একনজরে আখাউড়া উপজেলা

আখাউড়া উপজেলা টি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্ভুক্ত একটি অন্যতম উপজেলা। এই উপজেলার আয়তন প্রায় ৯৯.২৮ বর্গ কিলোমিটার। এই উপজেলা টি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার দক্ষিণ পূর্ব দিকে অবস্থিত। এই উপজেলার উত্তর দিকে রয়েছে বিজয়নগর উপজেলা, উত্তর-পশ্চিম দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা, পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে কসবা উপজেলা এবং পূর্ব দিকে রয়েছে ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশ।
আখাউড়া উপজেলার মোট জনসংখ্যা প্রায় ১,৪৫,২১৫ জন। এর মধ্যে পৌরসভার ৩৬,২৬২ জন এবং ইউনিয়ন ভিত্তিক লোকসংখ্যা ১,০৮,৯৫৩ জন। মোট পরিবার ২৭,৮৩১টি। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রায় ১৪৮১ জন।
আখাউড়া উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। উপজেলার প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম আখাউড়া থানার অন্তর্ভুক্ত।

আখাউড়া পৌরসভা
আখাউড়া উপজেলার আখাউড়া উত্তর ও আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন এর কিছু এলাকা নিয়ে ১৯৯৯ সালের ১২ ডিসেম্বর আখাউড়া পৌরসভা টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই পৌরসভার আয়তন প্রায় ৮.৩৩ বর্গ কিলোমিটার। মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩৬,২৬২ জন এবং পরিবার সংখ্যা ৭,৪৫৩ টি। আখাউড়া উপজেলার উত্তর দিকে আখাউড়া পৌরসভা টি অবস্থিত। এই পৌরসভার উত্তর দিকে রয়েছে আখাউড়া উত্তর ইউনিয়ন, পূর্ব দিকে আখাউড়া উত্তর ও আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন, দক্ষিণ দিকে আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন এবং পশ্চিম দিকে রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়ন।  
আখাউড়া পৌরসভা একটি ‘ক’ শ্রেণীর পৌরসভা। এই পৌরসভার প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম আখাউড়া থানার অন্তর্ভুক্ত । এটি জাতীয় সংসদ ২৪৬ নং নির্বাচনী এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৪ আসনের অংশ বিশেষ। এই পৌরসভায় মোট ৯টি ওয়ার্ড রয়েছে ।

ওয়ার্ডভিত্তিক এলাকাসমূহ হল
১নং ওয়ার্ড >>দুর্গাপুর
২নং ওয়ার্ড >>টানপাড়া, উত্তর খড়মপুর, টেংরাপাড়া
৩নং ওয়ার্ড >>আখাউড়া উত্তর-পূর্ব কর্নার, দক্ষিণ খড়মপুর, রেলওয়ে কুমারপাড়া কলোনী, রেলওয়ে পশ্চিম কলোনী, রেলওয়ে পূর্ব কলোনী
৪নং ওয়ার্ড >>উত্তর আখাউড়া, মসজিদপাড়া, খালাজুড়া (আংশিক)
৫নং ওয়ার্ড >>বড় বাজার, দক্ষিণ আখাউড়া, পশ্চিম রাধানগর, সড়ক বাজার, মালদারপাড়া
৬নং ওয়ার্ড >>নারায়ণপুর, পূর্ব রাধানগর, কলেজপাড়া, খালাজুড়া (আংশিক)
৭নং ওয়ার্ড >>চন্দনসার, দেবগ্রাম শান্তিনগর, দক্ষিণ রাধানগর, সুবার পুকুর পাড়, উত্তর দেবগ্রাম, লালবাজার
৮নং ওয়ার্ড >>দক্ষিণ দেবগ্রাম
৯নং ওয়ার্ড >>পূর্ব দেবগ্রাম, তারাগন

আখাউড়া উপজেলায় মোট ৫ টি ইউনিয়ন রয়েছে।

ইউনিয়ন নং ইউনিয়ন নাম আয়তন
(একক)
১ নংমনিয়ন্দ৫৫৮৯
২ নংধরখাড় ৮০৮৭
৩ নংমোগড়া৪৫৭৮
৪ নংআখাউড়া উত্তর ১৪১৮
৫ নংআখাউড়া দক্ষিণ৩৪৩৯

