শব্দ প্রয়োগ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের চরম ঘৃণা ও বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।মুসলমান শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে ওরা ক্ষেত্র বিশেষে ব্যবহার করেছেন যবন, ম্লেচ্ছ, পাতকী, পাষণ্ড, পাপিষ্ঠ, পাপাত্মা, দুরাত্মা, দূরাশয়, নরাধম, নরপিশাচ, বানর, নেড়ে, দেড়ে ধেড়ে, এঁড়ে, অজ্ঞান, অকৃতজ্ঞ প্রভৃতি শব্দ। এমন সব শব্দের ব্যবহার থেকেই ধারণা করা যায় যে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দুরা কতটা বিদ্বেষভাব পোষণ করেন।

 

—কাজী নজরুল ইসলাম ‘মানুষ’ কবিতায় বলে উঠেন-
গাহি সাম্যের গান–
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান ,
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ
ধর্মজাতি,
সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের
জ্ঞাতি।
——————
—————–

মানুষেরে ঘৃণা করি
ও’ কারা কোরান, বেদ, বাইবেল
চুম্বিছে মরি মরি
ও মুখ হইতে কেতাব-গ্রন্থ নাও জোর
করে কেড়ে
যাহারা আনিল গ্রন্থ-কেতাব সেই
মানুষেরে মেরে ।

★সীমানাঃ
উত্তরে -জমশেপুর,বর্ণী, কালসার,মেহারী।
পূর্বে-খাড়েরা ইউনিয়নের দেলী গ্রাম
দক্ষিণে- পুরকুইল
পশ্চিমে -ঈশান নগর গ্রাম।

★এক নজরে যমুনা গ্রামঃ
এখানে রয়েছে-
১ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
“যমুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়”।
১ টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল।
১ টি জামে মসজিদ।
৩ টি ওয়াক্তিয়া মসজিদ।
১ টি ঈদগাহ।
১ টি খেলার মাঠ।
১ টি বাজার।
-বেশ কয়েকটি কবরস্থান।
১ টি পরিত্যাক্ত মঠ।
২ টি ঐতিহাসিক পুকুর
‘সেনের পুকুর’ ‘তারা পুকুর’।

মোট জনসংখ্যা =৮০০০জন (প্রায়)
গ্রামের আয়তন =২.৮০ বর্গ কিলোমিটার(প্রায়)
পুরুষ ও মহিলার অনুপাত =৫২ঃ৪৮
শিক্ষার হার=৭৯%
দারিদ্র্যতার হার=১০%

★পেশাঃ
কৃষিজীবি=৩৫%
প্রবাসী =২৫%
চাকুরীজীবি =১৫%
ব্যবসায়ী =২০%
অন্যান্য =৫%

★গোষ্ঠী/গোত্র গুলোর নামঃ
ম্যাকাইভার ও পেজ এর মতে, “গোষ্ঠী বলতে আমরা বুঝি কোন সামাজিক ব্যক্তির সমষ্টি, যারা পরস্পরের সঙ্গে নির্দিষ্ট সম্পর্কে সম্পর্কযুক্ত।” গোয়ালী গ্রামে রয়েছে বেশ কিছু গোষ্ঠী।যারা নিজ নিজ গোত্রের গন্ডির মধ্যে থেকেও অপরাপর গোষ্ঠীর মানুষজনদ সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে দীর্ঘকাল পাশাপাশি বসবাস করে চলেছে।কখনো কখনো অত্র জনপদের লোকজন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে পাড়া বা বাড়ি হিসাবেও নিজেদের পরিচয় তুলে ধরেন।গোত্র /গোষ্ঠী /পাড়া/বাড়ি গুলো হল-

