বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কবিরাজ

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কবিরাজ

লােক চিকিৎসা গ্রাম বাংলার মানুষের প্রাচীনতম চিকিৎসা পদ্ধতি। আধি-ব্যাধি , রােগ-শােক এবং দৈহিক-মানসিক রােগে প্রাচীনকাল থেকে মানুষের অবলম্বন লােক চিকিৎসা । এসব লােক-চিকিৎসার মধ্যে আছে ঝাড়ফুক , তাবিজ-কবজ , শিকড়-বাকড় ইত্যাদির মাধ্যমে রােগ নিরাময়ের প্রচেষ্টা। আদিকাল থেকে গ্রামবাংলার মানুষের মধ্যে এসব চিকিৎসা প্রদ্ধতি চলে আসছে । বর্তমান কালের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রামবাংলা পর্যন্ত চলে এলেও প্রান্তিক মানুষজন এখনাে লােক চিকিৎসার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে ২/৪ জন লোক চিকিৎসকের সন্ধান পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে জেলার ১০০ টি ইউনিয়নের মধ্যে অন্তত দুই / আড়াই শ ‘ লোক চিকিৎসক রয়েছেন । তাদের সবার পরিচিতি দেওয়া সম্ভব নয় । এর মধ্য থেকে কয়েকজনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দেওয়া হলাে।

জোহরা বেগম , স্বামী – তাজুল ইসলাম চৌধুরী

গ্রাম : বাদৈর , উপজেলা – কসবা , ব্রাহ্মণবাড়িয়া । তিনি তাঁর মাতা আখাউড়া উপজেলার দেবগ্রামের সাইদুন্নেছার কাছ থেকে শেখা দুটি রােগের চিকিৎসা করার বর্ণনা দিয়েছেন ।

  1. দুটি পেঁয়াজ , রসূনের ৪ / ৫ টি কোয়ার সাথে মিশিয়ে চিনি অথবা গুড় দিয়ে ৩ ঘন্টা পরপর খেলে পেটের ব্যথা সেরে যায় ।
  2. তরতাজা গরুর কলিজা তেলে ভেজে প্রতিদিন সন্ধ্যা বেলায় মাছ ধরার পলোর ভিতরে ঝাপ দিয়ে রোগিকে খাওয়ালে রাতকানা রোগ ভালো হয়। একনাগারে ১৫ দিন খাওয়াতে হয়। উল্লেখ্য যে রোগীর বয়স ১০/১২ এর ভিতর হলে অতি দ্রুত আরোগ্য লাভ করে।

জামাল উদ্দিন খন্দকার

কাজীপাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর। তাবিজ , পানিপড়া , ঝাড়ফুক ইত্যাদির সাহায্যে বিভিন্ন রােগের চিকিৎসা করেন ।

লাবু মিয়া ফকির , পিতা মিয়া চান

গ্রাম : কুলীনকুণ্ডা , নাসিরনগর , ব্রাহ্মণবাড়িয়া । খাজা বাবার অনুসারী । ৪ / ৫ শত’ শিষ্য রয়েছে তাঁর । পানিপড়া , তেলপড়া , ঝাড়ফুক ওতাবিজ – কবচের সাহায্যে বিভিন্ন রােগের চিকিৎসা করেন । এরমধ্যে মাথাব্যথা , পেটব্যথা , সাম্বিক , সূতিকা প্রভৃতি রােগের চিকিৎসা করেন । মহিলাদের গর্ভকালীন সময়ের নানাপ্রকার সমস্যা সমাধানের চিকিৎসা প্রদান করেন ।

আমাতুল হাবেবা রাজেকা

মীরবাড়ি , সরাইল , ব্রাহ্মণবাড়িয়া । চতুস্পদ জীব জন্তুর বিষাক্ত কামড়ের ঔষধ দিয়ে থাকেন।

