অলীপুর গ্রাম উত্তর বড়দল ইউনিয়ন

৬৮ হাজার অনলাইন গ্রাম: বাংলাদেশের গ্রাম

অলীপুর গ্রাম উত্তর বড়দল ইউনিয়ন

অলীপুর (বাগগাঁও) গ্রামটি সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপেজলার ৪নং উত্তর বড়দল ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ৩নং ওয়ার্ডের একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। গ্রামটি সুনামগঞ্জ জেলা সদর থেকে ৩৫ কি.মি. পশ্চিমে এবং তাহিরপুর উপজেলা থেকে ১১ কি.মি. উত্তরে অবস্থিত। এটির অবস্থান- পূর্বে বারহাল, পশ্চিমে ও উত্তরে জাদুকাটা নদীর শাখা মাহারাম নদী এবং দক্ষিণে জালালপুর অবস্থিত।

এই গ্রামের নামকরণের ইতিহাস জানা নেই। তবে গ্রামটি প্রাচীন লাউড় রাজ্যের অধিভুক্ত একটি পুরনো গ্রাম। লাউড় রাজ্যটি প্রাচীনকালে রাজা ভগদত্তের পৌরাণিক কামরূপ রাজ্যের উপ-রাজধানী ছিল। ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ এটি কামরূপ রাজ্য থেকে পৃথক হয়ে শ্রীহট্টের (বর্তমান সিলেট) লাউড় রাজ্যে রূপধারণ করে।

গ্রামটি ১৯৬০-১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তীতে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন বিভক্ত হয়ে নতুন প্রতিষ্ঠিত ইউনিয়ন ৪নং উত্তর বড়দল-এর অন্তর্ভুক্ত হয়। গ্রামটিতে ১০০% মুসলমানদের বসবাস। তবে এই গ্রামে স্থানীয় লোকজন ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগ থেকে আসা লোকজনের স্থায়ী বসতি হয়েছে।

সুজলা-সুফলা, শষ্য-শ্যামলা ও সবুজের সমারোহে ঘেরা এই গ্রামটি। গ্রামটির দারিদ্র্যতার হার বেশি। গ্রামটির শিক্ষিতের হার ১৭%। গ্রামটি শিক্ষা-দীক্ষার দিক দিয়ে অন্যান্য গ্রাম থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তবে এখন দৈনন্দিন গ্রামটিতে শিক্ষিতের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই গ্রামের অধিকাংশ লোকের পেশা কৃষিকাজ। গ্রামটিতে “অলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়” নামে একটি বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে আজ অবধি দ্বায়িত্ব পালন করে আসছেন- জনাব সৈয়দ আব্দুল ওয়াদুদ। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত করা সহ গ্রামের শিক্ষার হার বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় উনার অবদান অপরিসীম। গত ১০ বছর যাবত বিদ্যালয়টির পাশের হার গড়ে প্রায় ৯৮%। গ্রামটিতে দু’টি মসজিদ রয়েছে তন্মধ্যে একটি পুরনো (১৯৯০ খ্রিঃ প্রতিষ্ঠিত) “অলীপুর জামে মসজিদ” নামে খ্যাত। আরেকটি মসজিদ নতুন তথা (২০১৩ খ্রিঃ প্রতিষ্ঠিত) “অলীপুর উত্তর পাড়া জামে মসজিদ” নামে।

এই গ্রামটিতে বাংলােদেশের মূল ছয় ঋতুর প্রায় সবগুলোই দেখা যায় এবং উপলব্ধি করা যায়। অলীপুরদীঘলবাকজালালপুর এই তিনটি গ্রামের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত (২০১৯ খ্রিঃ প্রতিষ্ঠিত) বাংলাবাজার নামে এই গ্রামের একটি বাজার আছে। বাংলাবাজারে প্রায় সব ধরনের প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যায়। এই গ্রামের দর্শনীয় স্থান বলতে গ্রামের উত্তর ও পশ্চিম দিকে নদীর পাড় সংলগ্ন খেলার মাঠ ও বাংলাবাজার বেশ পরিচিত।

আঁকাবাঁকা কাঁচা রাস্তায় মোড়ানো এই গ্রামটির অভ্যন্তরে একটি বড় কাঁচা রাস্তা বৃহৎ দু’টি পাড়া’কে সংযুক্ত করেছে। এই গ্রামের অভ্যন্তরীণ রাস্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ পার্শ্ববর্তী বৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাদাঘাট বাজারে যাতায়াত করে ও “বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়” সহ “বাদাঘাট সরকারি ডিগ্রী কলেজ” এর অসংখ্য শিক্ষার্থী যাতায়াত করে।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গঃ

🔹মরহুম সৈয়দ আব্দুর রহিম– তিনি প্রাক্তন ও গ্রামের প্রথম মেম্বার ছিলেন।
🔸মরহুম মোঃ আরিজ আলী– গ্রামের একজন উল্লেখযোগ্য লোক ছিলেন।
🔹সৈয়দ আব্দুল করিম– বর্তমানে গ্রামের সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি।
🔸সৈয়দ আব্দুল মোতালিব– প্রাক্তন মেম্বার ও প্রবীণ ব্যক্তি।
🔹সৈয়দ আব্দুল ওয়াদুদ– তিনি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সর্বপ্রথম মাধ্যমিক পাশ করা ব্যক্তি।
🔸মোঃ মুসলেম উদ্দিন– একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি।

🔹সৈয়দ শফিকুল ইসলাম- যুগ্ম আহবায়ক যুবদল, সুনামগঞ্জ জেলা।

সর্বোপরি নবীন প্রবীণদের সমন্বয়ে গড়া অলীপুর গ্রামটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর।