চৌবেপুর গ্রাম মেহারী ইউনিয়ন

কসবা উপজেলার চৌবেপুর গ্রামের নামকরণের ইতিকথা: এস এম শাহনূর

কসবা উপজেলার চৌবেপুর গ্রামের নামকরণের ইতিকথা: এস এম শাহনূর
 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ২নং মেহারী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডে চৌবেপুর গ্রামের অবস্থান। উত্তর দক্ষিণে গ্রামের বুক চিরে চলে গেছে সুন্দর এক গ্রাম্য পথ ।এ পথে উত্তরের মহেশ রোড় থেকে বল্লভপুর -মেহারী -ঈশান নগর হয়ে আপনি অনায়াসে পৌছে যেতে পারবেন কুটি বাজার পর্যন্ত। গ্রামের পূর্ব,উত্তর ও পশ্চিমে দিগন্ত ছোঁয়া ফসলে ভরা সবুজ মাঠ আপনাকে মুগ্ধ করবে।আপনার মনের অজান্তেই মুখে বেরিয়ে আসতে পারে কবিতার পঙক্তিমালা-

“আমি দেখিছি সবুজের সমারোহ
তার পথ-মাঠ-ঘাট-প্রান্তর জুড়ে।
দেখিছি সবুজ পাতার গাছের সারি
মেঠো পথের বাঁকে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে।


পেয়েছি খুঁজে অকৃত্রিম সুখটাকে
মাঠ ভরা সবুজ ফসলের প্রান্তরে।
মিশে আছে সেথায় অনাবিল ছোঁয়া
লাল-সবুজের এই বাংলাদেশে।

দেখিছি তার ভোরের শিশির কণা
ছুঁয়ে দিয়ে যায় সবুজ ঘাসে।
দখিনা হাওয়া দোল দিয়ে যায়
দিগন্ত জুড়ে সবুজ ধানের ক্ষেতে।”

➤সীমানা:
উত্তরে -পুরকুইল ও ঈশাননগর গ্রাম।
পূর্বে-বামুটিয়া গ্রাম।
দক্ষিণে- কুটি ইউনিয়নের লেশিয়ারা গ্রাম।
পশ্চিমে – শিমরাইল গ্রাম।

➤গ্রামের আয়তন ১.৪ বর্গমাইল,
➤মোট জনসংখ্যা -৪০০০ জন (প্রায়),
➤মোট ভোটার সংখ্যা -১৮০০জন (প্রায়),
➤পুরুষ ও মহিলার অনুপাত ৪৮ঃ৫২।
➤শিক্ষার হার ৭৫%

➤পেশাঃ
কৃষিজীবি=৪৫%
প্রবাসী =১৫%
চাকুরীজীবি =২০%
ব্যবসায়ী =১৫%
অন্যান্য =৫%

➤এক নজরে চৌবেপুর গ্রাম:
এখানে রয়েছে –
১ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়
২ টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল
১ টি এবতেদায়ী সহ দাখিল মাদ্রাসা
১ টি হাফিজিয়া খারিজি মাদ্রাসা
১ টি এতিমখানা হাফিজি সহ
৪ টি জামে মসজিদ
১ টি ঈদগাহ মাঠ
১ টি বাজার
২ টি কবর স্থান
৩ টি মাজার
১ টি দরবার

➤এছাড়াও এ গ্রামে রয়েছে-
৭ জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক,
১১ জন চাকুরিরত শিক্ষক
৫ জন সরকারী কর্মকর্তা
৩০ জন সরকারি কর্মচারী
১২৫ জন বেসরকারি চাকুরিজীবি
৪২৫ জন প্রবাসী
১৫ জন বিশিষ্টজন।
৪ জন মাওলানা কামিল এম,এ
২ জন দাওরা হাদিস এবং
৭ জন কুরআনে হাফিজ প্রমুখ।