সুখেন কর্মকার

সরাইল , ব্রাহ্মণবাড়িয়া , পাইলস , ভগন্দর বা গেজের চিকিৎসা করেন ।

শাহ সুফি চিশতি

লেশিয়ারা , কুটি , কসবা । ঔষধি গাছ গাছালি দিয়ে বিভিন্ন রােগের চিকিৎসা করেন ।

খন্দকার আলমগীর হােসেন

রানীয়ারা , কুটি , কসবা । ঝাড় ফুক , তাবিজ , পানিপড়া , তেলপড়া ও ঔষধি গাছ – গাছালি দিয়ে বিভিন্ন প্রকারের রােগের চিকিৎসা করেন ।

ফজলু মিয়া খন্দকার

কুটি নােয়াবাড়ি , কসাব। জিনে ধরা , বাতাস লাগা , শিশুদের অতিরিক্ত কানা , বাত , মাথাধরা , কোমর ব্যথা ইত্যাদি রােগের চিকিৎসা করেন ।

দৌলত ফকির

ফকির বাড়ি , কুটি , কসবা। পানিপড়া , তেলপড়া , তাবিজ ও ঔষধ গাছ-গাছালি দিয়ে বিভিন্ন প্রকারের রােগের চিকিৎসা করেন ।

মনা মিয়া পিরসার

জেটাগ্রাম , নাসিরনগর। ঝাড়ফুক , পানিপড়া , তেলপড়া ইত্যাদির সাহায্যে মুরিদানদের চিকিৎসা করেন ।

ছয়ফুল হুজুর ও তারা মিয়া সাব

তারাগন, আখাউড়া , ব্রাহ্মণবাড়িয়া । তাদের বাড়িতে শের আলী শাহ সাহেবের মাজার রয়েছে । তারা শাহ সাহেবের নাতি মুরিদ করেন। তাবিজ , পানিপড়া , তেলপড়া , ঝাড়ফুক ইত্যাদির সাহায্যে বিভিন্ন রােগের চিকিৎসা করেন ।

সুফিসম্রাট হযরত মাহাবুব এ খােদা বাবে মােরশেদ

বাহাদুরপুর , আশুগঞ্জ । পীরানি করেন, মানত করে কিছু দান করা হলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়,পানিপড়া , তেলপড়া ইত্যাদির সাহায্যে বিভিন্ন রােগের চিকিৎসা করেন।

জাকির কবিরাজ

বিজেশ্বর বড়বাড়ি , রামরাইল । জ্বিনের সাহায্যে চিকিৎসা করেন বলে প্রচার করেন , ঝাড়ফুক , তেলপড়া , পানিপড়া , তাবিজ ইত্যাদির সাহায্যে চিকিৎসা করেন।

হরেন্দ্র দাস পিতা হজেন্দ্র দাস

নাখাল পাড়া , নাসিরনগর সদর । পানিপড়া , তেলপড়া , তাগাপড়া , ঝাড়ফুক ও তাবিজ – কবচের সাহায্যে বিভিন্ন প্রকার রােগের চিকিৎসা করেন । এরমধ্যে পেটব্যথা , মাথাব্যথা , স্বপ্নদোষ , বিছানায় প্রস্রাব করা , ছেলে সন্তান কামনা প্রভৃতি উল্লেখ্যযােগ্য ।

উত্তম কুমার বৈদ্য , পিতা পুলিন বিহারী বৈদ্য , মধ্যমেড়া। বংশানুক্রমে বিভিন্ন রােগের চিকিৎসা করেন ।

তথ্যনির্দেশ
জেলা ওয়েবসাইটের ইউনিয়ন প্রতিনিধি
আমাতুল হাবেবা রাজেকা , মীর বাড়ি , সরাইল
সুখেন কর্মকার ( ৪৫ )
বাংলাদেশী লােক চিকিৎসা : এস . এম . লুৎফর রহমান ( বাংলা একাডেমি , ঢাকা )
প্রাণতােষ চৌধুরী , পাইকপাড়া , ব্রাহ্মণবাড়িয়া ।
নিতাই দাস , পাইকপাড়া , ব্রাহ্মণবাড়িয়া ।