ইব্রাহিমপুর গ্রাম ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি আমাদের এই ইব্রাহিমপুর , মহান আল্লাহপাক যেন তাঁর সব স্বাদ এক করে আমাদের এই গ্রামকে সাজিয়েছেন এক মোহনীয় সাজে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার মধ্যাংশে ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন তথা ইব্রাহিমপুর গ্রামের অবস্থান।
ইব্রাহিমপুর গ্রামের উত্তরে নবীনগর পৌরসভা, পূর্বে বিটঘর, দক্ষিণে করইবাড়ি-জিনোদপুর, পশ্চিমে রসুল্লাবাদ গ্রাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার নয়নাভিরাম আমাদের ইব্রাহিমপুর গ্রামসহ আরো ০৪ টি গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছে ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন।
এই গ্রামের আয়তন প্রায় ১০ বর্গ কিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যা ১৩৫৯৭জন, এর মধ্যে ইব্রাহিমপুর গ্রামের লোকসংখ্যা ৯২৬৩ জন। ইব্রাহিমপুরে মোট পরিবারের সংখ্যা ১৯০৭ টি। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১০৫৯ জন। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এ গ্রামের সাক্ষরতার হার ৫১.৭%।
এতে পাঁকা রাস্তা প্রায় ৩ কিলোমিটার, কাঁচা রাস্তা প্রায় ৯ কিলোমিটার, এই গ্রামে ২৫টি ব্রীজ এবং ১৫ টির মত কালভার্ট রয়েছে। এখানে ১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি কিন্ডারগার্টেন, ০১ টি এতিমখানা ও ১টি মাদ্রাসা রয়েছে। এই গ্রামে কৃষি জমির পরিমাণ প্রায় ৭০২ হেক্টর, এক ফসলি জমির পরিমাণ প্রায় ১৭০ হেক্টর, দুই ফসলি জমির পরিমাণ প্রায় ৩৭০ হেক্টর, তিন ফসলি জমি পরিমাণ প্রায় ৪৫ হেক্টর। এই গ্রামের প্রধান ফসল : ধান, গম, আলু, মরিচ, সবজি ।
এ গ্রামে গভীর নলকূপের সংখ্যা প্রায় ৭৫টি, অগভীর নলকূপ প্রায় ৮৫০ টি, দিঘীর সংখ্যা ৩টি। আর্সেনিক মাত্রা ০.৫, একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র এবং ১টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস রয়েছে। স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ৯৬% , মসজিদ ২৩টি, ৩ টি মন্দির,২ টি শ্মশান, ব্যাংক এশিয়া ও ইসলামী ব্যাংক এর নামে ২টি এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা, একটি কেন্দ্রীয়সহ মোট ঈদগাহ ৩টি, একাধিক পারিবারিক কবরস্থান ও একটি কেন্দ্রীয় কবরস্থান এবং ১ টি ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র রয়েছে।
গ্রামটিতে ২টি হাট-বাজার, ২ টি স’মিল, ৪টি সংগঠন রয়েছে। ইব্রাহিমপুর সুফী আজমত উল্লাহ (রঃ) এতিমখানা ও মাদ্রাসাটি দানবীর পীরে কামেল হযরত মাওলানা শাহ সুফি সৈয়দ দায়েম উল্লাহ (রঃ) স্থাপন করেন। উনার প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম বিভাগের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাদ্রাসার নজির স্থাপন করে চলছে। অত্র প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসেই উনার মাজার শরীফ রয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য ভক্ত ও শিষ্য এই মহান দানবীর পীরে কামেল সুফি সাধকের মাজার জিয়ারত করতে আসেন। ইব্রাহিমপুর গ্রামের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এ গ্রামের প্রায় সব বাড়িতেই বিভিন্ন জাতের বাঁশ গাছ ( বাঁশ একধরনের ঘাস) রয়েছে। তাই এ গ্রামের উপজেলার সবচেয়ে বড় বাঁশের বাজার রয়েছে।
আমাদের এই গ্রামে শত শত বছরের ঐতিহ্য ধারণকারী কুমার পাড়া রয়েছে। যারা আজও তাদের পূর্ব পুরুষের কর্মযজ্ঞ লালন করে আসছে। এ গ্রামের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া যুগিধারা খাল যা (তিতাস নদীর অংশ)এই গ্রামের অনেক মানুষের জীবিকা নির্বাহের কারণ।মহান মুক্তিযুদ্ধে এ গ্রামের মানুষের বিশেষ অবদান রয়েছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবে এ গ্রামে অনেক নিদর্শন রয়েছে। প্রাচীন জমিদার বাড়ি (রায় বাড়ি) এখনো কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে।
এই গ্রামে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন রয়েছে। হিন্দু – মুসলমানের সহাবস্থান এ গ্রামে অনুসরনযোগ্য। আমাদের গ্রামটি উপজেলায় আদর্শ একটি গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এই গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা, উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারী, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, এডভোকেট, রাজনীতিবিদ, রেমিটেন্সযোদ্ধাসহ অনেক সূর্য সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছেন, যাঁদের অনেকেই আজ আমাদের মাঝে নেই।
ইব্রাহিমপুর গ্রামে যেসব কৃতিসন্তানেরা জীবিত আছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন:
- ১.মোঃ শরিফুল ইসলাম ( জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট),জয়পুরহাট।
- ২.গৌরি সংকর ভট্টাচার্য, উপ-সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
- ৩.ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রউফ ( চীফ জেনারেল ম্যানেজার ),বিটিসিএল।
- ৪. কর্ণেল মোঃ নুরুল হুদা, অবসরপ্রাপ্ত।
- ৫. লেফটেন্যান্ট কর্নেল জি আর জাহাঙ্গীর ,এসিই (অব.), প্রিন্সিপাল, চেতনা মডেল একাডেমি।
- ৬. ড.এএসএম শামসুর রউফ সুমন,(PhD ইন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ) কর্মরত ইন্টেল কর্পোরেশন, USA.
- ৭. সমীর ঘোষ, চীফ ইন্সট্রাকটর, কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, গাইবান্ধা।
- ৮. মোঃ আমিরুল হাসান সরকার কবির, চীফ অফিসার ইন মার্চেন্ট নেভী।
- ৯. আবদুল ওয়াদুদ জুয়েল, বিভাগীয় প্রধান (কম্পিউটার), কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।
- ১০. সামসুল আলম (রাজনীতিবিদ , সিটি কাউন্সিলর অব kerava , ফিনল্যান্ড)।
- ১১. অধ্যাপক দুলাল ঘোষ, চরফ্যাশন সরকারি কলেজ, ভোলা।
- ১২. মোঃ রাকিবুল আলম সোহাগ, সহকারী পরিচালক, BSTI.
- ১৩. ডা. আবু কাউছার সরকার এমবিবিএস ( SSMC) , কনসালট্যান্ট সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট।
- ১৪. ডা. মো. কামরুজ্জামান, বিডিএস (ঢাকা), বিসিএস (স্বাস্থ্য)।
- ১৫. ডা. খাইরুল আলম খন্দকার বাবু , এমবিবিএস, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, পিজিটি ফিজিক্যাল মেডিসিন।
- ১৬. সহযোগী অধ্যাপক ড. বুলবুল খন্দকার , ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন।
- ১৭. সহকারী অধ্যাপক ড. তুহিন খন্দকার, উলাঙ্গা বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান।
- ১৮.সহকারী অধ্যাপক গোলাম মাওলা খন্দকার, ভৈরব কলেজ।
- ১৯. সহকারী অধ্যাপক বিমল কুমার সাহা, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ।
- ২০. সহকারী অধ্যাপক আবু কাউছার স্বপন, অরুয়াইল আব্দুস সাত্তার ডিগ্রী কলেজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
- ২১. এডভোকেট বিনয় চক্রবর্তী (সাবেক সভাপতি), নবীনগর আইনজীবী সমিতি।
- ২২. আবু সাঈদ (উপ পরিচালক), ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট পাসপোর্ট অফিস।
- ২৩. এডভোকেট মোঃ কামাল উদ্দিন ( সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান)।
- ২৪. আলহাজ্ব তোফাজ্জল হোসেন টেনু, (সভাপতি) ইব্রাহিমপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর, মিরপুর,ঢাকা।
- ২৫. মোঃ ইয়ার হোসেন ( সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা)
- ২৬. মোঃ মাজহারুল হক খোকন (সভাপতি), ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ।
- ২৭. নোমান চৌধুরী ( সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান)
- ২৮. মোঃ জিয়াউল হক মুকুল, (বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ) সাবেক সভাপতি, ইব্রাহিমপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়।
- ২৯. মোহাম্মদ আলী বশির (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) টিভি নাটক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘টেলিহোম’।
- ৩০. সামসুল আলম সরকার ( ডেপুটি কমান্ডার), বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, নবীনগর উপজেলা।
- ৩১. হাজী আব্দুল মালেক (সভাপতি), কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ও কবরস্থান কমিটি।(বি.দ্র. জৈষ্ঠ্যতা ক্রমানুসারে নয় )এছাড়াও আরো অনেক গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ অত্র গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন যারা দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থানে নিজের মেধা, পরিশ্রম ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিজের প্রতিভার প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছেন।
স্বত্ব: সংরক্ষিত মোঃ তাজুল ইসলাম সুবায়েল ,বিএসসি (অনার্স),এমএসসি ,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়; বিএড। ইব্রাহিমপুর, নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।