কবি আল মাহমুদ (১৯৩৬-২০১৯)

কবি আল মাহমুদ (১৯৩৬-২০১৯)

❛আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে
হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে।❜

খুব সম্ভবত এই লাইন দুটির মাধ্যমে আমাদের পরিচয় ঘটেছিল বাংলা সাহিত্যের আলোকিত নক্ষত্র কবি আল মাহমুদের সাথে।কবি আল মাহমুদ এক কিংবদন্তির নাম। তার অভূতপূর্ব সৃষ্টি বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে বহুগুণে। তার পিতৃপ্রদত্ত নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ হলেও তিনি আল মাহমুদ নামেই অধিক পরিচিত।তিনি ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মৌড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মীর আবদুর রব, মাতা রওশন আরা মীর। তার পিতা একজন সংবাদ কর্মী ছিলেন। সেই সুবাদে সাংবাদিকতার বিষয়টি তার পরিচয় অনেক আগে থেকেই।

জন্ম ও শৈশবকাল
কবি আল মাহমুদের শৈশব কেটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। গ্রামের মক্তবে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি তিনি এম.ই স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন।সেখানে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্তপড়াশোনা করেন। অতঃপর যথাক্রমে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার সাধনা হাই স্কুলে ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাই স্কুলের পড়াশোনা করেন।এরপর আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন। ইতিমধ্যে তিনি লেখালেখি শুরু করে দিয়েছেন। ১৯৫২ সালে দশম শ্রেণিতে থাকাকালীন তিনি পড়াশোনা ছেড়ে ভাষা আন্দোলনে যোগদান করেন।তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ভাষা আন্দোলন কমিটি একটি প্রচারপত্র বের করেছিলেন যাতে তরুণ কবি আল মাহমুদের লেখা চারটি লাইন স্থান পেয়েছিল। ফলে তিনি পুলিশের রোষানলে পড়েন এবং পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে আত্মগোপন করতে বাধ্য হোন।

এরপর ১৮ বছর বয়সে ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকা আসেন।এ বিষয়ে ‘দ্য ডেইলী স্টার’র এক সাক্ষাতকালে কবি বলেন,
❛আমি ঢাকায় এসেছিলাম খদ্দরের পিরহান গায়ে, পরনে খদ্দরের পাজামা, পায়ে রাবারের স্যান্ডেল এবং বগলের নিচে গোলাপফুল আঁকা ভাঙা সুটকেস নিয়ে। এসেছিলাম অবশ্যই কবি হতে। আজ অনেক বছর শহরে আছি। আমার সুটকেসের ভেতর আমি নিয়ে এসেছিলাম বাংলাদেশের সবগুলো নদী, পাখি, পতঙ্গ, নৌকা, নর-নারীসহ বহমান আস্ত এক বাংলাদেশ। যেমন যাদুকররা তাঁদের দ্রষ্টব্য দেখান। আমার ভাঙা সুটকেস থেকে জাতিকে দেখিয়েছি। আমার দ্রষ্টব্য দেখে বাংলার মানুষ কখনো কখনো হাততালি দিয়েছেন, আবার কখনো অশ্রুসিক্ত হয়েছেন। আমি এখনো এই শহরই আছি। আমি যখন এসেছিলাম তখন আমার বন্ধুদের বগলের নিচে থাকতো সিলেক্টেড পোয়েমস জাতীয় ইউরোপের নানা ভাষার নানা কাব্যগ্রন্থ। আমি যেমন আমার ভাঙা সুটকেস থেকে আমার জিনিস বের করে দেখিয়েছি তারাও তাঁদের বগলের নিচের পুঁজি থেকে নানা ভেলকি দেখিয়েছেন। এখনো আমি এই শহরেই আছি। আমার সেসব বন্ধুদের সৌভাগ্য হয়নি। এই মহানগরীতে তাঁদের নাম তরুণরা উচ্চারণ করেন না। একটি কথা মনে রাখবে – সাহিত্য কোন প্রতিযোগিতার ব্যাপার ছিলো না, এখনো নেই। এটা ছিলো আনন্দের বিষয়, ভষ্যিতেও তাই থাকবে।❜

ঢাকা থেকে প্রকাশিত সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত ‘সমকাল’ ও কলকাতার ‘নতুন সাহিত্য’, ‘চতুষ্কোণ’ এবং বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত বিখ্যাত ‘কবিতা’ পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হতে থাকলে অতি দ্রুত তিনি ঢাকা-কলকাতার পাঠকদের কাছে প্রসিদ্ধি লাভ করেন; তিনি চলে আসেন পাঠকদের মুখে মুখে। এরই সুবাদে ১৯৫৪ সালে দৈনিক মিল্লাত পত্রিকায় প্রুফ রিডার হিসেবে চাকরি পান। তার সাংবাদিকতা জীবনের সূচনা হয়।
১৯৫৫ সালে মিল্লাত ছেড়ে ‘কাফেলা’য় যোগ দেন সহ সম্পাদক হিসেবে। অতঃপর ১৯৬৩ সালে ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ প্রুফ রিডার হিসেবে যোগ দিয়ে কিছুদিন পর মফস্বল সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন।একই বছর তার কাব্যগ্রন্থ ‘লোক-লোকান্তর’ প্রকাশিত হলে তিনি স্বনামধন্য কবিদের সারিতে জায়গা করে নিতে সক্ষম হোন। এক সময় ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ পত্রিকা বন্ধ হলে তিনি ‘বই ঘর’ এর প্রকাশনা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। এ সময় তিনি তার সুবিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘সোনালী কাবিন’ এর সনেটগুলো রচনা করেন।অতঃপর ১৯৬৮ সালে ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ চালু হলে তিনি সহ-সম্পাদক হিসেবে আবারো যোগদান করেন। ‘লোক-লোকান্তর’ এর পরে
‘কালের কলস’, ‘সোনালি কাবিন’, ‘মায়াবী পর্দা দুলে উঠো’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থগুলো তাকে সুপ্রতিষ্ঠিত কবির মর্যাদা এনে দেয়।

একনজরে তার জনপ্রিয় গ্রন্থাবলী:

লোক লোকান্তর

কালের কলস

সোনালী কাবিন

মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো

আরব্য রজনীর রাজহাঁস

বখতিয়ারের ঘোড়া

যেভাবে বেড়ে উঠি

পানকৌড়ির রক্ত

মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে অংশ নেন এবং ভারতে অবস্থান করে প্রবাসী সরকারের দায়িত্ব পালন করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ‘দৈনিক গণকন্ঠ’ পত্রিকা চালু হলে কবি আল মাহমুদ এর সম্পাদক নিযুক্ত হোন। এই পত্রিকায় সরকার বিরোধী র‍্যাডিকাল প্রকাশিত হলে আল মাহমুদ গ্রেফতার হন এবং গ্রেফতারের তিন দিন পর পত্রিকাটিও বন্ধ হয়ে যায়। দশ মাস জেল খাটার পর তৎকালীন সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান তাকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহকারি পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত করেন।দীর্ঘদিন তিনি শিল্পকলা একডেমিতে কাজ করে ১৯৯৩ সালের ১০ জুলাই অবসর গ্রহণ করেন। এরপর ‘দৈনিক সংগ্রাম’ এ সহকারী সম্পাদক এবং পরবর্তীতে ‘দৈনিক কর্ণফুলী’তে সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন
সহ অনেক পত্রিকায় লেখক ও কলামিস্ট হিসেবে কাজ করেন।


তিনি মুলত কবি হিসেবে পরিচিত হলেও সাহিত্যের অন্যান্য অঙ্গনে তার অবদান অনস্বীকার্য। কবিতার পাশাপাশি তিনি গল্প,প্রবন্ধ, উপান্যাস লেখার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৩ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘কবি ও কোলাহল’ প্রকাশিত হয়।
বাংলা সাহিত্যে তিনি নিজস্ব কাব্য-ভূবন সৃষ্টি করেছেন।তিনি অত্যন্ত সুচারুভাবে আঞ্চলিক শব্দ প্রয়োগ করার মাধ্যমে সাহিত্যকে নতুন মাত্রা দিয়েছেন।তার সৃষ্টির মৌলিকত্ব ও স্বতন্ত্রতা বিশেষভাবে লক্ষনীয়।


তিনি কলকাতা কেন্দ্রিক বেড়াজাল থেকে বের হয়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব বচনভঙ্গী এনে দিয়েছেন। কবি আল মাহমুদ সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট লেখক শিবনারায়ণ রায় বলেছিলেন,“বাংলা কবিতায় নতুন সম্ভাবনা এনেছেন আল মাহমুদ, পশ্চিম বাংলার কবিরা যা পারেনি তিনি সেই অসাধ্য সাধন করেছেন।”
শেষের দিকে তার লেখায় ধর্মীয় ভাবের প্রতিফলন ঘটে। ফলে একশ্রেণীর প্রগতিশীলদের দ্বারা তিনি সমালোচিত হন।
এ বিষয়ে তিনি একবার বলেছিলেন যে তিনি কখনো মার্কসবাদী ছিলেন না বরং তাঁর হৃদয়ে এক ধরনের সংশয় ছিল।


