একনজরে আশুগঞ্জ উপজেলা

৬৮ হাজার অনলাইন গ্রাম: বাংলাদেশের গ্রাম

আশুগঞ্জ উপজেলা
আশুগঞ্জ উপজেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া অন্তর্ভুক্ত একটি প্রশাসনিক এলাকা ও গুরুত্বপূর্ণ শহর। এটি মেঘনা বদ্বীপ। এর ঊর্ধ্বতা প্রায়  ১০ মিটার (৩৬ ফুট)। এই শহরটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য অতি পরিচিত। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আশুগঞ্জ। মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত আশুগঞ্জ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। ঢাকা থেকে ৯০ কিলোমিটার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর থেকে ২৪ কিলোমিটার দুরত্বের মাঝামাঝি স্থানে এই উপজেলা টি অবস্থিত।

 

অবস্থান ও প্রশাসনিক কাঠামো
আশুগঞ্জ উপজেলার আয়তন প্রায় ৬৭.৫৯ বর্গ কিলোমিটার। এটি আয়তনের দিক থেকে চট্টগ্রাম বিভাগ এর সবচেয়ে ছোট উপজেলা। আশুগঞ্জ উপজেলাটি ২৩°৫১´- ২৪°৬´ উত্তর অক্ষাংশ হতে  ৯০°৫৩´- ৯১°১৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। এই উপজেলার দক্ষিণ দিকে রয়েছে নবীনগর উপজেলা, পূর্ব দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা, উত্তর-পূর্ব দিকে সরাইল উপজেলা , উত্তর-পশ্চিম দিকে মেঘনা নদী ও কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলা এবং পশ্চিম দিকে রয়েছে মেঘনা নদী ও নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলা। আশুগঞ্জ উপজেলায় বর্তমানে ৮টি ইউনিয়ন রয়েছে। এই উপজেলার প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম আশুগঞ্জ থানার অন্তর্ভুক্ত।

 

ইউনিয়ন নংইউনিয়নসমূহ আয়তন
(একর)
১নংআশুগঞ্জ সদর২৭৯৯
২নংচর চারতলা১৫৭২
৩নং দূর্গাপুর ৩০৩৮
৪নংতালশহর পশ্চিম২৮১৩
৫নংআড়াইসিধা ১৪৬৯
৬নংশরীফপুর ১৫৯০
৭নংলালপুর ১৮১৮
৮নংতারুয়া১৬০৩

 

উল্লেখযোগ্য স্থান ও স্থাপনা
আশুগঞ্জ সারকারখানা কোম্পানী লিমিটেড,
আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানী লিমিটেড
গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানী লিমিটেড
আশুগঞ্জ খাদ্য গুদাম সাইলো
শহীদ আবদুল হালিম রেলওয়ে সেতু
রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান ২য় রেলওয়ে সেতু
সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক সেতু
ভাস্কর্য জাগ্রত বাংলা’ সারকারখানা গেইট।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ.পাওয়ার স্টেশন গেইট।
সম্মুখ সমর,নাটাল মাঠ,আশুগঞ্জ
বঙ্গবন্ধু মুরাল,কাচারী বিথীকা,আশুগঞ্জ বাজার।
ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের মুরাল,
ফিরোজ মিয়া সরকারি কলেজ, আশুগঞ্জ।
দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার,ফিরোজ মিয়া সরকারি কলেজ, আশুগঞ্জ মেঘনা নদী ও চরসোনারামপুর নান্দনিক দৃশ্য।

 

নামকরণ ও ইতিহাস
এস এম শাহনূর প্রণীত নামকরণের ইতিকথা থেকে জানা যায়,মহাভারত প্রণেতা বেদব্যাসের পদ্ম পুরাণ গ্রন্থে ও জনশ্রুতিতে যে কালিদহ সায়র এর উল্লেখ পাওয়া যায় সেই কালিদহ সায়রের তলদেশ থেকে ধীরে ধীরে স্থল ও জনপদে পরিণত হয় আশুগঞ্জ। ১৮৯৮ খৃস্টাব্দে আশুগঞ্জ বাজারের গোড়াপত্তন হয় বলে জানা যায়। আশুগঞ্জ প্রতিষ্ঠার পূর্বে এই এলাকার লোকজন পার্শ্ববর্তী ভৈরববাজারে ক্রয়-বিক্রয় তথা ব্যবসা করতেন ।

ভৈরববাজারের মালিক ভৈরব বাবু কর্তৃক আরোপিত অত্যধিক করভারে জর্জরিত হয়ে মেঘনার পূর্ব পাড়ের ক্রেতা-বিক্রেতারা সোনারামপুর মাঠের উপর হাট বসায়। তৎকালীন সরাইল পরগনার জমিদার কাশিম বাজারের মহারাজা আশুতোষ নাথ রায় আশাব্যঞ্জক এ সংবাদ জানতে পেরে তিনি উদ্যোক্তাদের ডেকে পাঠান। উদ্যোক্তাগণ মহারাজার ডাকে সাড়া দিয়ে নিজেদের দুর্গতির অবসানের জন্য মহারাজার নামের সাথে মিল রেখে ঐ হাটকে ‘‘আশুগঞ্জ’’ নামকরণ করেন।

 

সময়ের ব্যবধানে ইংরেজরা এখানে অসংখ্য পাটকল স্থাপন করে এবং অচিরেই আশুগঞ্জ দেশ-বিদেশে পরিচিত হয়ে ওঠে । পরবর্তীতে ২০০০ সালের ২৫ জুলাই ৭ টি ইউনিয়ন নিয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা বাস্তবায়িত হয়। ১৯৮৪ সালের ২৮ নভেম্বর আশুগঞ্জ থানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০০০ সালের ২৩ অক্টোবর আশুগঞ্জ থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়।

উল্লেখযোগ্য  ব্যাক্তিবর্গ
আবদুল কাদির >>> একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্ত, সাহিত্য সমালোচক এবং ছান্দসিক।
ফরিদুল হুদা >>> রাজনীতিবিদ এবং চিকিৎসক।
মাইহবুবুল হুদা ভূইয়া (১৯৪৯-১৯৯০) >>> সাবেক পৌর মেয়র
গোলাম মোস্তফা >>> সাবেক অতি:আইজিপি

মুক্তিযুদ্ধে আশুগঞ্জ
১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধের সময় আশুগঞ্জ উপজেলায় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন, শাহজাহান, ল্যান্স নায়েক আবদুল  হাই, সুবেদার সিরাজুল ইসলাম এবং সিপাহী আব্দুর রহমান শহীদ হন। তৎকালে পাকবাহিনীরা সন্দেহভাজন লোকদের ধরে এনে সাইলো বধ্যভূমিতে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করত। পাকবাহিনী ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর সকালে আশুগঞ্জ-ভৈরব রেলসেতুর আশুগঞ্জের দিকের একাংশ ডিনামাইট দিয়ে ধ্বংস করে। সেতু ধ্বংস করার পর পাকবাহিনী আশুগঞ্জ ছেড়ে চলে গেছে এমন ধারণা থেকেই যৌথবাহিনী আশুগঞ্জ দখল করতে অগ্রসর হয়। আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রায় ৫০ গজের মধ্যে আসামাত্র পাকবাহিনী অগ্রসরমান ১৮ রাজপুত বাহিনীর উপর প্রচন্ড হামলা চালায়। হামলায় মিত্রবাহিনীর ৪ জন সেনা অফিসারসহ মোট ৭০ জন শহীদ হন। ১০ ডিসেম্বর রাতে পাকবাহিনী আশুগঞ্জ ত্যাগ করে।