১) পূর্ব পাড়া
২) পশ্চিম পাড়া(নতুন বাড়ি, পুরাতন বাড়ি)
৩)আদম গোষ্ঠী
৪) করিমের গোষ্ঠী
৫)পোখলা গোষ্ঠী
৬)হাজী বাড়ি(তালুকদার বাড়ি)
৭)খাঁ বাড়ি
৮)দক্ষিণ পাড়া
৯)মোল্লা বাড়ি
১০)সরকার বাড়ি

 

★যমুনা গ্রামের এক সময়কার প্রভাবশালী সেন পরিবারের পরিচিতিঃ

সুকুমার সেন গুপ্ত।তিনি ১৯৫৪ সালে মেহারী ইউনিয়ন পরিষদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন।উনার পিতার নাম ছিল সয়ত্রী সেন গুপ্ত এবং তার পিতার নাম গোলক সেন গুপ্ত ছিল বলে জানা যায়।বহু আগে থেকেই যমুনা গ্রামের আশপাশের বেশকিছু তালুকের মালিক ছিলেন এ সেন পরিবার।এক সময় মুসলিম বিদ্বেষী কঠোর রক্ষনশীল এই সেন পরিবারের বৃদ্ধাঙুলির নির্দেশে গ্রামের সকল মানুষ উঠ্-বস্ করতে বাধ্য ছিলেন বলে জানা যায়।মূলতঃ ধর্মীয় বিভাজনের কারণে ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান পৃথক রাষ্ট্রে পরিনত হলে বাংলাদেশ থেকে হিন্দু সম্প্রাদায়ের অনেক লোক হিন্দুস্থানে পাড়ি জমায়।তবে স্থানীয় প্রভাব প্রতিপত্তি থাকায় যমুনা গ্রামের সেন পরিবার তখনো দেশ ছাড়ার চিন্তা করেননি।পরে ১৯৫৮ সালে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হলে সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে সুকুমার সেন গুপ্ত তাদের তালুকগুলো নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে ভারতে চলে যান।

★গ্রামের প্রথম মুসলিম পরিবারের পরিচিতিঃ
রূপ কথায় এবং অনেক সময় প্রবীণদের মুখে সোনা ভর্তি ডেক,রূপা ভর্তি কলস,টাকা ভর্তি সিন্ধুক,হিরা-জহরতের থলি পেয়ে রাতিরাতি অনেক মানুষের আঙুল ফুলে গলাগাছ বনে যাওয়ার গল্প শোনা যায়।এমনই এক গল্পের সাথে মিল রয়েছে যমুনা গ্রামে প্রথম বসবাসকারী মুসলিম পরিবারের উত্থানের সাথে।
বহু বছর আগের কথা।কথিত আছে যে,চাটগাঁ(চট্টগ্রাম) জেলার বর্তমান কর্ণফুলি থানার ৩নং শিকল বাহা ইউনিয়নে শেখ মামুদ এবং শেখ আলী জান নামক দুই ভাই বসবাস করতেন।গল্প নয় সত্যি, কল্পনা নয় বাস্তবে এ দুই সহোদর একদিন দৈবক্রমে একটি সোনা/ টাকা ভর্তি কলস পেয়ে যান।আর এ খবর চারদিকে জানাজানি হওয়ার আগেই তারা সোনা/টাকা ভর্তি কলস সহ এলাকা ছাড়ার সিন্ধান্ত গ্রহণ করেন।কারণ,সে যুগে এ ধরনের খবর শুনা মাত্র রাজা মহারাজার পাইক বরকন্দাজগণ এসে তাদের প্রাপ্ত গুপ্তধন সহ সবাইকে ধরে শিকলে বেঁধে টেনে হেঁচড়ে রাজ দরবারে নিয়ে যেত।(আর বর্তমানে আপনি এমন গুপ্তধন পেলে আপনার বাড়িতে অফিস বসাবে দুদকের চৌকস কর্মকর্তাবৃন্দ!!)তাই দুই ভাই বিভিন্ন নির্জন পথে পায়ে হেটে এবং নৌকায় করে বিজনা নদীতে ভাসতে ভাসতে খেয়া ঘাটে (বর্তমান খেওড়া/খাড়েরা গ্রামে)এসে উঠেন।অতঃপর খাড়েরা ইউপির বর্তমান সোনার গাঁও নামক লোকালয়ে আশ্রয় নেন।শেখ মামুদ এখানকার এক স্থানীয় ঘরের কন্যাকে বিয়ে করে শ্বশুরালয়েই থেকে যান।কিন্তু বড় ভাই শেখ আলী জান তাদের পৈতৃক নিবাস দক্ষিনে চাটগাঁ ফিরে যান বলে জানা যায়।লোকে বলে,”প্রেম এবং আগুন লুকিয়ে রাখা যায় না”।আমি বলি গুপ্তধনের গোপনীয়তাও বেশী দিন গোপন থাকেনা।তাই সোনা/টাকা ভর্তি কলস নিয়ে এখানে বসবাসের কারণেই গ্রামের নাম সোনার গাঁও হয়েছে কি না তাও ভাববার অবকাশ রাখে।