তিনি বিবিসিকে বলেছিলেন,“আমি যে পরিবারে জন্মেছি তারা সবাই ছিল খুবই ধর্মপ্রবণ লোক। কিভাবে যেন তাদের মধ্যেই যে রয়েছে সত্যিকারের পথের ঠিকানা এটা আমাকে দূর থেকে ইশারায় ডাকতো”
আর হয়তো এই ইশারায় তিনি সাড়া দিয়েই ধর্মের পথে এগুচ্ছিলেন।
তিনি তার লেখায় বিষয়টি আরো সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেন।তিনি বলেন,
“আমি নিসর্গরাজি অর্থাৎ প্রকৃতির মধ্যে এমন একটা সংগুপ্ত প্রেমের মঙ্গলময় ষড়যন্ত্র দেখতে পাই যা আমাকে জগত-রহস্যের কার্যকারণের কথা ভাবায়। এভাবেই আমি ধর্মে এবং ধর্মের সর্বশেষ এবং পূর্ণাঙ্গ বীজমন্ত্র পবিত্র কোরানে এসে উপনীত হয়েছি।” (আল মাহমুদঃ কবিতার জন্য বহুদূর, পৃ. ৩২-৩৩)।


তিনি আরো বলেন,
“…আমি ইসলামকেই আমার ধর্ম, ইহলোকেই আমার ধর্ম, ইহলোক ও পারলৌকিক শান্তি বলে গ্রহণ করেছি। আমি মনে করি একটি পারমাণবিক বিশ্ববিনাশ যদি ঘটেই যায়, আর দৈবক্রমে মানবজাতির যদি কিছু অবশেষও চিহ্নমাত্র অবশিষ্ট থাকে তবে ইসলামই হবে তাদের একমাত্র আচরণীয় ধর্ম। এই ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্যই আমার কবি-স্বভাবকে আমি উৎসর্গ করেছি। … আল্লাহ প্রদত্ত কোন নিয়মনীতিই কেবল মানবজাতিকে শান্তি ও সাম্যের মধ্যে পৃথিবীতে বসবাসের সুযোগ দিতে পারে। আমার ধারণা পবিত্র কোরানেই সেই নীতিমালা সুরক্ষিত হয়েছে। এই হলো আমার বিশ্বাস। আমি এ ধারণারই একজন অতি নগণ্য কবি।” (পূর্বোক্ত, পৃ-৩৩)।


কবি আল মাহমুদ অন্যত্র উল্লেখ করেন,
“আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি জীবনের একটি অলৌকিক কিন্তু প্রাকৃতিক নিয়ম হিসেবে। মার্কসবাদ সম্বন্ধে বীতশ্রদ্ধ হয়ে। (আল মাহমুদ : কবির আত্মবিশ্বাস, পৃ-১১)। 
আল মাহমুদ দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে আরো বলেনঃ “নাস্তিকতার ওপর মানবতা দাঁড়াতে পারে না, পারবে না।” (পৃ-১৮)।


তার জীবনী পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় তিনি গতানুগতিক মুসলমান ছিলেন না।বরং যাচাই বাচাই করে তার মুক্ত ও উদার হৃদয়ে ইসলামকে অধিক যৌক্তিক মনে হয়েছে বিধায় তিনি ইসলামি মতাদর্শ কে আঁকড়ে ধরে ছিলেন। তিনি ইসলামি জীবন দর্শনের পাশাপাশি ইসলামি রাজনীতির দিকেও ঝুঁকে পড়েছিলেন। এজন্য তাঁকে অনেক সমালোচনার স্বীকার হতে হয়েছে। একদল প্রতিক্রিয়াশীল বুদ্ধিজীবী তাকে মৌলবাদী হিসেবে অভিহিত করেন। তাদের জবাবে কবি বলেছিলেন, “দাড়ি রাখলে আর ধর্মভীরু হলেই যদি কেউ মৌলবাদী হয়; তবে অবশ্যই আমি মৌলবাদী!”