➤গোষ্ঠী /গোত্র/বাড়ি গুলোর নাম:
খাঁ বাড়ী
ভুৃঁইয়া বাড়ী
সরকার বাড়ী
মৌলভী বাড়ী
মোল্লা বাড়ী
দারগা বাড়ী
মিয়া বাড়ী
কাজী বাড়ী
হাজী বাড়ী
বর্দন বাড়ি
তিলার পাড়
খলিফা বাড়ি
নোয়া বাড়ি
ঠাকুর বাড়ি
মতির বাড়ি

➤শিক্ষা,সংস্কৃতি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান সমূহঃ
☆চৌবেপুর আলহাজ্ব শাহ আলম দাখিল মাদ্রাসা
☆চৌবেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
☆চৌবেপুর আইডিয়াল স্কুল
☆চৌবেপুর মুক্তিযোদ্ধা স্কুল
☆চৌবেপুর সামসুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসা
☆আহলে বাইয়াত এতিমখানা,
প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক,
মুফতি আবদুল আউয়াল পীর সাহেব।
☆চৌবেপুর গাউছিয়া দায়েমিয়া বাসারীয়া সাত্তারীয়া খানকা শরীফ ও আহলে বাইয়াত এতিমখানা দরবার শরীফ।

received 249481816226271

➤শিক্ষক/শিক্ষিকা গণের নামের তালিকা:
(শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের নাম)
১, মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল
সুপারিন্টেন্ডেন্ট,
২,মোঃ মাহাবুবুর রহমান
সহ সুপার
৩, মোঃ আবু কাউছার
সহ মৌলভী
৪, মোঃ ইসমাইল মিয়া
সহকাটী মৌলভী।
৫, মোঃনিয়াজ উদ্দীন
সহকারী মৌলভী
৬, মোঃআমিনুল ইসলাম
সহ শিক্ষক
৭,মোঃ ইমরান হুসেন
সহকারি শিক্ষক
৮, মোঃ আনোয়ার হুসেন
সহ শিক্ষক,বি পি এড.
৯, সঞ্জিত কুমার দেব নাথ
সহ শিঃ বিঃ
১০, মোঃ আবদুল্লাহ কায়েস
সহ শিঃ বিঃ
১১, মোঃ উমর ফারুক
সহ শিঃ কৃষি।
১২, মোঃ আবুল বাসার
এবঃ প্রধান
১৩, রাশেদা আক্তার
জুনিয়র মৌলভী
১৪, নাজমা পারভীন
জুনিয়র শিক্ষক
১৫, মোঃ আবুল বাসার,
ক্বারী
১৬, মোঃ আইয়ুব খাঁন
অফিস সহকারি
১৭, মোঃ কামাল মিয়া
৪র্থ শ্রেণী দপ্তরী।
১৮, মোঃ তুফাজ্জুল হুসেন
নৈশ প্রহরী।
১৯, আয়া ১ জন
২০, নিরাপত্তা কর্মী ১ জন (নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন।

➤একনজরে আলহাজ্ব শাহ আলম দাখিল মাদ্রাসা:
স্থাপিত ও এবতেদায়ী চালু হয় ১৯৮৫ ইং সালে।
এবং দাখিল চালু হয় ১৯৯৫ ইং সালে।
বর্তমানে ছাত্র/ ছাত্রী সংখ্যা ৪৭৫ জন।
শিক্ষক সংখ্যা ১৫ জন
মহিলা শিক্ষক ২ জন।
অন্যান্য কর্মচারী ৪ জন।
ছাত্র/ ছাত্রী কেবিনেট ৮ জন,
স্কাউট দলে ৮ জন।

received 297982174497051

➤গ্রামের বিশেষ ব্যক্তিবর্গের নামের তালিকা:

☆ আলহাজ্ব মাওলানা মুফতি সামছুদ্দিন (রহঃ)
☆ মাওলানা আবদুল কুদ্দুস (রহঃ)
☆ মাওলানা তাজুল ইসলাম (রহঃ)
☆ মাওলানা আবু ইউসুফ (রহঃ)