★মরহুম শেখ মামুদ এর উত্তরসূরীগণ:
মরহুম শেখ মামুদ এর ছেলের নাম মরহুম শেখ চেরাগ আলী।
শেখ চেরাগ আলীর দুই ছেলে।
ছেলেদের নাম
মরহুম শেখ সুন্দর আলী তালুকদার

মরহুম শেখ জয়দুল হোসেন তালুকদার

মরহুম শেখ সুন্দর আলী তালুকদারের ছেলের নাম আবু তাহের তালুকদার।
মরহুম শেখ জয়দুল হোসেন তালুকদারের ছেলের নাম অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন তালুকদার (মতি)

★ঐতিহাসিক সেনের পুকুর ঘিরেই আজকের যমুনা গ্রামঃ
এক সময় সেনের পুকুর নামে পরিচিত পুকুরের উত্তর পাড়ে ছিল সেন বাড়ি।পুকুরের পশ্চিম দক্ষিণ কোণে ছিল আজকের তালুকদার বাড়ি।
দক্ষিণ এবং পূর্ব পাড়ে কোন বসতি ছিলনা বলে জানা যায়।

★বরেণ্য ও কৃতী ব্যক্তিত্বঃ

* সমরঙ্গ সেন গুপ্ত (আই সি এস)
তিনি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস এ কর্মরত ছিলেন।

* মেজর জেনারেল গোলাম কাদের
তিনি মেজর জেনারেল পদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ২০০৮ সালের ৮ ই জানুয়ারী তিনি (ফখরুদ্দিন আহমেদ এর নেতৃত্বাধীন) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।

* ড. হারুনুর রশীদ
(খ্যাতিমান চিকিৎসক)।
* জনাব,মমিনুল হোসেন তালুকদার
(সাবেক কানুনগো)
* ইঞ্জিনিয়ার ফিরোজ সরকার
* জনাব এস এম সেলিম
(সহকারী কমিশনার)
*এসএম শাহীন
(সহকারি সচিব, জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়)।
* এডভোকেট মকবুল হোসেন তালুকদার
(সাবেক পিপি ও রাজনীতিবিদ)
* জনাব সিদ্দিক মাস্টার
(শিক্ষক ও সমাজ সংস্কারক)
* জনাব মো. হোসেন তালুকদার
(শিক্ষক ও রাজনীতিবিদ)

★শিক্ষক ও শিক্ষানুরাগীঃ

*জনাব,মোঃ আবুল ফয়েজ
(মেহারী ওবায়দিয়া ফাজিল মাদ্রাসা)
*জনাব,সাবিহা সুলতানা
(খেওড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়)
*জনাব,মো. হোসেন তালুকদার(মানিক মাস্টার)
*জনাব,মোঃ সুমন মাস্টার
*জনাব,মোঃ খলিল উদ্দিন
*জনাব,ফারুক হোসেন
(গোপিনাথপুর আলহাজ্ব শাহআলম কলেজ)
*জনাব জাফরুল হোসেন তালুকদার
(কালসার নাঈমা আলম মহিলা কলেজ)

★বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীঃ

১) মো. মেহেদী হাছান – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২) বিল্লাল হোসেন- কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
৩) নাজির হোসেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৪) শাকিল ভূইয়া- আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

★যমুনা নামকরণঃ
গবেষণা ও বিভিন্ন নির্ভরশীল মাধ্যম থেকে সংগৃহীত তথ্য ও তত্ত্বের আলোকে চুলচেরা বিশ্লেষণের উপসংহারে প্রতীয়মাণ হয় যে, মুসলমানদের প্রতি হিন্দুদের চরম ঘৃণা, বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তির উলঙ্গ বহিঃপ্রকাশের শেষ শব্দ #যবন”(এক প্রকার গালি)থেকেই যবনাই>যমুনা নামের উৎপত্তি।

 

★অন্য একটি তথ্যমতে, অত্র জনপদে প্রথম থেকেই যব মোহন নামে এক ব্রাহ্মণ বসবাস করতেন।যব মোহনের যব থেকে যবনাই এবং পরবর্তীতে তা যমুনা নাম ধারণ করে বলে অনেকের ধারণা।গ্রামের দক্ষিণে ভাবনার পুকুর নামে একটি পুকুর আজও সেই ব্রাহ্মণ পরিবারের অস্তিত্ব বহন করে চলেছে বলেও কেউ কেউ মনে করেন।

★যবন শব্দের গৌরবময় ইতিহাসঃ
হযরত নূহ(আ:) এর
১.শেম,
২.হাম ও
৩.যেফত
নামে তিজন পুত্র সন্তান ছিল। বন্যা বা মহা প্লাবনের পরে এই তিনজনের আরও বহু সন্তান সন্ততির জন্ম হয়।শেম, হাম ও যেফতের উত্তরপুরুষদের মধ্যে যেফত এর পুত্রগণ হল:
গোমর,
মাগোগ, মাদয়,
যবন,
তূবল,
মেশক এবং
তীরস|

যবনের পুত্রগণ হল:
ইলীশা,
তর্শীশ,
কিত্তীম এবং
দোদানীম| [১]

ভূমধ্যসাগর অঞ্চলে যে সকল মানুষের বাস তারা সকলেই যেফতের সন্তানসন্ততি। প্রত্যেক পুত্রের নিজস্ব ভূমি ছিল। সমস্ত পরিবারই বৃদ্ধি পেতে পেতে একটি জাতিতে পরিণত হয়। প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ভাষা ছিল।ধারণা করা হয়,ভারতবর্ষে যেফতের উত্তরসূরী #যবনের উত্তর পুরুষদের বসবাস এবং ইসলামের বার্তা যবনের বংশধর থেকেই ছড়িয়ে পড়েছিল।বিষয়টি কুলীন হিন্দুরা জানত বলেই তারা যবন জাতিকে সহ্য করতে পারত না।

★তথ্যসূত্রঃ
[১]পবিত্র বাইবেল(কেরী ভার্সন)
Bangladesh Bible Society 2001

*বাংলা ব্যবহারিক অভিধান।।বাংলা একাডেমি।
*নতুন বাঙালা অভিধান।।পশ্চিমবঙ্গ-ভারত।
*’বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান’
*মহা ভারত

*নামকরণের ইতিকথা।। এস এম শাহনূর
*বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান।
*ইতিহাসের ইতিহাস।।গোলাম আহমদ মোর্তজা
*রাজমালা।।কৈলাশ চন্দ্র সিংহ
*মাঠ পর্যায়ে ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা।

💻Copyright@এস এম শাহনূর
smshahnoor82@gmail.com
(উইকিপিডিয়ান,কবি ও গবেষক)