প্রিয় ডট কমের এক সাক্ষাকারে কবি তার রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে বলেন, “দেখেন, আমি কোনো দিন এবং অতীতেও জামায়াতপন্থী ছিলাম না। এরাই আমাকে জামায়াত বানিয়েছে। এবং যারা বানিয়েছে, তারা তো দৈত্য বানিয়েছে। এখন দৈত্য তারা সামাল দিতে পারে না। জামাতি কাউকে আমি চিনতামই না। কিন্তু আমার যারা ক্ষতি করতে চেয়েছিল, তারা এটা করেছিল। আর আপনাকে আমার বলতে কোনো দ্বিধা নাই, তারা কিন্তু নাই। আমি কিন্তু আছি। কারণ আমি তো সাহিত্য করি। আমি কবিতা লিখি, গল্প উপন্যাস লিখি, আমাকে তো গুলি করে মারা যায় না। গুলি করে মারলেও আমি সাহিত্যে থাকব। না মারলেও থাকব।”
“…আমি একজন কবি, আমি রাজনৈতিক নেতা নই। আমি সোজা-সরল মানুষ। আপনি যদি আমাকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসেন, আমিও আপনাকে হৃদয় দিয়েই ভালোবাসব। আপনার সঙ্গে আমার বিনিময় হবে।”
সর্বোপরি আল মাহমুদ একজন কবি,বাঙালির জাতির কবি, একজন ভাষা সংগ্রামী কবি, একজন মুক্তিযোদ্ধা কবি। আমাদের উচিত তাঁকে কবি হিসেবেই শ্রদ্ধার আসনে রাখা।

১৯৬৮ সালে ‘লোক লোকান্তর’ ও ‘কালের কলস’ নামে দুটি কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।
এছাড়াও তিনি ‘জয় বাংলা পুরস্কার ’(১৯৭২) ‘হুমায়ুন কবীর স্মৃতি পুরস্কার’(১৯৭২), ‘জীবনানন্দ স্মৃতি পুরস্কার’ (১৯৭২), ‘কাজী মোতাহার হোসেন সাহিত্য পুরস্কার’ (১৯৭৬), ‘কবি জসীম উদ্দিন পুরস্কার’,‘ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার’(১৯৮৬), ‘একুশে পদক’ (১৯৮৬), ‘নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক’(১৯৯০), ‘ভানুসিংহ সম্মাননা পদক’(২০০৪),‘লালন পুরস্কার’(২০১১) ও ‘বাসাসপ কাব্যরত্ন’ (২০১৭) সম্মাননা লাভ করেন। তবে অবাক হওয়ার বিষয় এই যে একজন কালজয়ী স্বাধীনতাকামী কবি হয়েও তিনি ‘স্বাধীনতা পদক’ লাভ করতে পারেননি।এজন্য কবি মনে অনেক দুঃখ। তিনি মনে করেন তার প্রাপ্য সম্মানটুকু তাঁকে দেওয়া হয়নি।


এক সাক্ষাৎকারে কবি অভিমান করে বলেছিলেন, “আমার কাঁধে বিরাট সংসার। আমার রোজগার দিয়ে ছেলেমেয়েদের বড় করতে হয়েছে। ভালো কোনো চাকরি আমাকে কেউ দেয়নি। প্রচুর শ্রম দিতে হয়েছে। নানা ধরনের গদ্য লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু করতে পারলাম না। বন্ধুদের, কবিদের দেওয়া মানসিক চাপ উপেক্ষা করে সমাজে জায়গা করে নিতে হয়েছে আমাকে। কেউ কোনো স্পেস আমাকে দিতে চায়নি। অনেক ধাক্কা খেয়েছি, মুক্তিযুদ্ধ করেছি, জেলও খেটেছি। আমাকে বলো, একজন কবি আর কী কী করতে পারে? আমাকে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়নি। এখন কোনো কিছুতেই আমার আর আফসোস নেই।”


অন্যত্র তিনি বলেন, “তোমরা আমাকে বোঝোনি। আমি বলি না বুঝবে না, বুঝবে। তবে তখন আমি আর থাকবো না। তবে এটা মনে রেখো, বাংলা সাহিত্যে যারা কিছু করতে চাও, আমাকে তোমার পাঠ করতেই হবে। এটা আমার আত্মবিশ্বাস।”

দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন কবি।এতটা সাধারণ জীবন যাপন করতেন তিনি যে শেষ সম্বল বলতে তার তেমন কিছু ছিল না। সুদীর্ঘকাল চক্ষু সমস্যায় ভোগে অবশেষে ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রোজ শুক্রবার রাত ১১টা ৫ মিনিটে রাজধানীর ইবনে সিনা হসপিটালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বাংলার আকাশ থেকে ঝরে গেল একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র।
জীবদ্দশায় তিনি একটি কবিতায় বলেছিলেন,
“কোনো এক ভোর বেলা, রাত্রি শেষে শুভ শুক্রবারে
মৃত্যুর ফেরেস্তা এসে যদি দেয় যাওয়ার তাকিদ;
অপ্রস্তুত এলোমেলো এ গৃহের আলো অন্ধকারে
ভালোমন্দ যা ঘটুক মেনে নেবো এ আমার ঈদ।”
বিশ্বজাহানের স্রষ্টা যেন তার সেই আবেদন মঞ্জুর করে নিয়েছেন।