গোসাই জোয়াইর গ্রাম ঘারিন্দা ইউনিয়ন
গোসাই জোয়াইর গ্রামটি টাঙ্গাইল জেলার সদর থানার ঘারিন্দা ইউনিয়নে অবস্থিত। টাঙ্গাইল শহর থেকে কুমুদিনী কলেজ গেট রোড হয়ে গোসাই জোয়াইরের দূরত্ব প্রায় চার কিলোমিটার। পাকা সড়ক ধরে এ গ্রামে যেতে পাড়ি দিতে হবে ৬টি গ্রাম। সাবালিয়া, বিল ঘারিন্দা, ঘারিন্দা, গোলাবাড়ী, সুরুজ ও নিয়োগী জোয়াইরের পরেই গোসাই জোয়াইরের অবস্থান।
নামকরণের ইতিহাস: গ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য গবেষক ও শিক্ষক এস এম শেরাজুল হকের তথ্য অনুযায়ী, পূর্বে এ গ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ‘গোসাঁইরা’ বসবাস করতেন। সাংসারিক কাজে তাদের খুব একটা মন ছিল না। সে কারণে তারা খাজনা পরিশোধ করতে পারতেন না। এক পর্যায়ে তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন জমিদার এ গ্রামটিকে চাষবাসের সর্তে গোসাঁইদের দান করেন। সে সময় এ অঞ্চলে ‘জোয়ার’ নামে চিনা জাতীয় এক প্রকার ফসল ছাড়া অন্য কোনো ফসল হতো না। সে কারণে গোসাঁই এবং জোয়ার নাম অনুসারে এ অঞ্চল প্রথমে গোসাঁই জোয়ার বা গোসাঁইদের জোয়ার নামে আশপাশের এলাকায় পরিচিত পায়। পরে কালক্রমে এ নামটি পরিবর্তিত হয়ে গোসাই জোয়াইর নামে স্থায়ী রূপ লাভ করে।
জনসংখ্যা: ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী- পুরুষ ১৫১৬ জন, মহিলা ১৬২৪ জন। মোট ৩১৪০ জন। তবে ইতোমধ্যে জনসংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
ধর্ম: গোসাই জোয়াইর গ্রামের অধিকাংশ মুসলমান ধর্মাবলম্বী। এছাড়া কিছু সংখ্যক সনাতন বা হিন্দু বসতিও রয়েছে।
বাজার: গ্রামে ১টি প্রাত্যহিক বাজার রয়েছে। সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়ে বাজার চলে ১০টা পর্যন্ত। বাজারে শাকসবজি, মাছ ছাড়াও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বেচাকেনা হয়। বাজারে সর্বমোট ৯০টি ছোট-বড় বিভিন্ন দোকান আছে।
হাট: প্রতি শনিবার বিকেলে গ্রামে একটি হাট বসে। হাটে ধান, চাল, আটা, মাছ, মাংস, হাস-মুরগি ও টাটকা শাক-সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যায়। এছাড়া প্রতি ঈদুল আজহা বা কোরবানি ঈদ উপলক্ষ্যে ২ থেকে ৩ দিন পশুর হাট বসে।
ব্যাংকিং সুবিধা: গ্রামের বাজার সংলগ্ন একটি ডাচ বাংলা এজেন্ট ব্যাংক চালু আছে। এছাড়া, বিকাশ, নগদসহ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ সেবা সুবিধা আছে।
বিদ্যালয়: গ্রামে ২টি বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ১৯৩৮ সালে এস এম শেহাব উদ্দীন মাস্টার গ্রামে গ্রামবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় প্রথম একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে গ্রামে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার গোড়া পত্তন করেন। তিনি নিজে দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষক হিসেবে এতে বিনা বেতনে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে এটি সরকারিকরণ হয় এবং এর নামকরণ হয় গোসাই জোয়াইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরপর ১৯৬৯ সালে গ্রামের