চেচড়া গ্রাম সাতমোড়া ইউনিয়ন

চেচড়া গ্রাম সাতমোড়া ইউনিয়ন

চেচড়া গ্রাম সাতমোড়া ইউনিয়ন

আমাদের ছোট গাঁয়ে,ছোট ছোট ঘর।

থাকি সেথা মিলেমিশে, নাহি কেহ পর।


আমার গ্রামের নাম চেচড়া।আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা এখানেই। তাই আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে তোমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম কোনটা? আমি চোখ বন্ধ করে বলে দিব চেচড়া,চেচড়া ও চেচড়া

নামকরণের_ইতিহাসঃ আমাদের গ্রামের নামকরণ নিয়ে সুস্পষ্টভাবে কোন তথ্য নেই, তবে বর্ষাকালে আমাদের গ্রামে চেচড়া নামক এক ধরনের লম্বা,লম্বা ঘাস উৎপন্ন হয় এ থেকেই সম্ভবত চেচড়া নামকরণের কারণ।

আয়তন_ও_অবস্থানঃ আয়তনের দিক দিয়ে আমাদের গ্রাম খুব বেশ বড় না হলেও জনসংখ্যায় প্রায় দুই হাজার মানুষের বসবাস এই গ্রামে।এই গ্রামটি নবীনগর থানার সাতমোড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে  অন্তর্ভুক্ত। চেচড়ার উত্তরে চুওড়িয়া,দক্ষিণে বিশাল খাল,পূর্বে মালাই এবং পশ্চিমে সাতমোড়ার অবস্থান।

দর্শনীয়স্থানঃ আমাদের গ্রামে রয়েছে বিশাল এক খেলার মাঠ,যা নবীনগর থানার মধ্যে সুপরিচিত । এটি চেচড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গন অবস্থিত। প্রতিবছর এখানে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার আয়োজন করা হয়।দূর দূরান্ত থেকে প্রতি বছর হাজারো দর্শক এখানে খেলা উপভোগ করতে আসে।তাছাড়া গ্রামের দক্ষিণ পার্শ্বে রয়েছে দীর্ঘ বড় খাল এবং খালের উপর অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন ব্রীজ। বর্ষাকালে ব্রীজের উপর থেকে দর্শনার্থীরা মনোরম দৃশ্য উপভোগ করে থাকে।

যোগাযোগ_ব্যবস্থাঃ বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু আমাদের গ্রাম চেচড়া।গ্রামের চারদিকে রয়েছে কাঁচাপাকা সড়ক। গ্রামের দক্ষিণ পাশ দিয়ে গিয়েছে আআঁকাবাঁকা পিচডালা রাস্তা যা আমাদের ও আশেপাশের বিভিন্ন গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে করেছে অনেক সহজ। ব্যবসা,বাণিজ্য ও যোগাযোগের জন্য এ সড়কপথ আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।তাছাড়া চলাচলের জন্য নৌ পথ ও রয়েছে,কিন্ত সড়কপথের সহজলভ্যতার কারণে নৌ পথের চলাচল অনেকটা কমে গেছে।

শিক্ষার_হারঃ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকলে আমাদের গ্রামের অনেক ছেলে মেয়ে সুনামের সহিত গ্রামের নাম উজ্জ্বল করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে অধ্যায়ন করছে আমাদের গ্রামের অনেক শিক্ষার্থী।
আমাদের গ্রামের শিক্ষার হার ৭০ শতাংশ। শিক্ষক,পুলিশ,র‍্যাব,ব্যাংকার সহ সরকারি উচ্চপদস্থ বিভিন্ন দপ্তরে রয়েছে আমাদের গ্রামের মানুষের বিচরণ।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানঃ আমাদের গ্রামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলতে একটা প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ধর্মীয় শিক্ষার জন্য তিনটি মসজিদ রয়েছে।পূর্বে একটা হাফেজীয়া মাদ্রাসা ছিল কিন্ত নানা জটিলতায় সেটি বন্ধ হয়ে গেছে।

সামাজিক_সংগঠনঃ গ্রামের উন্নয়ন এবং সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য প্রত্যেক গ্রামেই কোনো না কোন সামাজিক সংগঠন রয়েছে।এইসব সামাজিক সংগঠনের উদ্দেশ্যেই থাকে সমাজের কতিপয় সমস্যা তুলে ধরে সাধ্য অনুযায়ী সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। আমাদের গ্রামেও কিছু সংগঠন রয়েছে তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো

  • চেচড়া_প্রবাসী_কল্যাণ_সংগঠন এবং
  • চেচড়া_মাদকবিরোধী_সংগঠন।

এই সংগঠন গুলো গ্রামের শিক্ষা ও নানা ধরনের সমস্যা সমাধানে কাজ করে থাকে।সম্প্রতি করোনা কালীন সময়ে গ্রামের অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়েছে গ্রামের কিছু সংগঠন তারমধ্যে গ্রামের প্রবাসী ও ছাত্র ভাইদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয় ।

গ্রামের_হাটবাজারঃ খুব বড় কোন অনুষ্ঠান না হলে গ্রামের মানুষ তাদের দৈনন্দিন সদায়পাতি ক্রয় করে থাকে গ্রামের হাট থেকেই।গ্রামের দুই পাড়ায় ছোট বড় দোকান নিয়ে হাট হয়ে থাকে প্রতিদিন সকাল ও বিকেল বেলায়।
তবে সকালের হাটে তরিতরকারি,মাছ সহ গ্রামে উৎপাদিত বিভিন্নরকম শাক সবজি পাওয়া যায়।

অর্থনৈতিক_উৎসঃ গ্রামের প্রায় সিংহভাগ মানুষই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে কৃষিকাজ পরিচালনা করার মাধ্যমে। তাছাড়া গ্রামের অর্থনৈতিক উৎসের বিশাল একটা অংশের যোগান দেয় প্রবাসে থাকা ভাইয়েরা। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োজিত থাকা ভাইয়েরা ও আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতিতে অবদান রেখে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

মুক্তিযুদ্ধে_অবদানঃ ১৯৭১ সালে যখন পাকিস্তান বাহিনী আমাদের উপর ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড চালায় তখন দেশের সর্বস্তরের মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়।তেমনি আমাদের গ্রামের অনেক মানুষ পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করলেও লোকমুখে দু’জনের নাম শোনা যায় যারা মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিল।
একজন #মোহলেসুর রহমান যিনি বছর খানেক আগে ইন্তেকাল করেছেন এবং অন্যজন হলো #জনাব_হাবিবুর_রহমান।

 কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছিল,
বাংলার মুখ দেখিয়াছি আমি,তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাইনা আর।
পরিশেষে আমিও বলতে চাই এই গ্রামে জন্মেছি আমি এই গ্রামেই যেন আমার মরণ হয়।চেচড়া গ্রাম আমার মায়ের মতো।এই গ্রামের কল্যাণে যেন নিজেকে সঁপে দিতে পারি আল্লাহর কাছে এটাই কামনা।