বিবাড়িয়া না ব্রাহ্মণবাড়িয়া?

বিবাড়িয়া না ব্রাহ্মণবাড়িয়া?

বিবাড়িয়া না ব্রাহ্মণবাড়িয়া?

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নামকরণ নিয়ে একাধিক মত প্রচলিত আছে। কেউ বলে বিবাড়িয়া কেউ বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। অনেকেই মতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামের সংক্ষিপ্ত রূপ বিবাড়িয়া। আবার কিছু মানুষ ধর্মীয় কারণে ব্রাহ্মণ শব্দটির উচ্চারণ বর্জন করে বিবাড়িয়া নামটা কে প্রাধান্য দেয়।

তবে এই কথা সত্যি যে বাংলাদেশের যে কোন জেলার মানুষ ব্রাহ্মণবাড়িয়া অথবা বিবাড়িয়া উভয় নামে চিনে আমাদের জেলাকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কোন নামে ডাকবো আমাদের প্রাণের জেলাকে? বিবাড়িয়া নাকি ব্রাহ্মণবাড়িয়া? তার আগে আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নামকরণ সম্পর্কে জেনে নিলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে।

এস এম শাহনূর প্রণীত “নামকরণের ইতিকথা” থেকে জানা যায়, সেন বংশের রাজত্বকালে এই অঞ্চলে অভিজাত ব্রাহ্মণকুলের বড়ই অভাব ছিল। যার ফলে এ অঞ্চলে পূজা অর্চনার জন্য বিঘ্নতার সৃষ্টি হতো। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষণ সেন আদিসুর কন্যকুঞ্জ থেকে কয়েকটি ব্রাহ্মণ পরিবারকে এই অঞ্চলে নিয়ে আসেন। তাদের মধ্যে কিছু ব্রাহ্মণ পরিবার শহরের মৌলভী পাড়ায় বাড়ি তৈরি করেন। সেই ব্রাহ্মণদের বাড়ির অবস্থানের কারণে এ জেলার নামকরণ ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয় বলে অনেকে বিশ্বাস করেন।

অন্যদিকে অপর মতানুসারে দিল্লী হতে আগত ইসলাম ধর্ম প্রচারক শাহ সুফী হযরত কাজী মাহমুদ শাহ এই শহর থেকে বসবাসরত ব্রাহ্মণ পরিবার সমূহকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন, পরবর্তীতে এই থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আঞ্চলিক উচ্চারণ ‘বাউনবাইরা’। এছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিকৃত নাম ‘বি-বাড়িয়া’ বহুল প্রচলিত। যার ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ঐতিহ্য ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এবং দুই নামের কারণে অন্যান্য জেলার মানুষ বিভ্রান্তি হচ্ছে বলে অনেকই মনে করেন । এই অবস্থার সমাধানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন কর্তৃক বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং ২০১১ সাল থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন সকল ক্ষেত্রে বি-বাড়িয়ার পরিবর্তে ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ লেখার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

ইতোমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষিত এবং সচেতন ছেলে মেয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপ, পেইজ এবং সংগঠনে জেলার নামের সঠিক উচ্চারণ নিয়ে কাজ করছে। শীঘ্রই এই মতবাদ সমাধান না হলেও ধীরে ধীরে প্রচারণার মাধ্যমে তলিয়ে যাবে। এই জন্য সচেতনতা জরুরি। যে বুঝবে তার সাথে তর্ক করতে হবে না। বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপ,পেইজে কমেন্ট বক্সে প্রচারণা চালাতে গিয়ে গালাগাল বা তর্কে না জাড়ানো ই ভাল।