কালারাইয়া গ্রাম বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়ন

কালারাইয়া গ্রাম বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়ন

কালারাইয়া গ্রাম বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়ন

কালারাইয়া গ্রামের নামকরণের ইতিকথা।
———————-এ কে এম মহসিন ভুইঁয়া

“গোয়াল ভরা গরু,গোলা ভরা ধান,
পুকুর ভরা মাছ”।
এই ছিল গ্রামের চিরাচরিত সংস্কৃত।

আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার কালারাইয়া গ্রামের রয়েছে এক আধ্যাত্মিক পরিচয়। এ গ্রামের বিখ্যাত ব্যাক্তি হিসেবে পরিচিত যিনি জমিদারের খাজনা থেকেও মওকুফ পেয়েছিলেন মরহুম নেয়ামত উল্লাহ,এই গ্রামের তালুকদার ছিলেন মরহুম আজিমউদ্দিন ভুইয়া, এছাড়াও অত্র গ্রামের সুনাম যেসকল জ্ঞানী গুণী ব্যক্তিবর্গের দ্বারা ছড়িয়ে পড়ছে উনাদের মধ্যে শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক মরহুম হাজী মোঃ ছায়েদ আলী (১৯১২–২০১৮),সিরাজুল ইসলাম(শিরু মিয়া),কাইমুদ্দিন সরকার,কালা কাজী,চান কাজী,সুলতান সরকার উল্লেখযোগ্য।

👀এখানে রয়েছেঃ
১টি সরকারী প্রাইমারী স্কুল
১টি হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা
১টি হাট/বাজার
৬টি মসজিদ
১টি কবরস্থান
১টি ঈদগাঁ
১টি মন্দির ও
১টি শ্মশান

এছাড়াও এখানে বেশকিছু ক্রীড়া,সাংস্কৃতিক ও সমাজ সেবামূল সংগঠন রয়েছে।এগুলোর মধ্যে
★কালারাইয়া ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন
★কালারাইয়া স্পোর্টিং ক্লাব
★কালারাইয়া কল্যাণ সমিতি
★কালারাইয়া শান্তি সমাজকল্যাণ সংঘ
বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য।

👀প্রাচীনকালে এই অঞ্চলটি হরিকেন নামক জনপদের অংশ ছিল। বৌদ্ধ যুগে এ এলাকা ছিল সমতট রাজ্যভুক্ত। পরবর্তীকালে মুসলিম শাসনামলে এতদ অঞ্চল ৩টি পরগনায় বিভক্ত হয়।
কালক্রমে এই অঞ্চলটি ত্রিপুরা রাজ্যের জমিদার মহারাজা বীর বিক্রম রাধা কিশোর মানিক্য বাহাদুরের জমিদারের অংশে পরিণত হয়। সুপ্রাচীন মহাকাব্য মহাভারতে এবং পুরাণে ত্রিপুরা নামটির উল্লেখ পাওয়া যায়। এরপর ১৪শ শতকে রচিত রাজমালাতেও ত্রিপুরার উল্লেখ পাওয়া গেছে। এটি ছিল ত্রিপুরার মাণিক্য রাজবংশের কাহিনী। মাণিক্য রাজবংশ ১৯৪৭ সালে ত্রিপুরা ভারতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পূর্বাবধি অঞ্চলটি ধারাবাহিকভাবে শাসন করে। কথিত আছে প্রায় ২৫০০ বছর ধরে ১৮৬জন রাজা এই অঞ্চলটি শাসন করেছেন। [৬] ভারতে ব্রিটিশ শাসনকালে ত্রিপুরা ছিল একটি স্বাধীন করদ রাজ্য। দক্ষিণ ত্রিপুরায় অবস্থিত উদয়পুর ছিল ভূতপূর্ব স্বাধীন রাজতান্ত্রিক ত্রিপুরার রাজধানী। খ্রিস্টীয় অষ্টাদশ শতকে মহারাজ কৃষ্ণ মাণিক্য পুরাতন আগরতলায় রাজধানী স্থানান্তরিত করেন এবং পরবর্তীকালে খ্রিস্টীয় ঊনবিংশ শতাব্দীতে রাজধানী অধুনা আগরতলায় স্থানান্তরিত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীকে ত্রিপুরার আধুনিক যুগের সূচনা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে কারণ এই সময় মহারাজ বীরচন্দ্র মাণিক্য বাহাদুর দেববর্মা ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার অনুকরণে তাঁর প্রশাসনকে পুনর্গঠিত করেন এবং বিভিন্ন সংস্কার সাধন করেন।