তরুণদের উদ্যোগে একটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্টা হয়। এর জন্য শের আল মুন্সি তার বাবা আজিম মুন্সির নামানুসারে বিদ্যালয়ের নামকরণের সর্তে একাংশ জমি দান করেন। সে অনুযায়ী গ্রামের সকলের সহায়তায় আজিম মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয় দুটি পাশাপাশি অবস্থিত। বিদ্যালয় দুটির সামনে একটি বিশাল সুদৃশ্য খেলার মাঠ রয়েছে। এখানে ক্রিকেট, ফুটবল, কাবাডি, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন খেলার সুব্যবস্থা আছে। মাঠে সারা বছর নানা ধরনের টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়। এটি নির্মাণে সার্বিক সহযোগিতা দিয়েছে ওয়ালটন গ্রুপ।
এছাড়া গ্রামে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ৬টি মসজিদ, ১টি এতিমখানা মাদরাসা, ২ টি মাদরাসা, ২টি মন্দির, ১টি পারিবারিক কবরস্থানসহ ২টি কবরস্থান,৩টি ঈদগাহ মাঠ ও খেলাধুলা পরিচালনার জন্য আদর্শ যুব সংঘ নামে ১টি ক্লাব আছে।
তাঁতের শাড়ি: গ্রামে কারিগরপাড়া নামে পরিচিত একটি পাড়ায় প্রায় শতাধিক ছোট-বড় তাঁত কারখানা ছিল। এ পাড়ার প্রায় সব পরিবার আগে তাঁতের শাড়ি তৈরির কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে এ পেশায় দু’একটি পরিবার জড়িত আছে। অধিকাংশ হিন্দুরাও আগে এ পেশায় জড়িত ছিলেন। টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়ির একটি উল্যেখযোগ্য অংশ এ গ্রাম থেকেই সরবরাহ হতো।
দর্শনীয় স্থান: কয়েক একর জায়গাজুড়ে প্রতিষ্ঠিত দেশের ইলেক্ট্রনিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ওয়ালটন গ্রুপের মালিকের বাড়ি। যা ওয়ালটন খামার বাড়ি নামে পরিচিত। এ বাড়ির মূল আকর্ষণ হলো কৃত্রিম পাহাড় ও সুদৃশ্য গলফ কোর্স।
নদী: গ্রামের দক্ষিণ-পূর্ব পাশ দিয়ে প্রবাহিত ঝিনাই নামে একটি নদী আছে। তবে বিভিন্ন জায়গায় এর বিভিন্ন নাম রয়েছে। যেমন: ঝিনুক, ঝিনাই, এলংজানি, পুংলি বা পৌলি ইত্যাদি। গোসাই জোয়াইর গ্রামে এ নদীকে ঝিনাই নদী নামে পরিচিত (টাংগাইল জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য, পৃষ্ঠা ৯৫)।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব:
আড়ফাঙ্গাশিয়া গ্রাম বারাসাত ইউনিয়ন আড়ফাঙ্গাশিয়া গ্রাম খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার উত্তর দিকের শেষ সীমানা সংলগ্ন…
উত্তর বাগবের গ্রাম পাঁচথুবি ইউনিয়ন বাংলার সবুজ শ্যামল গ্রাম বলতে যা বুঝায়, তারই প্রকৃত নিদর্শন…
বানিপাকুরিয়া গ্রাম নয়ানগর ইউনিয়নগ্রামের অবস্থানঃ আমাদের এই গ্রামটি ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপু জেলার মেলান্দহ উপজেলার ৫…
পাঠলী গ্রাম রাজিউড়া ইউনিয়ন তেলিখালের উত্তরে পাঠলী গ্রাম টি অবস্থিত। এই গ্রামের আদিকাল তেকেই মানুষ…
ডিপি পাড়া গ্রাম লক্ষীছড়ি ইউনিয়ন পরিচিতিঃ ঐতিহ্যবাহী "ডিপি পাড়া" গ্রামখানি খাগড়াছড়ি জেলার অধীনস্হ লক্ষীছড়ি উপজেলার…
বাহের চন্দ্রপুর গ্রাম চন্দ্রপুর ইউনিয়ন ২ নং ওয়ার্ড, পোস্ট কোডঃ৮০০২, পশ্চিমেঃমাহমুদপুর, পূর্বেঃবিনোদপুর, দক্ষিনেঃহবিপুর, উত্তরেঃচন্দ্রপুর। উল্লেখ…