আখাউড়া জেলার ইতিহাস এবং নামকরণ
আখাউড়া উপজেলা টি তৎকালের হরিকেল নামক জনপদের একটি অংশ ছিল। পর্যায়ক্রমে অঞ্চলটি ত্রিপুরা রাজ্যের জমিদার মহারাজা বীর বিক্রম রাধা কিশোর মানিক্য বাহাদুরের অংশে পরিণত পরিণত হয়৷ এই জমিদারের চাকলা রৌশনবাদ এষ্টেটের মোগড়া রাজ কাচারী এবং আখাউড়াস্থ তহশীল কাচারী ছিল বর্তমান আখাউড়া সদর হতে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে। এই কাচারী দুটির মাধ্যমে এই অঞ্চলের জমিদারির যাবতীয় খাজনাদি আদায় সহ জমিদারি ব্যাবস্থার কার্যক্রম পরিচালিত হতো। জমিদার বীর বিক্রমের জমিদারির দ্বিতীয় রাজধানী ছিল কুমিল্লাতে। কুমিল্লা রাজবাড়িতে যাতায়াতের জন্যে আখাউড়া – আগরতলা সড়ক ব্যাবহার করতেন। তাছাড়া আসাম বেঙ্গল রেলপথ চলাচলের জন্য জমিদার বিক্রম আখাউড়া কাচারিতে অবস্থান করতেন। তিনি এই অঞ্চলে রাধানাগরে রাধামাধবধারের আখড়া, দূর্গাপুরে দূর্গদেবীর আখড়া, মোগড়া হাওর নদীর আখড়া, মনিয়ন্দ আখাড়া ইত্যাদি অনেক আখড়া নিজ খরচে নির্মাণ করেন। ঐ সময় আখাউড়া উপজেলায় এতো বেশি আখড়ার কারণে কালক্রমে আখড়া থেকে আখাউড়া নামে পরিচিত পাই।

মুক্তিযুদ্ধে আখাউড়া উপজেলার অবদান
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আখাউড়া উপজেলা ২ নং সেক্টরের অধীনে ছিল। এই সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ বর্ণক্ষেত্র গুলো ছিল আখাউড়া, দেবনগর, তারাগণ চেকপোস্ট সড়ক এবং দরুইন। দরুইন ১৯৭১ সালে ১৮ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে মুখোমুখি বন্দুক যুদ্ধে শহীদ হন সিপাহি বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল। পরে এই দরুইন গ্রামেই সিপাহি বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল কে সমাধীত করা হয়। তাছাড়া মোগড়া গঙ্গাসাগর দীঘির পশ্চিম পাড়ে এবং ত্রিপুরা সীমানাস্থ সেনারবাদী অনেক গণ করব ররেছে।

এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ উভয়ের জন্য একটি ঐতিহাসিক শহর।

উল্লেখযোগ্য স্থান এবং স্থাপনা
আখাউড়া উপজেলায় রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম আখাউড়া স্থল বন্দর
হরমপুর শহীদ কেল্লা শাহের মাজার
মোগ্রাড়ার মাধখোলন
মহারাজার কাচারি
ছতুরা শরীফ বড় মসজিদ
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামালের কবর

আখাউড়া উপজেলার গুরুত্ব
বর্তমান আখাউড়া বাংলাদেশের সর্ব পূর্ব দিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা সীমান্তবর্তী স্থানে অবস্থিত ছিল। একসাথে তৎকালের পূর্ব বঙ্গের প্রধান প্রবেশদ্বার । ব্রিটিশ আমলে আখাউড়া থেকে প্রচুর পরিমাণের পাট বিলেতের শিল্পনগরীতে রপ্তানি হতো। তাই ব্রিটিশ আমল থেকেই আখাউড়া রেলস্টেশন টি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তখন এখানে একটি পুলিশ ফাঁড়ির মাধ্যমে সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো। ১৯৭৬ সালে ২০ জুন মনিয়ন্দ, ধরখাড়, মোগড়া, আখাউড়া উত্তর এবং আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন নিয়ে আখাউড়া থানা প্রতিষ্ঠিত হয়, ১৯৮৩ সালে ১৪ সেপ্টেম্বর একটি উপজেলায় অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ১৯৯৯ সালে আখাউড়া পৌরসভায় অন্তর্ভুক্ত হয়।