☆ মোঃ আল আমিন (বিসিএস)

মৌলভীবাজার জেলা ভুক্তাধিকার ম্যাজিস্ট্রেট।
☆ মোঃ রাজ্জাক দারোগা
☆ মোঃ নূরুল ইসলাম
☆ এড. কামরুন্নাহার মনি
পিতা: মোঃ নূরুল ইসলাম

[আরো অনেকের নাম অন্তর্ভুক্ত হবে]

➤চৌবেপুর নামকরণ:
জনশ্রুতি রয়েছে যে,কোন এক সময় এ লোকালয়ে পান্ডে নামে একজন অভিজাত ব্রাহ্মণের বসবাস ছিল।তিনি একটি মাত্র বেদ পাঠ করতে জানতেন।তাই এখানকার ব্রাহ্মণ সমাজের ধর্মীয় শিক্ষা দীক্ষা প্রসারের নিমিত্তে তিনি বৃন্দাবন থেকে চৌবে পদবীধারি একজন পাদ্রি নিয়ে আসেন।যিনি চারটে বেদই পড়তেন বলে তাঁকে বলা হত চতুর্বেদী বা চৌবে।চৌবেপুর একটি যুগ্ম শব্দ।কালের পরিক্রমায় লোকমুখে চৌবে শব্দের সাথে পুর(সংস্কৃত পুর অর্থ -ঘর বা গ্রাম) প্রত্যয় যুক্ত হয়ে চৌবেপুর নাম ধারণ করে বলে প্রতীয়মান হয়।

✪জানার আছে অনেক কিছুঃ

➤বাংলা অভিধানে চোবে/চৌবে একটি বিশেষ্য পদ। যার অর্থ দাড়ায়-
✪ চর্তুবেদী,
✪ ব্রাহ্মণের পদবী বা উপাধিবিশেষ। /হি/।

➤বাংলা অভিধানে পান্ডেও একটি বিশেষ্য পদ। যার অর্থ দাড়ায়-
✪ পশ্চিমী ব্রাহ্মণের উপাধিবিশেষ,
✪ পাঁড়ে।

[এই কিছুকাল আগেও যেমন অনেকেই নামের পাশে বি এ, এম এ, বি এড লিখতেন, তেমনই তারও বহু আগে যাঁরা একটা বেদ পাঠ করতেন, তাঁদের বলা হত পন্ডিত। বাংলার বাইরে যা হয়ে যায় পান্ডে। যাঁরা দুটো বেদ পাঠ করতেন, তাঁদের বলা হত দ্বিবেদী। বাংলার বাইরে যারা দুবে হিসেবে পরিচিত। তিনটে বেদ পাঠ করতেন যারা, তাদের বলা হত ত্রিবেদী। বাংলার বাইরে এঁরাই হয়ে যান তেওয়ারি। চারটে বেদ যাঁরা পড়তেন, তাদের বলা হত চতুর্বেদী। বাংলার বাইরে তাঁরাই চৌবে। মজা হচ্ছে, বংশের কোনও এক জন পন্ডিত হলে, তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের কেউ চারটে বেদ পড়লেও তিনি কিন্তু আর চতুর্বেদী বা চৌবে হয়ে উঠতে পারতেন না। তাঁকে পন্ডিত পদবি নিয়েই ক্ষান্ত থাকতে হত। আবার উল্টো দিকে, তিন বা চারটে বেদ পড়া কারও বংশধর যদি একটিও বেদ না পড়তেন, তাঁরাও শুধুমাত্র উত্তরাধিকার সুত্রেই ওই একই পদবি ব্যবহার করার অধিকারী হতেন।]