১৯৪৯ সালে গণমুক্তি আন্দোলনের ফলে ত্রিপুরা অসম রাজ্যের অংশ হিসেবে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের ফলে ত্রিপুরার জনপরিসংখ্যান ভীষণভাবে পরিবর্তিত হয় এবং তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত বাঙালি শরণার্থীরাই ত্রিপুরার জনসংখ্যার গরিষ্ঠ অংশ হয়ে ওঠে।
♦কালারাইয়া গ্রামের নামকরণঃ
ঐতিহাসিক তথ্য উপাত্ত থেকে পাওয়া যায় প্রাচীনকালে অত্র অঞ্চল ছিল জলমগ্ন যা কালিদহ সায়র বা কালিদাস সাগর নামে অভিহিত। আর এ কালিদহ সায়রের বুকে জেগে উঠা ছোটছোট চরগুলোতেই পরবর্তীতে আস্তে আস্তে জনবসতি গড়ে উঠে। এই গ্রামে প্রথম বসতি স্থাপন করেন কালা কাজী ও মুনা কাজী এই দুই ভাই।পরবর্তীতে আসেন নেয়ামত উল্লাহ, আজম উদ্দিন সরকার,শরালী।
এই গ্রামটি তৎকালীন ত্রিপুরা জেলার বরদাখাত পরগণার অন্তর্গত ছিল। পরবর্তীতে ব্রিটশ শাসনামলে১৮৮৫ সালে ত্রিপুরা জেলার থোল্লা থানার বাঙ্গরা ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৬২ সালে বাঙ্গরা ইউনিয়নটি বিভক্ত হয়ে বাঙ্গরা পূর্ব ও বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নে হয়।

বাঙ্গরা ইউনিয়নটি ১৮৮৫ ইং খ্রিষ্টাব্দে বাঙ্গরা গ্রামের নামানুসারে এই ইউনিয়নটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯১৮ সালে তৎকালীন স্থানীয় জমিদার রায় বাহাদুর রূপেন্দ্র লোচন মজুমদার তৎকালীন জেলা পরিষদের ও জুরি বোর্ডের সদস্য ছিলেন। তিনি ঐ সময়ে প্রায় ৩০,০০০/- টাকা বর্তমান কোম্পানীগঞ্জ থেকে নবীনগর পর্যন্ত সড়কটি নির্মানে অর্থ সহায়তা প্রদান করেন । তিনি দাতব্য চিকিৎসালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, ডাক বাংলো ইত্যাদির জন্য জমি দান করেন। অত্র ইউনিয়নটি ঐ সময়ের জন্য মডেল হিসেবে তৈরী করে দিয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তারই বংশধর ১৯৫৪ সালে জমিদার বনকুমার মজুমদার প্রথম এই ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন। প্রথমে এই ইউনিয়নের সীমানা বর্তমানে বাঙ্গরা পুর্ব ও বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়ন নিয়ে ছিল। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে স্থানীয় যোগাযোগ সুবিধা ও প্রশাসনিক নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাঙ্গরা ইউনিয়নটি কে বিভক্ত করে বর্তমান পুর্ব বাঙ্গরা নামে নাম করন করা হয়।এই জমিদারের বরদাখাত এষ্টেটের বাঙ্গরা (রুপবাবুর বাড়ী)রাজকাচারী ও দিগীরপাড় তহশীল কাচারী। এই কাচারী দুটির মাধ্যমে এতদ অঞ্চলের জমিদারীর যাবতীয় খাজনাদি আদায়সহ জমিদারী ব্যবস্থা কার্যাদি পরিচালিত হত। মহারাজার জমিদারীর দ্বিতীয় রাজধানী ছিল কুমিল্লা।

👍এ কে এম মহসিন ভুইঁয়া
mohsinbhuiyan78@gmail.com
(তথ্য সংগ্রাহক,লেখক ও গবেষক)

  • কৃতজ্ঞঃ
    👍প্রকৌশলী আব্দুল মালেক
    সাবেক ইঞ্জিনিয়ার
    বিআইডব্লিউটিসি