➤বৃন্দাবন ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের মথুরা জেলার অন্তর্গত একটি প্রাচীন শহর। এই শহর হিন্দু ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত এবং হিন্দুধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। ঈশ্বর পরম রাধামাধব এখানে নিজেদের সচ্চিদানন্দ ছেলেবেলার লীলা প্রকাশ করে থাকেন । শহরটি ঈশ্বর পরম রাধামাধবের ভূ লোকের লীলা ভূমি জেলাসদর মথুরা থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে আগ্রা -দিল্লি হাইওয়ের ( ২ নং জাতীয় সড়ক ) উপর অবস্থিত। বৃন্দাবন শহরে রাধা ও কৃষ্ণের অনেকগুলি মন্দির আছে।[১]

➤বেদ’ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ জ্ঞান। যার অনুশীলনে ধর্মাদি চতুর্বর্গ লাভ হয় তা-ই বেদ। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী বেদকে অপৌরুষেয় অর্থাৎ ঈশ্বরের বাণী বলে মনে করা হয়। এটি কতগুলি মন্ত্র ও সূক্তের সংকলন। বিশ্বামিত্র, ভরদ্বাজ প্রমুখ বৈদিক ঋষি জ্ঞানবলে ঈশ্বরের বাণীরূপ এসব মন্ত্র প্রত্যক্ষ করেন। বেদ হল প্রাচীন ভারতে লিপিবদ্ধ তত্ত্বজ্ঞান-সংক্রান্ত একাধিক গ্রন্থের একটি বৃহৎ সংকলন। বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় রচিত বেদই সংস্কৃত সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন এবং সনাতন ধর্মের সর্বপ্রাচীন পবিত্র ধর্মগ্রন্থ।[১]বেদের সংখ্যা চার: ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ,
সামবেদ ও অথর্ববেদ । [২] [৩]প্রত্যেকটি বেদ আবার চারটি প্রধান ভাগে বিভক্ত:সংহিতা (মন্ত্র ও আশীর্বচন), আরণ্যক (ধর্মীয় আচার, ধর্মীয় ক্রিয়াকর্ম, যজ্ঞ ও প্রতীকী যজ্ঞ), ব্রাহ্মণ (ধর্মীয় আচার, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও যজ্ঞাদির উপর টীকা) ও উপনিষদ্ (ধ্যান, দর্শন ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান-সংক্রান্ত আলোচনা)। [২]

➤তথ্যসূত্রঃ
১. ↑ Keene, Henry George (১৮৯৯)। “Bindrabun”। A Handbook for Visitors to Agra and Its Neighbourhood । Thacker, Spink & Co.। পৃষ্ঠা 98–106।
২. ↑ Sanujit Ghose (2011). ” Religious Developments in Ancient India ” in
Ancient History Encyclopedia .
৩. ↑ Gavin Flood (1996), An Introduction to Hinduism, Cambridge University Press,
আইএসবিএন ৯৭৮-০৫২১৪৩৮৭৮০ , pages 35-39
৪. ↑ Bloomfield, M. The Atharvaveda and the Gopatha-Brahmana, (Grundriss der Indo-Arischen Philologie und Altertumskunde II.1.b.) Strassburg 1899; Gonda, J. A history of Indian literature: I.1 Vedic literature (Samhitas and Brahmanas); I.2 The Ritual Sutras. Wiesbaden 1975, 1977
৫. ↑ নামকরণের ইতিকথা।। এস এম শাহনূর
৬. ↑ মোঃ বজলুর রহমান খান
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।
৭. ↑ মোঃ আব্দুল আউয়াল
সুপারিন্টেন্ডেন্ট,
চৌবেপুর আলহাজ্ব শাহ আলম দাখিল মাদ্রাসা।
৮. ↑ আলহাজ্ব অলি ইসলাম
সৌদি আরব প্রবাসী।
৯.↑ কাজী মোঃ মানিক মিয়া
বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার।

💻Copyright@লেখক:
এস এম শাহনূর
(কবি ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক)